রহস্যে মোড়া সালাহ উদ্দিনের নামে ‘ইন্টারপোলের রেড নোটিস’
2015.05.14
প্রতিবেশি দেশ ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে পাওয়া গেছে ঢাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে। তবে জট খুলছে না তার নিখোঁজ হওয়া থেকে শুরু করে শিলংয়ে যাওয়া পর্যন্ত নানা রহস্যের।
এরই মাঝে তাকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে ইন্টারপোলের ঢাকা অফিস থেকে ভারতীয় পুলিশকে একটি ‘রেড নোটিস’ পাঠানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে কলকাতার একটি দৈনিকের দেওয়া এ খবরকে ‘নাথিং’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে তার দল বিএনপি।
বৃহস্পতিবার মেঘালয়ভিত্তিক দৈনিক পত্রিকা শিলং টাইমস জানায়, ভারতের হাতে আটক সালাহ উদ্দিনের ওপর কঠোর নজরদারি রাখার নির্দেশ দিয়েছে ইন্টারপোল। নজরদারির পাশাপাশি তাকে গ্রেফতারের অনুরোধ জানিয়ে ইন্টারপোলের ঢাকা অফিস থেকে ভারতীয় পুলিশকে একটি ‘রেড নোটিস’ পাঠানো হয়েছে।
মেঘালয় পুলিশের মহাপরিচালক (ডিজিপি) রাজীব মেহতা শিলং টাইমসকে বলেন, “মঙ্গলবার গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি সম্পর্কে আমরা সিবিআইয়ের (ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো) মাধ্যমে ইন্টারপোলের অ্যালার্ট পেয়েছি।”
তিনি বলেন, “সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ফৌজদারি মামলা থাকার কথা জানিয়ে ইন্টারপোলের ঢাকা ইউনিট থেকে ওই অনুরোধ পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে সিবিআইকে আমাদের উত্তর দিয়েছি। সিবিআই এর নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান শহিদুল হক জানিয়েছেন, “ইন্টারপোল শুধু অপরাধীর অবস্থান জানিয়ে থাকে।”
ইন্টারপোলের মাধ্যমে তারা সালাহউদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পেরেছেন বলে জানান তিনি।
সোমবার সালাহ উদ্দিনের খোঁজ মেলার পর থেকে বিভিন্ন মহলে কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। শিলংয়ে আটক করার সময় সালাহ উদ্দিন উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাফেরা করছিলেন বলে স্থানীয় পুলিশ দাবি করলেও গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে তাকে পায়ের চকচকে জুতাসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাকে দেখা যায়। প্রশ্ন উঠেছে, অপহরণের পর দুই মাস আটক থাকার পরেও কিভাবে তিনি এত পরিপাটি ছিলেন। আর সীমান্ত পেরিয়ে কীভাবেই বা তিনি শিলং পৌঁছালেন। তবে সেসব প্রশ্ন ছাপিয়ে এখন তাকে দেশে ফেরত আনা ও ইন্টারপোলের রেড নোটিসের বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় চলছে।
সালাহউদ্দিনকে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে পুলিশের হেফাজতে থাকা এ বিএনপি নেতাকে সহসাই ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারতের পাসপোর্ট আইন ১৯৫০-এর ৩ ও ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, দেশটিতে অবৈধভাবে কোনোরকম কাগজপত্র ছাড়া প্রবেশ বা প্রবেশের চেষ্টা করলে তিন মাস বা তার বেশি কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড পেতে পারেন।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার সালাহ উদ্দিন আহমদকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে পুলিশের বিশেষ শাখার পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি এখন মেঘালয়ের শিলং শহরের সিভিল হাসপাতালে পুলিশি পাহারায় আছেন। সুস্থ হলে আগামী সপ্তাহে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে সেখানকার পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এর ফলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সময় সাপেক্ষ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পর শিলং টাইমস পত্রিকার সম্পাদক মানস চৌধুরী বলেন, ‘আমার মনে হয়, তাকে ফেরত নিতে অনেক দিন লাগবে। চট করে উনি ছাড়া পাবেন না। ”
তবে তার পরিবারের সদস্যরা সেখানে গিয়ে দেখা করতে পারবেন বলেও তিনি জানান।
বিবিসি বলছে, ভারতে থাকা সালাহ উদ্দিন আহমদের দুজন আত্মীয় প্রথমবারের মতো তার সঙ্গে দেখা করেছেন।
বাংলাদেশ থেকে তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদও শিলং যাওয়ার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছেন বলে জানা গেছে। তবে এখনও তিনি ভারতের ভিসা পাননি বলে সাংবাদিকেদের জানান। শিলং যাওয়ার ব্যাপারে তিনি সরকারের সহযোগিতাও কামনা করেন।
সালাহউদ্দিনের দল বিএনপি তার সন্ধান মেলার কয়েকদিন পরে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলন করে তাকে তার পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার আহবান জানিয়েছে। তাকে নিয়ে ‘সংকীর্ণ রাজনীতি’ না করার আহবানও জানানো হয় দলটির পক্ষ থেকে।
ওই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, “আমরা সরকারকে বলতে চাই- সালাহউদ্দিনকে নিয়ে কোনো নিষ্ঠুর ও নির্দয় মন্তব্য না করে তাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে যথাযথ ব্যবস্থা ও সহায়তা করুন। তারা (সরকার) মানবিক আচরণ করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।”
ইন্টারপোলের ঢাকা অফিস থেকে ‘রেড নোটিস’ জারি প্রসঙ্গে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “ইন্টারপোলের রেড নোটিস- এটা নাথিং। ইন্টারপোল হচ্ছে সারাবিশ্বের পুলিশদের একটি সংগঠন। কিন্তু যে নোটিসটি দেওয়া হয়েছে, সেখানে সালাহ উদ্দিন সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিই প্রতিফলিত হয়েছে। এর ভিন্ন কিছুই নয়।”
এদিকে সালাহ উদ্দিনের ভারতে প্রবেশ ও শিলংয়ে উপস্থিতিতে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি করেছে। এ বিষয়ে বিএসএফ এর জনসংযোগ কর্মকর্তা এসকে সিং বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বিশাল সীমান্ত রয়েছে। সালাহ উদ্দিন কীভাবে ভারতের প্রবেশ করলেন তা আমাদের জানা নেই।” এ বিষয়ে বিএসএফ কোন তদন্তও করবে না বলে জানান তিনি।
গত ১০ মার্চ অচেনা এক দল লোক উত্তরার একটি বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার পর থেকে আর কিছুই তিনি মনে করতে পারছেন না বলে শিলং পুলিশের কাছে দাবি করেন বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন। সিলেট সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটারের কম দূরত্বের শিলংয়ে কীভাবে এলেন, তাও তিনি বলতে পারেননি।