খালেদা জিয়া আদালতের শুনানিতে যাবেন নিরাপত্তা পেলে, জানালেন আইনজীবিরা
2015.04.03
গত ৩ মাস ধরে বিএনপির ডাকা অবরোধ-হরতালের মধ্যে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার শুনানিতে একবারো আদালতে যাননি। নতুন করে আবারো শুনানির তারিখ পড়েছে আগামি ৫ এপ্রিল। এবারো তিনি আদালতে যাবেন কিনা এ প্রশ্নে তাঁর আইনজীবিরা বলছেন, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা দেয়া হলে তিনি আদালতের শুনানিতে অংশ নেবেন।
এছাড়া খালেদা জিয়া আন্দোলন পরিচালনার স্বার্থে গুলশানের নিজ বাসভবনে না থেকে ৩ মাস ধরে তিনি গুলশানের কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। প্রথম দিকে পুলিশ বালির ট্রাক ও গেটে তালা লাগিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে পরে এইসব বাধা তুলে নেয়। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে অব্যাহতভাবে বলা হচ্ছে তিনি এখনো অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন।
এরমধ্যে আদালতের শুনানিতে তিনি যান নি, ভেবেছেন যে তাঁকে আর কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হবেনা। বাধ্য হয়ে তিনি বাস ভবনে ফিরে যেতে বাধ্য হবেন। তবে এ দফা তার পক্ষে নিরাপত্তার প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।
সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেই তিনি আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাড. খন্দকার মাহবুব হোসেন।খবর বাংলানিউজ২৪-এর।
আদালতে যেতে খালেদা জিয়া কি রকম নিরাপত্তা চান জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
মাহবুব হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সরকার পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিলেই তিনি আদালতে যাবেন।
আদালতে যেতে হলে কি রকম নিরাপত্তা চান খালেদা জিয়া জানতে চাইলে অ্যাড. মাহবুব হোসেন বলেন, গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় পুরান ঢাকার বকশিবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিশেষ আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় তার গাড়ি বহরে হামলা চালায় ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
এ সময় জাতীয়বাদী দলসহ এর সহযোগী সংগঠনের বেশ নেতাকর্মী ছাত্রলীগ, যুবলীগের হাতে আহত হন। ওই দিন কোনো ভাবে প্রাণে বেঁচে যান খালেদা জিয়া। এছাড়া দলীয় অনেক নেতাকর্মী ছাত্রদলের মারপিটে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
মাহবুব হোসেন বলেন, তার (খালেদা) গাড়ি বহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেই তিনি রোববার আদালতে যাবেন।
তিনি এও বলেন, খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে যুবলীগ-ছাত্রলীগ হামলা করলেও মামলা দেওয়া হয়েছে যুবদল ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপরে। যারা মুল হামলাকারী তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যাবস্থা নেননি। এমন কি তাদের বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। ওই দিন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ম্যাডমের (খালেদা) গাড়িতেও হামলা করেছিলো। কিন্তু মিডিয়ার সাহায্যে তিনি প্রাণে বেঁচে যান বলেও জানান মাহবুব হোসেন।
মাহবুব হোসেন বলেন, সরকার খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করলেই তিনি আদালতে যাবেন। তিনি আদালতে যেতে চান। তিনি জীবনের নিরাপত্তার ঝুঁকির কারণেই কার্যালয় থেকে বের হচ্ছেন না।
বাড়তি নিরাত্তার ব্যাপারে কোনো আবেদন করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আবেদন করার কিছু নেই। আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জানিয়েছেন সরকার আমাদের জানালেই ম্যাডাম (খালেদা) আদালতে যাবেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া মিডিয়াকে বলেন, আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে ম্যাডামের নিরাপত্তার বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বকশি বাজার আলিয়া মাদ্রামে মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় খালেদা জিয়ার ওপর যে হামলা হয়েছিলো এটা দেশবাসী জানে।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যারা হামলা করেছিলো তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করলেই ম্যাডাম (খালেদা) আদালতে যাবেন।
তিনি বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) তিনি তো দেশের অন্য সাধারণ মানুষের মতো নন। তিনি দেশের তিন বারের প্রধানমন্ত্রী। অবশ্যই তার নিরাপত্তার দরকার রয়েছে। তিনি আদালতে যাবেন, তার গাড়ি বহরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হলেই তিনি আদালতে যাবেন।
আগামী ৫ এপ্রিল রোববার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের আদালতে এ দুটি মামলার বিচার চলছে।
গত ৪ মার্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদন নাকচ করে দিয়ে শুনানির এই দিন ঠিক করে দেন বিচারক।
আদালত সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের ৩ জুলাই ওই মামলা দায়ের হওয়ার পর অসংখ্যবার তারিখ পিছিয়ে ইতিমধ্যে ছয় বছর পার হয়েছে। গত ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের পর সাক্ষ্যগ্রহণও পিছিয়েছে কয়েকদফা। গত কয়েকমাস ধরে আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচারক খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে রাজনৈতিক অঙ্গনে এর উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে।
প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও মন্ত্রীরা বারবার খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করার কথা বললেও তা না করায় রাজনৈতিক অঙ্গণ ও বিচারালয়ে বিভিন্ন ধরণের আলোচনা হচ্ছে। দলটির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলে বড় কিছু ঘটার সম্ভাবনা নেই। তবে এর ফলে তিনি রাজনৈতিক সুবিধা পেতে পারেন।