নারী মুক্তিযোদ্ধাদের (বীরাঙ্গনা) স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.03.26
BD-politics স্বাধীনতার ৪৫তম দিবসে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা। এবার থেকে দেয়া শুরু হলো বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা। ছবিঃ ২৬ মার্চ,২০১৫
বেনার নিউজ

রাহেলা, রাজুবালা ও হাজেরা- এই তিন বীরাঙ্গনা গত বিজয় দিবসে  (১৬ ডিসেম্বর) সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকা এসে একটি প্রশ্ন রেখে যান।  তাঁদের চোখে পানি থাকলেও কণ্ঠে ছিল ক্ষোভ।

তাঁদের জীবনের বীভৎসতম অধ্যায়ের গল্প জেনে  ও পড়ে সেদিন অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন।
"সরকার স্বীকৃতি দিবে শুনি। কিন্তু কবে দিব? এর মধ্যে কয়জন মইরাও গেছে," একথা বলে ঢাকা ছাড়েন রাহেলা।

ওই তিনজন নারী মুক্তিযোদ্ধা (বীরাঙ্গনা)  বঞ্চনার কথা তুলে ধরে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানেরা যেভাবে মাথা উঁচু করে বেঁচে আছেন, তাঁরাও চান সেই স্বীকৃতি ও সম্মান।

বিজয় দিবস থেকে স্বাধীনতা দিবস (২৬ মাচর্) আসার আগেই সেই স্বীকৃতি মেলার প্রক্রিয়া শুরু হলো।   স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন বীরাঙ্গনা হিসেবে পরিচিত একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে নির্যাতিত নারীরা।

নিজেকে বীরাঙ্গনা পরিচয় দিয়ে গবর্বোধ করা দেশের সাহসী নারী ও প্রখ্যাত ভাস্কর ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিনী সরকারের এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তবে সামাজিক বাস্তবতার কারণে বীরাঙ্গনাদের তালিকা করা কিছুটা কঠিন বলে মনে করেন তিনি ।

" এতো প্রতিকূলতার মধ্যেও সরকার যে বীরাঙ্গনাদের কথা ভাবছে,  এদেশের মানুষ যে তাদের শ্রদ্ধা করে -এটা বড় পাওয়া। তবে আমরা দেশের জন্য, নিজের অস্তিত্ন রক্ষার জন্য যুদ্ধ করেছি। কিন্তু দেশের অস্তিত্ন রক্ষার  যুদ্ধ শেষ হয়নি," স্বাধীনতা দিবসে বেনারকে জানান  ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিনী।

তার মতে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ এবং দেশ মৌলবাদমুক্ত না হওয়া পযর্ন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন পূরণ হবে না।  এখনকার হাসিনা সরকারই এটা পারবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রথম দফায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত তালিকার প্রায় ৮০ জনকে সরাসরি নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত করা হবে। বিষয়টি স্পর্শকাতর বলে অন্য বীরাঙ্গনাদের পরবর্তিতে  ভিন্নভাবে যাচাই-বাছাইয়ের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সরকারের এই উদ্যোগের ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো নারী মুক্তিযোদ্ধারাও একই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। বর্তমানে একজন মুক্তিযোদ্ধা মাসে পাঁচ হাজার টাকা ভাতা পান। মুক্তিযোদ্ধাদের এই ভাতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।

এ ছাড়া চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তান-নাতি-নাতনিরা কোটাসুবিধা পান। যুদ্ধাহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার পরিমাণ আরও বেশি।
"প্রথম গেজেট হতে একটু সময় লাগলেও নারী মুক্তিযোদ্ধারা গত জানুয়ারি থেকেই প্রাপ্য ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন," জানান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল - জামুকার ২৮তম সভায় নারী মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
এসময় বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধকালে নির্যাতিত নারীর প্রকৃত হিসাব নেই কারও কাছে। ইতিমধ্যে তাঁদের অনেকে মারাও গেছেন। বলা হয়ে থাকে, মুক্তিযুদ্ধকালে দুই লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন।

" মুক্তিযুদ্ধকালে ১ লাখ ৬২ হাজার নারী ধর্ষণের শিকার এবং আরও ১ লাখ ৩১ হাজার হিন্দু নারী স্রেফ গায়েব হয়ে গিয়েছিলেন, " জানান মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. এম এ হাসান । তিনি ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক।
জামুকার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত তালিকাটি যেহেতু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে করা হয়েছে, তাই তাঁদের যাচাই-বাছাই ছাড়াই সরাসরি নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য যেসব আবেদন ও নাম পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের মতো প্রকাশ্যে যাচাই-বাছাই করা হবে না। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট গবেষকসহ বিভিন্নভাবে তথ্য নিয়ে যাচাই করে তালিকাভুক্ত করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সূত্রে জানা গেছে,  জাদুঘরের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ৮০ জনের তালিকা মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের গেজেটভুক্তির কাজ চলছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়  জানিয়েছে,  এর বাইরেও অনেকে তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করছেন। এ জন্য মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য যে ফরম ঠিক করা হয়েছে, সেখানে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত আট ধরনের মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় ‘মহিলা মুক্তিযোদ্ধা’ (পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের নির্যাতনের শিকার) নামটিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।


মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।