হঠাৎ স্কুলের বেতন বৃদ্ধি, অভিভাবকদের বিক্ষোভ
2016.01.13

দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ভর্তি ফি ও বেতন মিলিয়ে কত টাকা নিতে পারবে তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ নিয়ে যেমন নীতিমালা করে দিয়েছে, তেমনি উচ্চ আদালতও বলে দিয়েছে ওই নীতিমালার বাইরে কেউ বেতন ও ফি নিতে পারবে না।
কিন্তু বছরের শুরুতেই ঢাকা ও চট্টগ্রামের বড় স্কুলগুলো বেতন বাড়ানো শুরু করেছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বৃদ্ধির এই হার দেড় থেকে দ্বিগুণ। এ নিয়ে সরকারের শিক্ষা বিভাগ উদ্বিগ্ন। এর পাশাপাশি নীতিমালা লঙ্ঘন করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন শিক্ষার নীতি নির্ধারকেরা।
বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত কয়েক দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ বা সড়ক অবরোধ হচ্ছে। আজও ঢাকা এবং চট্টগ্রামের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছেন অভিভাবকেরা।
“এটি উদ্বেগজনক ও বিস্ময়কর একটি ব্যাপার। একযোগে সব স্কুল যেভাবে বেতন ও ফি বাড়াচ্ছে, এর যৌক্তিকতা যাচাই করে দেখা হবে। কেউ অযৌক্তিকভাবে বেতন ও ফি বাড়ালে তা আবার ফেরত দিতে হবে,” বেনারকে জানান শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইন।
গত বছরও একইভাবে বেতন বাড়িয়েছিল রাজধানীর বড় তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—ভিকারুননিসা নুন স্কুল, আইডিয়াল স্কুল ও মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই স্কুলগুলো বাড়তি বেতন ও ফি ফেরত দেয় অথবা সমন্বয় করে।
“এভাবে বেতন বাড়তে পারে না। এর লাগাম টেনে ধরতে সরকারকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে,” বেনারকে জানান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী, ভর্তির সময় মাসিক বেতন, সেশন চার্জ, উন্নয়ন ফিসহ বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা এবং ইংরেজি ভার্সনে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নেওয়া যাবে।
কিন্তু বেশির ভাগ বাংলা মাধ্যম স্কুল ১২ হাজার টাকার বেশি নিচ্ছে। মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলে ভর্তি ফি দ্বিগুণ হয়েছে। গত বছর ৫ হাজার টাকায় সন্তানকে ভর্তি করাতে পারলেও এ বছর অভিভাবককে গুনতে হয়েছে ১০ হাজার টাকা। এ নিয়ে অভিভাবকেরা অধ্যক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে মাসের বেতন শ্রেণিভেদে কমপক্ষে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা বেতন বেড়েছে। বিক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা ১৭ জানুয়ারি থেকে স্কুলের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন।
ওই স্কুলে ৪৩২ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল বাস্তবায়ন করতে যে অর্থ দরকার, তার চেয়ে ১০ শতাংশ অর্থের ঘাটতি আছে।
তবে উইলস লিটল স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেন বলেন, “গড়ে ৪৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়েছে।”
“জাতীয় বেতন স্কেলের অজুহাতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান শাস্তিযোগ্য অপরাধ করছে। তারা আদালতের নির্দেশনা মানছে না, মন্ত্রণালয়েরও নীতিমালা লঙ্ঘন করছে,” জানান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন।
উল্লেখ্য, বেসরকারি বলা হলেও এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক–কর্মচারীদের সরকার মূল বেতনের সবটাই দেয়। আরও কিছু ভাতা সরকার দেয় যা বাজার অনুপাতে কম। স্কুলগুলোর নিজস্ব আয় দিয়ে ওই সব ভাতা মেটানো হয়।
শিক্ষা বিভাগ বলছে, আংশিক ভাতা দিতে যে পরিমাণ বেতন ও ফি বাড়ানো হচ্ছে, তা যৌক্তিক নয়।
দেশে মেয়েদের সেরা স্কুল ভিকারুননিসা নুনেও বেতন বাড়ানোর কথা বলছে কর্তৃপক্ষ। তবে কত বাড়ানো হবে, তা এখন পর্যন্ত ঘোষণা হয়নি।
বিক্ষোভ করছেন অভিভাবকরা
গতকাল বুধবার ভিকারুননিসা নুন স্কুলে বিক্ষোভ করেছেন অভিভাবকেরা। তাঁরা ‘অস্বাভাবিক বেতন বৃদ্ধি মানি না, মানব না’ স্লোগান দেন। বৃহস্পতিবারও একই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বেতন বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ ভাগ পর্যন্ত। দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বেতন ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ২০০ টাকা করা হয়েছে।
মিরপুরের শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুলে বেতন বেড়েছে ৩০০ টাকা। আবার গত বছর যে ভর্তিতে খরচ হয়েছিল ৮ হাজার টাকা, এ বছর তা ১২ হাজার ৭৬৫ টাকা নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে ৪২ শতাংশ বেতন বেড়েছে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত নতুন ভর্তি ফি ২ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা করা হয়েছে।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ রাইফেলস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে ইংরেজি ভার্সনে গত বছর ২ হাজার ৬০০ টাকা বেতন নেওয়া হলেও এ বছর ৪ হাজার টাকা বেতন নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত প্রায় অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন অস্বাভাবিক বাড়ানো হয়েছে। সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির সাংবাদিকদের বলেন, ভালো শিক্ষক ধরে রাখতে তাঁকে বেতন বাড়াতে হয়েছে। বর্ধিত বেতন প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে অভিভাবকেরা স্মারক লিপি দেবেন।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের নৌবাহিনী স্কুলে বেতন ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা সড়ক অবরোধ করেছেন। ওই বিদ্যালয়ে ভর্তি ফি সাড়ে ৪ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ হাজার ১৪০ টাকা করা হয়েছে।
“আরও সুনির্দিষ্টভাবে ভর্তির নীতিমালা থাকা উচিত। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এই দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছি,” বেনারকে জানান অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবীর।