কয়েকজন শিবির কর্মী ও জেএমবি সদস্য গ্রেপ্তার

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.12.22
BD-shibir বগুড়ায় অভিযান চালিয়ে গোপন বৈঠক চলাকালে বাবা-ছেলেসহ জেএমবির চারজন সক্রিয় সদস্যকে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
বেনার নিউজ

বাংলাদেশে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো বিক্ষিপ্তভাবে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কড়া নজরদারির মাধ্যমে তাদের চেষ্টা নস্যাৎ করে চলেছে। সেই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারও ঢাকা এবং বগুড়া থেকে কয়েকজন শিবির কর্মী ও বগুড়া থেকে চারজন জেএমবি সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ।

এদিকে বাংলাদেশের কোথাও আইএস বা আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্বকে নেই বলে জানিয়েছেন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এদেশে আইএস’র অস্তিত্ব প্রমাণের চেষ্টা একটি ষড়যন্ত্রের অংশ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


গান পাউডার, পুলিশের পোশাকসহ গ্রেপ্তার ৬ শিবির কর্মী

রাজধানী ঢাকার রামপুরার একটি মেস থেকে গান পাউডার, হাতবোমা ও পুলিশের পোশাকসহ ছয় শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে পূর্ব উলনের একটি ভবনে একটি মেস থেকে তাদের আটক করা হয়।

এ বিষয়ে রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, “আটক শিবির কর্মীদের কাছে দেড় কেজি গান পাউডার, ছয়টি ককটেল ও তিনসেট পুলিশের পোশাক পাওয়া গেছে। তারা পুলিশের পোশাক ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে ‘অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড’ ঘটিয়ে আসছিল।”

তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হলেও আটকৃতরা শিবিরের কোন পর্যায়ের কর্মী সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।


নাশকতার পরিকল্পনা আঁটছিলেন জেএমবির চার সদস্য: ডিবি

একই দিন বগুড়ায় অভিযান চালিয়ে গোপন বৈঠক চলাকালে বাবা-ছেলেসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির চারজন সক্রিয় সদস্যকে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে এরা নাশকতার চালানোর পরিকল্পনা আঁটছিলেন বলে পুলিশ দাবি করেছে।

সোমবার রাতে বগুড়া শহরতলির সিলিমপুর উত্তরপাড়ার জেএমবির সদস্য আনিসুর রহমানের বাড়িতে সাংগঠনিক বৈঠক চলাকালে ডিবি ওই অভিযান চালায়। আটকৃতরা হলেন-বগুড়ার গাবতলী উপজেলার পার কাকড়া গ্রামের ফাজলে রাব্বী (৫৮), তাঁর ছেলে সাইফুল্লাহ সাদিক (১৯), বগুড়া শহরতলির সিলিমপুর উত্তরপাড়ার ওসামা বিন আনিস (১৯) ও ইমামুস সাকলাইন ওরফে রেহান (২৩)। এদের মধ্যে সাইফুল্লাহ সাদিক রংপুর কারমাইকেল কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্র বলে পুলিশ জানিয়েছে। আটক চারজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার বগুড়ার সহকারী পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা স্বীকার করেছেন নিষিদ্ধঘোষিত জেএমবির সদস্য এবং সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা আঁটছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।”


আইএসে যোগদানকারীর বাবাসহ চারজন রিমান্ডে

এদিকে আইএসে যোগদানকারী এক বাংলাদেশির বাবাসহ চারজনকে মঙ্গলবার রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম আলমগীর কবির রাজ। এরা হলেন—আবুল হাসনাত (৬৭), নাহিদুজ্জোদা মিয়া (৩০), নাহিদুল ইসলাম (১৯) ও তাজুল ইসলাম (২৫)। গত ৮ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও থানার কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবনের সামনে থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মঙ্গলবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবির) পরিদর্শক মো. জহির হোসেনের পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানালে আবুল হাসনাতকে একদিন এবং বাকি তিনজনকে দুদিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন আদালত।

রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আসামি আবুল হাসনাতের ছেলে সাইফুল হক সুজন বর্তমানে আইএসে যোগ দিয়ে সিরিয়াতে অবস্থান করছে। তাঁর আরেক ছেলে আতাউল হক সবুজ দেশে জঙ্গি অর্থায়নের জন্য অর্থ পাঠিয়েছে। এছাড়া ঢাকা শহরে বড় ধরনের নাশকতার জন্যই তারা সংগঠিত হয়েছিল।


আইনশৃঙ্খলবা বাহিনীকে সচেতন হতে হবে

অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, অপরাধীরা কৌশল বদলাচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকেও তাদের কৌশল পাল্টাতে হবে। থাকতে হবে আরো সতর্ক। বিশেষ করে কোন নিরপরাধ ব্যক্তি যেন তাদের সন্দেহের ‘শিকার’ না হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাহফুজুল হক মারজান বেনারকে বলেন, “অপরাধীরা অপরাধ সংঘঠিত করার ধরণ পাল্টাচ্ছে। এজন্যই শিবির কর্মীদের কাছে পুলিশের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলবা বাহিনীকে আরো সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের আলাদা উইং খোলার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সরকারকে সেটা ভাবতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “জঙ্গি সন্দেহে পুলিশের হাতে আটকৃতদের সংখ্যা বাড়ছে। পুলিশকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে কোন নিরপরাধ তাদের সন্দেহের শিকার না হয়।”


বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব নেই

এদিকে বাংলাদেশে আইএস’র অস্তিত্ব থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এমনকি সম্প্রতি দেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলো এ দেশেরই লোক ঘটিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইএস বা আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব নেই। দেশে যেসব ঘটনা ঘটে তা জেএমবি বা জঙ্গি সংগঠনগুলোরই করা। একটি বিশেষ মহল বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে কোথাও একটা কিছু ঘটলে তারা বলে বেড়ায় এটা ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিরা করেছে। কিন্তু পুলিশ, গোয়েন্দা বাহিনী এবং আমরা কোথাও একটা আইএস জঙ্গি খুঁজে পাইনি।’

তবে আইএস’র নামে দেওয়া বিভিন্ন বিবৃতি বা দাবি সত্য, নাকি বিভ্রান্তিকর, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, কোনো সন্দেহকে তদন্তের জন্য অমূলক ভাবা হচ্ছে না। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে আইএসের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গত শনিবার ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে অবস্থান জোরদারের তৎপরতা চালাচ্ছে।


ব্লগার রাজীব হত্যায় নিজেদের নির্দোষ দাবি আসামিদের

এদিকে ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যা মামলায় আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চেয়েছেন আসামিরা। রাজীব হত্যার বিষয়ে তারা কিছুই জানতেন না বলে আদালতকে জানিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩’এ আত্মপক্ষ সমর্থন করে এ মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত সাতজন আসামি এ দাবি করেন।

তাঁরা হলেন মুফতি জসীম উদ্দিন রাহামানী, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ফয়সাল বিন নাইম, মাকসুদুল হাসান, এহসানুর রেজা, নাঈম সিকদার, নাফিজ ইমতিয়াজ, সাদমান ইয়াছির মাহমুদ ও রেদোয়ানুল আজাদ ওরফে রানা। এঁদের মধ্যে রেদোয়ানুল আজাদ পলাতক। এঁরা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য।

২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পল্লবীর কালশীর পলাশনগরে বাসার সামনে রাজীব হায়দারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পল্লবী থানায় হত্যা মামলা হয়। গত বছরের ২৯ জানুয়ারি আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দেয় ডিবি। এতে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আটজনকে আসামি করা হয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।