সিঙ্গাপুরে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে ২৭ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার, দেশে আটক ১৪
2016.01.20
গত বছর ২৭ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের তথ্য প্রকাশ করেছে সিঙ্গাপুর সরকার, যাদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ১৬ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বরের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তারা নিজের দেশের সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদের পরিকল্পনায় করেছিলেন বলে জানিয়েছে সিঙ্গাপুর।
গতকাল ২০ জানুয়ারি দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য প্রকাশ করার পর বিষয়টি বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর ছাড়াও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের অন্যতম খবর হিসাবে প্রচার পায়।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ২৭ জনের মধ্যে ইতিমধ্যে ২৬ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অপরজন সিঙ্গাপুরের কারাগারে রয়েছেন। আটক বাংলাদেশিদের সবাই সিঙ্গাপুরে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
সিঙ্গাপুর কতৃপক্ষের দাবি, বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকজনের কাছে তারা অর্থ পাঠিয়েছেন বলে দেশটির পুলিশ তথ্য পেয়েছে।
সিঙ্গাপুরের স্ট্রেইট টাইমস সংবাদপত্রের খবরে আটক ব্যক্তিদের আল কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর প্রতি অনুগত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির একটি অনুলিপি ওই সংবাদপত্র প্রকাশ করেছে।
সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ বলছে, কীভাবে ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে নিঃশব্দে হত্যা করতে হয় তার নির্দেশনা দিয়ে হাতে আঁকা ছবিও তাদের কাছে পাওয়া গেছে। এসব ছবি ও ভিডিও সিঙ্গাপুরের গণমাধ্যমগুলো ২০ জানুয়ারি প্রকাশ করে।
দেশটির মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, সপ্তাহে তারা একবার বৈঠকে মিলিত হতেন । এসময় তাঁরা সশস্ত্র জিহাদ নিয়ে আলোচনা করতেন। দেশে ফিরে কীভাবে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করা যায়, তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হত।
ওই ২৬ জন ‘জঙ্গি মতাদর্শে বিশ্বাসী একটি গোপন পাঠচক্রের’ সদস্য ছিলেন। আল কায়েদা নেতা আনোয়ার আল-আওলাকির মতো ব্যক্তিদের প্রচার করা মতাদর্শের ‘চর্চা’ করতেন তারা।
সিঙ্গাপুরে হামলার পরিকল্পনা ছিল না
সিঙ্গাপুরের সরকার জানায়, সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার দায়ে তারা ২৬ জন বাংলাদেশিকে বহিষ্কার করে দেশে ফেরত পাঠালেও হামলার লক্ষ্য সিঙ্গাপুর ছিল না, অন্য কোন রাষ্ট্রে হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল।
“তদন্তে দেখা গেছে, এই গ্রুপের কয়েকজন সদস্য বিদেশে গিয়ে সহিংসতা চালানোর পরিকল্পনা করছিলেন। সিঙ্গাপুরে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর কোনো পরিকল্পনা তাদের ছিল না,” বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সবার কাজের অনুমতি বাতিল করে ২৬ জনকে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ফেরত পাঠানো হয় বাংলাদেশে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সন্ত্রাসের সমর্থনে যেকোনো ধ্বংসাত্মক কাজের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর সরকার খুব তৎপর। সিঙ্গাপুরে অন্য দেশের নাগরিকেরা হচ্ছেন অতিথি সিঙ্গাপুরে থেকে নিজের দেশের কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করা তাঁদের উচিত নয়।
সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে গোপনে তারা জিহাদি উপকরণ সরবরাহ করতো এবং সাপ্তাহিক বৈঠকে মুসলমানদের নিয়ে জিহাদ চালানোর ব্যাপারে কথা বলতো।
তাদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সিঙ্গাপুর সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করা হয় বলে চ্যানেল নিউজ এশিয়ার এক খবরে বলা হয়।
একজন সিঙ্গাপুরের কারাগারে
জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি আন্দাজ করতে পেরে এক ব্যক্তি সিঙ্গাপুর থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাই তাঁকে সাজা দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছে। তিনি ওই চক্রের সদস্য না হলেও জঙ্গিবাদে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিলেন।
তার কাছ থেকে জিহাদি বই ও বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করার কথা জানিয়েছে দেশটির পুলিশ। সাজার মেয়াদ শেষ হলে তাঁকেও বাংলাদেশে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে বিবৃতিতে ।
বাংলাদেশের জেলে ১৪
বাংলাদেশের সরকার বলছে, সিঙ্গাপুর থেকে সন্ত্রাসের দায়ে বহিষ্কৃত ২৬ জনের মধ্যে ১৭ জন এখন পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। তবে পুলিশ বলছে এই সংখ্যা ১৪।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল বিবিসিকে জানান, এদের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর সরকারের আনা অভিযোগ পুলিশ এখন তদন্ত করে দেখছে।
বাদবাকি নয় জনের ভাগ্য সম্পর্কে এখনই কোন তথ্য জানা সম্ভব হয়নি।
সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মাহবুব উজ-জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন যে বহিষ্কৃতরা বেশ কিছু দিন ধরে সিঙ্গাপুরের নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারিতে ছিলেন। এদের আটক করার পর বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রশ্নে সিঙ্গাপুর সরকার তাদের সাথে যোগাযোগ করে।
দেশে ফেরার পর এদের একাংশকে সন্ত্রাস দমন আইনে গ্রেফতার করা হয় বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশের পুলিশ অবশ্য বলছে, ১৪ জন এখন জেলে আছে । তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরের মোস্তফা নামের একটি মার্কেটের কাছে এক মসজিদে প্রতি সপ্তাহে একদিন তারা একত্রিত হতেন এবং বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে আলোচনা করতেন।
সেখানে জিহাদি বক্তব্য প্রচার করে এবং ভিডিও দেখিয়ে অন্যদের জঙ্গি কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করতেন তারা।
এদিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের কারাগারে পাঠানোর জন্য আদালতে তোলা হলে গত ২৭ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো বিষয়টি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে আসে। সিঙ্গাপুর সরকারের বিবৃতি পাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর কারণ স্পষ্ট ছিল না।
“ফেরত আসাদের মধ্যে ১৪ জন কারাগারে আছে। তাদের বিষয়ে আরও তদন্ত চলছে। বাকিরা নজরদারির মধ্যে আছে,” বেনারকে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) মারুফ হোসেন সরদার।