মায়ানমার থেকে ফিরলেন আরো ১২৫ বাংলাদেশি
2015.08.25
দেশে ফিরেছেন মিয়ানমারের জলসীমা থেকে উদ্ধার হওয়া ২৭ কিশোরসহ অভিবাসন প্রত্যাশী আরো ১২৫ বাংলাদেশি। মঙ্গলবার বান্দরবানের ঘুমধুম জিরো পয়েন্ট দিয়ে দুপুর দেড়টার দিকে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে দেশটিতে আরো ১০০ জনের মতো বাংলাদেশি আছে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
১৪ জেলার বাসিন্দা
বিজিবি জানায়, ফিরে আসা অভিবাসীদের ১২৫ জনের বাড়ি ১৪ জেলায়। কক্সবাজারের ৮৫ জন, মাদারীপুরের ৭ জন, ফেনীর ৩ জন, বান্দরবানের ৬ জন, ঢাকার ২স জন, গাজীপুরের ১ জন, মেহেরপুরের ৪ জন, রাজবাড়ীর ২ জন, টাঙ্গাইলের ৪ জন, গোপালগঞ্জের ১ জন, ভোলার ২ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৫ জন, কিশোরগঞ্জের ২ জন এবং চাদঁপুরের ১ জন রয়েছেন।
পঞ্চমবার
এই নিয়ে পঞ্চম দফায় সাগর দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে উদ্ধার হওয়াদের মায়ানমার থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হল। কক্সবাজার বিজিবি’র সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আনিসুর রহমান বেনারকে বলেন, “এর আগে চার দফায় বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পঞ্চমবারে এসেছেন ১২৫ জন। মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা তাদেরকে শনাক্ত করার পরেই তাদের দেশে আনা হয়েছে। এছাড়া দেশটিতে আরো প্রায় ১০০ জনের মতো রয়েছেন। তাদেরকেও শনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।”
আগে পতাকা বৈঠক
এসব বাংলাদেশিদের ফেরত আনার আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম জিরো পয়েন্টে মিয়ানমারের ভেতরে তুমব্রু টাউন প্রশাসনিক অফিসে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন উভয় দেশের প্রতিনিধিরা। কক্সবাজার বিজিবি-১৭ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নেওয়া ২০ সদস্যের প্রতিনিধি
দল দুপুর দেড়টায় ঘুমধুম মৈত্রী সেতু পার হয়ে তাদেরকে নিয়ে দেশে ফেরেন। এর আগে গত তিন মাস তারা মায়ানমারের ক্যাম্পে বন্দি অবস্থায় ছিলেন। সেখান থেকে একজন পালিয়ে গেছেন।
‘জীবন ফিরে পেয়েছেন তারা’
ফেরত আনার পর এসব বাংলাদেশিদেরকে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। এসময় মেডিকেল টিম, আইওএমর প্রতিনিধিদল ও রেড ক্রিসেন্টের কক্সবাজার ইউনিটের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজারের স্থানীয় সাংবাদিক তুহিন তুষার বেনারকে বলেন, “দেশের মাঠিতে পা রাখার পর ফেরত আসা লোকগুলোর চোখে মুখে অন্যরকম এক ধরনের প্রশান্তি দেখা যাচ্ছিল। যেন দুর্বিষহ এক যাত্রা শেষে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন। তবে পুলিশ প্রহরার কারণে এসময় তাদের কারো সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।”
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফাইল আহমদ জানান, ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আইওএম এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মাধ্যমে তাদেরকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
অপ্রাপ্তবয়স্ক ২৭ জন
বিজিবি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ফেরত আনাদের মধ্যে ২৭ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। তবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার আসিফ মুনীর জানিয়েছেন, “এদের মধ্যে ২০-২৫ জনের মত অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু-কিশোর রয়েছে। তাদের দেশের সীমান্তে প্রবেশের পর থেকে বাড়ি পৌঁছানো পর্যন্ত খাদ্য, চিকিৎসা ও যাতায়াত সুবিধাসহ সব ধরনের মানবিক সহায়তা দেবে আইওএম।”
তবে কক্সবাজার রেড ক্রিসেন্টের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুরুল আবছার বলেন, “রেড ক্রিসেন্ট এবারও অপ্রাপ্তবয়স্কদের নিজেদের জিম্মায় নিতে আদালতে আবেদন করবে। আদালতের নির্দেশনা পেলে রেড ক্রিসেন্টই তাদের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করবে।”
এর আগে ফিরেছেন পাঁচশ একজন
এর আগে গত ৮ ও ১৯ জুন, ২২ জুলাই এবং ১০ আগস্ট ৪ দফায় শনাক্ত হওয়া ৫০১ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত আনা হয়েছিল। এদের মধ্যে গত ২১ মে ২০৮ জন ও ২৯ মে ৭২৭ জনকে মিয়ানমারের জলসীমা থেকে উদ্ধার করেছিল মায়ানমারের নৌবাহিনী। এরপর থেকে বাংলাদেশি হিসেবে দাবি করা তালিকা নিয়ে উভয় দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ওই তালিকায় শনাক্ত হওয়া বাংলাদেশিদের পর্যায়ক্রমে দেশে ফেরত আনা হচ্ছে।
‘ফেরত আনাই শেষ কথা নয়’
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন উপকূলে উদ্ধার হওয়া এসব অভিবাসন প্রার্থীদের ফেরত আনার মাধ্যমে রাষ্ট্রের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। সরকারের আরো দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন।
অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান দৃষ্টি রিসার্চ সেন্টারের গবেষক আবদুল হান্নান বিশ্বাস বেনারকে বলেন, “যতদিন এদেশের শ্রমিকদের বিদেশ যাওয়ার জন্য বৈধ চ্যানেল তৈরি না হবে, ততদিন কেউ না কেউ আবারও অবৈধ পথ বেছে নেবে। সরকারিভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে শ্রমিক পাঠানোর চুক্তি করতে যাচ্ছে সরকার, বিষয়টি ইতিবাচক”।