সিটি নির্বাচনে আসামী প্রার্থীরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে
2015.03.30
ঢাকা মহানগর পুলিশ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে মামলা থাকলে প্রকাশ্যে আসামাত্র তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। তবে কেউ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলে গ্রেপ্তার করা হবে না।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পুলিশের এ বক্তব্যে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাঁরা এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ চাইছেন।
“পুলিশের এ ধরণের বক্তব্য দুঃখজনক। তফসিল ঘোষণার পর এবং মনোনয়ন বৈধ হওয়ার পর প্রার্থীর প্রোটেকশন দেওয়ার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের,” বেনার নিউজকে জানান স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ ।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপ বাড়ছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকাণ্ডে বিরোধীরা আশঙ্কা করছেন, ‘সবার জন্য সমান সুযোগ’ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করতে পারবে না কমিশন।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আইন নির্বাচন কমিশনকে অনেক ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু তফসিল ঘোষণার দুসপ্তাহের মধ্যে বিরোধীদের বিষয়ে কমিশনকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
পুলিশের ভয়ে যাঁরা পালিয়ে আছেন, তাঁদের ব্যাপারে কমিশন কী ব্যবস্থা নেবে, জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন ইতিমধ্যে সাংবাদিকদের বলেন, “এ বিষয়ে তো আমি আশ্বস্ত করতে পারি না। কেউ পালিয়ে থাকলে তাঁকে কীভাবে খুঁজে বের করব?”
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের নির্বাচনী আইনে কোনো ব্যক্তি দন্ডপ্রাপ্ত না হলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। কিন্তু বিরোধী জোট থেকে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারি অনেকেই বিভিন্ন মামলার আসামী। তাঁরা গ্রেপ্তার-আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, অনেকে কারাবন্দী।
২৯ মার্চ ঢাকায় বিরোধীজোটের দুই মেয়রপ্রার্থীসহ প্রায় সব কাউন্সিলর প্রার্থী অন্যের মাধ্যমে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন, জমাও দিয়েছেন অন্যের মাধ্যমে।
ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র পদে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। মিন্টুর নামে মামলা থাকায় তিনি প্রকাশ্যে আসছেন না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি থেকে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দীন আহম্মেদ পিন্টু ও মহানগর নেতা আবুল বাশার।মামলা থাকায় তাঁরা আত্মগোপনে বা জেলে রয়েছেন। মেয়রপদে একমাত্র দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন প্রকাশ্যে।
এ অবস্থায় তাঁরা কীভাবে নির্বাচনী প্রচারে নামবেন, তা এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ তাঁদের প্রায় সবার বিরুদ্ধে এক বা একাধিক মামলা আছে। একই অবস্থা ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও।
বিরোধী নেতা-কর্মীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে বিএনপিপন্থী শত নাগরিক জাতীয় কমিটির একটি প্রতিনিধিদল গত ২৫ মার্চ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
“বিএনপি নেতাদের মধ্যে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে তাঁকে জামিনে মুক্তি দেওয়া, যাঁরা আত্মগোপনে আছেন তাঁরা যাতে প্রকাশ্যে এসে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইসির কাছে আমরা অনুরোধ রেখেছি,” বেনারকে জানান এমাজউদ্দীন আহমদ।
“কারও বিরুদ্ধে মামলা থাকলে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারে। আর কারাগারে আটক কেউ প্রার্থী হলে তাঁকে জামিন দেওয়ার এখতিয়ার আদালতের। এসব ক্ষেত্রে কমিশনের কিছু করার নেই,” সাংবাদিকদের জানান নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক।
তবে তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে মামলা না থাকা সত্ত্বেও পুলিশ যদি তাঁকে হয়রানি করে, তাহলে কমিশন অবশ্যই ভূমিকা রাখবে।
“এটা ঠিক, যাঁরা কারাগারে আটক আছেন তাঁদের ব্যাপারে কমিশনের কিছুই করার নেই। কিন্তু যাঁদের নামে মামলা আছে বা যাঁরা ভয়ে পালিয়ে আছেন, তাঁদের যাতে পুলিশ হয়রানি না করে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়ার ক্ষমতা কমিশনের আছে,” বেনারকে জানান বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন।
মাহবুব হোসেন আরো বলেন, “তবুও পুলিশ যদি প্রার্থী-সমর্থকদের গণহারে আটক করে, সেই দায় সরকার ও কমিশনকে নিতে হবে।”
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে ২৯ মার্চ ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন আগামী ৯ এপ্রিল। ভোট গ্রহণ হবে ২৮ এপ্রিল।
উল্লেখ্য, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ৪৭ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। আর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ৯৩টি পদে জমা দিয়েছেন এক হাজার ৩৩৪ জন প্রার্থী।