আবারও জঙ্গি আটক, পুরোপুরি নির্মূল সম্ভব নয় বলছে পুলিশ

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.07.28
BD-militants জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) ভারপ্রাপ্ত আমিরসহ আট জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ২৮ জুলাই,২০১৫
বেনার নিউজ

রাজধানী ঢাকা উত্তরায় অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) ভারপ্রাপ্ত আমিরসহ আট জঙ্গিকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তারা বিভিন্ন স্থানে নাশকতার পরিকল্পনা করছিলো বলে উল্লেখ করা হয়।

কিছুদিন পরপরই জঙ্গি সদস্য আটক হলেও পুলিশ বলছে, বাংলাদেশ থেকে একেবারে জঙ্গি নির্মূল করা সম্ভব নয়, তবে এটি নিয়ন্ত্রণে আছে। পুলিশ মনে করছে, বৈশ্বিক নানা পরিস্থিতির কারণে এ দেশেও জঙ্গিবাদ উৎসাহিত হয়। বাংলাদেশে নিজেদের অবস্থান জানাতে জঙ্গিরা বিভিন্ন ঘটনা ঘটিয়ে আসছে।

মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে গোয়েন্দা পুলিশ কারাগারে বন্দী নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) আমির মাওলানা সাইদুর রহমানের ছেলেসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করে।

সেখানে ডিএমপির মুখপাত্র যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, “গ্রেফতার করা আট জঙ্গির একজন আবু তালহা মোহাম্মদ ফাহিম ওরফে পাখি কারাগারে থাকা জেএমবির আমির মাওলানা সাইদুর রহমানের ছেলে। বাবার অবর্তমানে তিনি জেএমবির ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে কাজ করছিলেন। ময়মনসিংহের ত্রিশালের জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার মত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে তার বাবা ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীমুদ্দিন রাহমানীকে ছিনিয়ে নেওয়া তাদের উদ্দেশ্য ছিল।”

কিছুদিন পরপরই জঙ্গি আটক করে এভাবে সাংবাদিকদের সামনে এনে তাদেরকে জঙ্গি বলে পরিচয় করিয়ে দেয় পুলিশ। তবে সেখানে এসব ‘জঙ্গিদের’ কাছে কোন ধরনের প্রশ্ন করার সুযোগ সাংবাদিকদের থাকে না।

পুলিশ বলছে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ যে নির্মূল হয়ে যায়নি তা জানানোর জন্য এসব জঙ্গিরা বিভিন্ন ব্যক্তি বা স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা করে। এর একটি দিক হচ্ছে নিজেদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানান দেওয়া আর একটি হচ্ছে অন্যদের তাদের দলে ভিড়তে উৎসাহিত করা। নিজেদের সক্রিয় রাখতে তারা কারাগারে বসেও নানা কৌশলে বাইরে তাদের সংগঠনের দিক নির্দেশনা দেয় বলে দাবি পুলিশের।

এর উদাহরণ হিসেবে ডিএমপি মুখপাত্র বলেন, “আমাদের কাছে তথ্য আছে, জঙ্গিরা কারাগারে মোবাইলে কথা বলছে। এ ছাড়া তাদের আইনজীবী বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেখা করার সময় সংগঠনের বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিচ্ছে”।

তারমতে, সেই ধারাবাহিকতায় এ দেশেও জঙ্গিরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। জঙ্গিদের বিষয়ে গোয়েন্দাদের তৎপরতার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা জঙ্গিদের বিষয়ে তৎপর আছি ও জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছি। আটক আট জঙ্গির বিষয়ে আমরা আরও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছি। ত্রিশালের ঘটনায় তাঁদের সম্পৃক্তরা আছে কি না যাচাই করা হচ্ছে। এ ছাড়া তাদের অর্থের যোগানদাতাদেরও চিহ্নিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

অপরাধবিজ্ঞানীরাও বলছেন, বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যক্রম নতুন নয়। তবে অন্যান্য অনেক দেশের তু্লনায় বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আছে। সেক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা অনেকটাই প্রসংশাযোগ্য। তবে ধরা পড়া ‘জঙ্গিরা’ প্রকৃতপক্ষেই ‘জঙ্গি’ কিনা সে প্রশ্নও উঠছে বারবার। কারণ, আটকের পর পুলিশ দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করার পরেই তাদেরকে গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি করে থাকে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিয়াউর রহমান বেনারকে বলেন, “জঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশে বিশদ কোন গবেষণা নেই। এখন পর্যন্ত আমরা এ বিষয়ে পুলিশের উপর নির্ভরশীল। কয়েকবছর আগেও দেশে জঙ্গি কার্যক্রম আগে যেভাবে দেখা যেত সেভাবে এখন আর নেই বলা চলে। এটা এখন শুধু ব্লগার হত্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ। সেক্ষেত্রে বলা যায় পুলিশের নিয়মিত অভিযানের ফলেই জঙ্গি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে। তাই এক্ষেত্রে যৌক্তিকভাবে পুলিশকে কিছুটা সফল বলা যেতে পারে।”

এদিকে কিছুদিন পরপর দেশে  জঙ্গি আটক হলেও শেষ পর্যন্ত তাদের পরিণতি সম্পর্কে জানা যায় না। এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মহিউদ্দিন আহমেদ প্রশ্ন করেন, “ যারা গ্রেপ্তার হয়, তারা কোথায় যায়? এদের বিচার হয় কিনা, জানা যায় না। গণমাধ্যমও জঙ্গি আটকের খবর প্রচারের পর দায়িত্ব শেষ করে”।

তবে জঙ্গি বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সংশয়ের জবাবে সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বেনারকে বলেন, “পুলিশের কাজ বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আসামি আটক করা। এরপর তারা আসলেই জঙ্গি কিনা সেটি নির্ধারণ করা আদালতের দায়িত্ব”।

এদিকে আটক আট জঙ্গিকে মঙ্গলবার  ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুর রহমান প্রত্যেকের ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।