ষষ্ঠ শ্রেণির ২৫ লাখ শিক্ষার্থীকে ট্যাবলেট দেবে সরকার
2015.07.24
বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ, মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার স্কুল-শিক্ষায় বৈপ্লবিক সাফল্য এনেছে, এর ধারাবাহিকতায় এবার ট্যাবলেট হাতে পেলে শিক্ষার্থীরা পৌঁছাবে অন্য উচ্চতায়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী বছর (২০১৬) থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির সব শিক্ষার্থীকে ট্যাবলেট দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে, যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে সরকার। মাধ্যমিকে ‘এক শিক্ষার্থী এক ট্যাব’ নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ওই শ্রেণিতে প্রতিবছরই ট্যাব দেওয়া হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিয়ে প্রতি বছর প্রায় ২৫ লাখ শিক্ষার্থী ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হচ্ছে।
২০০৯ সাল থেকে ওই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। ওই বছর প্রায় ১৬ লাখ শিক্ষার্থী ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছিল যা পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রায় নয় লাখ বেড়েছে।
বাংলাদেশে এখন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীকে বিণামূল্যে পাঠ্যবই দেওয়া হয়, যা সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে মনে করছেন অনেকে। এসব বইয়ের ই-ভার্সন বা ই-বুক অনলাইনে দেওয়া আছে। প্রতিটি ট্যাবে পাঠ্যবইয়ের ই-ভার্সন রাখারও পরিকল্পনা রয়েছে।
চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রাক প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৪০ দশমিক ৪ মিলিয়ন বা প্রায় চার কোটি ৪৫ লাখ শিক্ষার্থী বিনা মূল্যে ৩২ কোটি কপি বই পেয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষে বইয়ের সংখ্যা হবে প্রায় ৩৫ কোটি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, সারা দেশে সব শিক্ষার্থীকে বই দেওয়ার জন্য সরকার বছরে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করে, যা প্রায় আটশ কোটি টাকার সমান।
পাঠ্যবই খাতে শিক্ষায় সরকারের এই বিনিয়োগ ও সাফল্যের পর ট্যাব দেওয়ার সিদ্ধান্তটিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
“শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারের যেকোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এর পাশাপাশি নিন্দা জানাই শিক্ষায় বরাদ্দের হার কমিয়ে দেওয়ার জন্য,” বেনারকে জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, যিনি গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রণোদনা বা সহায়তা শিক্ষার বিকাশে সহায়ক হবে। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জরাজীর্ণ চেহারার বিষয়টিও সরকারকে মাথায় রাখতে হবে।
ট্যাব দেওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা সম্পর্কিত সকল যোগাযোগ আরও সহজ, গতিশীল ও বাস্তবানুগ হবে বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
২০১৬ থেকে পর্যায়ক্রমে প্রতি বছর ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ট্যাব দেওয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বেনারকে বলেন, “প্রতি বছর ওই শ্রেণিতে ট্যাব দেওয়ার ফলে পর্যায়ক্রমে মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীর হাতে তা পৌঁছে যাবে।”
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ৮২ হাজার এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ১৯ হাজার। সরকারের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন কর্মসূচির (এটুআই) সহযোগিতায় এ পর্যন্ত দেশের ২৩ হাজার ৩৩১টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং সাড়ে চার হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালের ২০ মে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম উদ্বোধন করেন। শিক্ষকদের অনেকেই এখন ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করছেন, যা দিয়ে ট্যাব পাওয়া শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে উপকৃত হবে।
“এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর দপ্তর-অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ডসহ সব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ কাজকর্ম অনলাইনেই সম্পন্ন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে,” বেনারকে জানান শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান।
সচিব জানান, ট্যাব সংগ্রহে সরকার ও কয়েকটি দাতা সংস্থার মধ্যে আলাপ-আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। উদ্যোগটি বিশাল হলেও অর্থ সংগ্রহে সমস্যা হবে না বলে মনে করেন শিক্ষাসচিব। বাজেট কত দাঁড়বে এই প্রশ্নে তিনি বলেন, এর কোনো বাজেট ঠিক হয়নি। সরকারি প্রতিষ্ঠান দোয়েলকে দিয়ে ট্যাব তৈরীর পরিকল্পনা রয়েছে। এতে বাইরের অনুদানও সম্পৃক্ত করার চেষ্টা আছে। তাই ট্যাবের কোয়ালিটি হিসেবে খরচ ঠিক হবে।
উল্লেখ্য, কাজের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে সম্প্রতি ২৫ হাজার ট্যাবলেট পিসি তুলে দিয়েছে সরকার । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় গত ৫ ফেব্রুয়ারি কর্মকর্তাদের মধ্যে এই ট্যাব বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার কর্মসূচির অংশ হিসাবে ‘ইনফো সরকার-২’ নামের একটি প্রকল্পের আওতায় কর্মকর্তাদের এসব ট্যাব দেওয়া হয়।