সৌদির নেতৃত্বে জঙ্গি বিরোধী জোটে বাংলাদেশ, ভূমিকা স্পষ্ট নয়

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.12.15
BD-saudi সংবাদ সম্মেলনে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী যুবরাজ মোহামেদ বিন সালমান সন্ত্রাস বিরোধী জোটের ঘোষণা দেন।
অনলাইন

সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সৌদি আরবের নেতৃত্বে  গঠিত নতুন সামরিক জোটে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। ৩৪টি মুসলিম দেশকে নিয়ে এ জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। মঙ্গলবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতির মাধ্যমে এ অবস্থানের কথা জানানো হলেও সদস্য হিসাবে বাংলাদেশের করণীয় বা ভূমিকা সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি।

বিবৃতিতে জানানো হয়, সৌদি আরবের বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থা রুখতে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে একটি সেন্টার স্থাপন করতে যাচ্ছেন। সেখান থেকে সকল সদস্য রাষ্ট্রের জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে সকল প্রকার সমন্বয় করা হবে।

বাংলাদেশকে এ প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হতে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল বিন আহমেদ আল-জুবায়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের নীতি হচ্ছে জঙ্গিবাদ ও চরম সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’। তার আলোকেই বাংলাদেশ অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে ঐক্যেমতে এসে এ জোটে যোগ দিয়েছে।

অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে যেখানে প্রয়োজন সেখানে সহায়তা দেয়া হবে এ জোটের মূল কাজ। এর পাশাপাশি জঙ্গিবাদ রুখতে এ জোটের সদস্যরা একে অন্যের সঙ্গে তথ্য-উপাত্ত বিনিময় এবং অন্যান্য সহায়তা দেবে।

আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এ লড়াইয়ে মোট ৩৪টি মুসলিম দেশ সামরিক জোট ঘোষনা দিয়েছে। এ জোটের যাবতীয় কার্যক্রম রিয়াদ থেকেই পরিচালিত হবে। জোটের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আরব, দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলো রয়েছে।

এদিকে একটি সংবাদ সম্মেলনে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী যুবরাজ মোহামেদ বিন সালমান বলেছেন, এই জোট ইরাক, সিরিয়া, মিশর আর আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী ও চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

ইসলামিক স্টেটের মতো গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে বর্তমানে বেশ কয়েকটি জোট রয়েছে। আমেরিকান নেতৃত্বাধীন জোটে রয়েছে ৬৫টি দেশ। যদিও এদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই সক্রিয়ভাবে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছে।


নতুন জোটে থাকা ৩৪ দেশ

এই জোটে থাকা দেশগুলো হল- সৌদি আরব, বাংলাদেশ, জর্ডান,সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, বাহরাইন, বেনিন, তুরস্ক, চাদ, টোগো, তিউনিশিয়া, জিবুতি, সেনেগাল সুদান, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, গ্যাবন, গিনি, ফিলিস্তিন, কোমোরোস,কাতার, আইভোরি কোস্ট, কুয়েত, লেবানন, লিবিয়া, মালদ্বিপ, মালি, মালয়েশিয়া, মিশর,মরোক্কা, মৌরিতানিয়া, নাইজার, নাইজেরিয়া, ইয়েমেন।


জোটের বিস্তারিত জ্ঞাত নয় বাংলাদেশ

সৌদির আমন্ত্রণে পাওয়ার দুদিন পর প্রাথমিক আলোচনায় সন্ত্রাসবিরোধী এ জোটে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানালেও এই জোটের বিস্তারিত সম্পর্কে জ্ঞাত নয় বাংলাদেশ। এমনকি এই জোটের অধীনে সৈন্য পাঠাতে হবে কিনা, বা সামরিক বিষয়ে কি ধরণের সহযোগিতা করতে হবে- এসব বিষয়ে বাংলাদেশ বিস্তারিত জানতে পারেনি।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বেনারকে বলেন, “সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের প্রতিরোধে একটি জোট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। দুদিন আগে আমন্ত্রণ পেয়ে প্রাথমিক আলোচনার ভিত্তিতে সেই জোটে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে রিয়াদের কাছে এই উদ্যোগের বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, “প্রাথমিক আলোচনায় জানা গেছে, মুলতঃ এটা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একটি বৈশ্বিক জোট। জোটে অংশ নেওয়া দেশগুলো সন্ত্রাস দমনে তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা, পলিসি, গোয়েন্দা তথ্য প্রভৃতি একে অপরের সঙ্গে ভাগাভাগি করবে। কারণ হিসেবে বলা হয়, এসব প্রত্যেকটি দেশ নিজস্ব কিংবা  দ্বিপাক্ষিকভাবে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে”।

তিনি আরো বলেন, কিন্তু বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে এটি হচ্ছে না। এটাকে আরো বড় পরিসরে আনতে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে এই জোট গঠন করা হচ্ছে। সৌদি জানিয়েছে, তারা রিয়াদে একটি সন্ত্রাসবিরোধী কেন্দ্র করতে চান।  সন্ত্রাস ও উগ্র সহিংসতার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশ এই জোটে যোগ দেওয়ার সম্মতি দিয়েছে।
নতুন এই উদ্যোগে যোগ দেয়ার ক্ষেত্রে কোন শর্ত নেই বলেও জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।


‘যথার্থ ও প্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত’

মুসলিম প্রধান দেশগুলোর এ জোটে বাংলাদেশে অংশগ্রহনের সিদ্ধান্তকে যথার্থ ও প্রত্যাশিত বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। এ জোটের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ও তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ আরো দক্ষ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন তারা।

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন, “সৌদি আরবের নেতৃত্বে ৩৪টি মুসলিম প্রধান দেশ যেখানে সন্ত্রাসবিরোধী জোটে অংশ নিচ্ছে, মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশেরও এ জোটে অংশ নেওয়া সিদ্ধান্ত  যথার্থ ও প্রত্যাশিত। বাংলাদেশেও সন্ত্রাস, আক্রমন, হামলার ঘটনা ঘটছে। এ জোটে সচেষ্ট হলে এ ধরনের সন্ত্রাসে আক্রান্ত অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশগুলোর সঙ্গে একত্রে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আরো দক্ষতা অর্জন করতে পারবে বাংলাদেশ।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বাংলাদেশের অংশ গ্রহণকে ‘ইতিবাচক সিদ্ধান্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন।

তিনি বেনারকে বলেন, “আইএসের উত্থান এবং বিশ্বে চলমান এ ধরনের সহিংসতা বা সন্ত্রাসবাদের কারণে মুসলিম বিশ্বকে যেভাবে চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে, সেখানে মুসলিম বিশ্বের একটি শক্ত অবস্থান দরকার ছিল। নতুন গঠিত জোট কতটা ঐক্য বজায় রেখে কাজ করবে জানিনা, তবে সৌদি আরব হোক বা অন্য একটি মুসলিম দেশের নেতৃত্বে হোক, এ ধরনের জোট মুসলিম দেশের কণ্ঠকে শক্তিশালী করবে। কূটনৈতিক সুবিধা এনে দেবে। আর বাংলাদেশ সরকার তার অনুসৃত মধ্যপ্রাচ্য নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এ জোটের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।”

প্রসঙ্গত, ইতিপূর্বে সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইয়েমেনে যে যুদ্ধ চলছে সেখানেও সৌদি আরবকে বাংলাদেশ সমর্থন দিয়েছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।