ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহে হয়রানীর আশংকা, উকিল নোটিস

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.03.01
BD-tenant ব্যক্তিগত তথ্য পুলিশের কাছে দিতে কিছুটা অস্বস্তি এবং ভয়ের মধ্যে পড়েছে ভাড়াটিয়ারা।
বেনার নিউজ

অপরাধ দমন এবং নগরবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকার নাগরিকদের তথ্যভাণ্ডার তৈরি করছে বাংলাদেশের পুলিশ। এ লক্ষ্যে আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে সকল বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে জানানো হয়েছে। তবে নগরবাসীর মধ্যে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। পরিস্থিতি আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে।

নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের এ কাজ থেকে পুলিশকে ‍বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়ে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।  তবে এর মাধ্যমে নাগরিকরা কোন ধরনের হয়রানির শিকার হবেন না বলে আশ্বস্ত করছে পুলিশ।


বাসায় বাসায় ফরম

এক সংবাদ সম্মেলনে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে ঢাকা পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “রাজধানীর সব বাসায় ফরম পাঠানো হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে অনেক ফরম ফেরত পেয়েছি, অনেক ফরম পাইনি। আগামী ১৫ মার্চ ডেডলাইন দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, এ সময়ের মধ্যেই সকল ফরম ফেরত পাব। এরপর সেসব তথ্য ব্যাকআপের কাজ শুরু করা হবে।”

জানা যায়, এক পৃষ্ঠার ওই ফরমে ভাড়াটিয়ার ছবির পাশাপাশি তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর, ফোন নম্বর, জন্ম তারিখসহ বাসার বাসিন্দা এমনকি গৃহকর্মী ও ড্রাইভারের তথ্য চাওয়া হয়েছে।


এই কার্যক্রমের আইনি ভিত্তি জানতে চেয়ে নোটিস

এদিকে এত এত ব্যক্তিগত তথ্য পুলিশের কাছে দিতে কিছুটা অস্বস্তি এবং ভয়ের মধ্যে পড়েছে ভাড়াটিয়ারা। এর দ্বারা পুলিশের মাধ্যমে নতুন নতুন হয়রানীর আশঙ্কা করছেন তারা। সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তথ্য সংগ্রহের এই কার্যক্রমের আইনগত ভিত্তি জানতে চেয়ে পুলিশকে আইন নোটিস পাঠিয়েছেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দিতে বলা হয়েছে ওই নোটিসে। রেজিস্ট্রার ডাকে আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঢাকা মহানগর কমিশনারকে মঙ্গলবার ওই নোটিস পাঠানো হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব না পেলে যথাযথ আদালতে সুরক্ষা চাওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে ওই নোটিসে।

এ বিষয়ে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, “নাগরিক হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আইনগত সহায়তা করতে আমি তৈরি। কিন্তু পুলিশ যে সহায়তা চাইছেন, তা তাদের আইনগত এখতিয়ারে পড়ে না। এভাবে ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়ার মতো কোনো আইনি সুযোগ পুলিশের নেই।”


তথ্য অপব্যবহারের আশঙ্কা

আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, “পুলিশের হাতে যাওয়া এসব তথ্যের অপব্যবহার হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। এসব তথ্য যদি কোনো ভুল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হাতে পড়ে, তাহলে ব্যক্তির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন হহতে পারে। সংবিধানে নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার যে অধিকার দেওয়া হয়েছে। পুলিশের এ উদ্যোগে তা-ও ভঙ্গ হতে পারে।”

তাছাড়া এ বিষয়ে পুলিশের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “নাগরিকদের যেসব ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য পুলিশ যেভাবে সংগ্রহ করছে, তা করার মতো প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ পুলিশের নেই।”


আশ্বস্ত করছে পুলিশ

নাগরিকদের উদ্বেগ আঁচ করে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তাদেরকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। নাগরিকদের এই বিভ্রান্তি ও সংশয় দূর করতে গিয়ে তিনি বলেন, মানুষ মনে করছে, এসব তথ্য দিয়ে ভবিষ্যতে পুলিশি হয়রানির শিকার হবেন। তবে এই তথ্য আমরা নিচ্ছি নগরবাসীর নিরাপত্তা বিধানের জন্য। ”

তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, “এই তথ্য সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকবে, সংরক্ষিত থাকবে। অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। এতে একটি মহল্লাতে কারা বসবাস করে, কারা বাড়ির মালিক, কারা দোকানের মালিক, কারা প্রতিষ্ঠানের মালিক আর কারা ভাড়াটিয়া- তাদের তথ্য আমাদের কাছে সংগৃহীত থাকবে।”

বিষয়টি আরো ব্যাখ্যা করে সাম্প্রতিক ঢাকার বিভিন্ন এলাকার কয়েকটি বাসায় অভিযান চালিয়ে বিস্ফোরক ও জঙ্গি গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আছাদুজ্জামান বলেন, “এসব ঘটনার প্রত্যেকটিতে দেখেছি, ১/২ মাস আগে মিথ্যা নাম নিয়ে ওসব বাসা ভাড়া নেওয়া হয়। সেসব মিথ্যা পরিচয়ে অপরাধ করার চেষ্টা হয়। অপরাধ করার পর তারা দূরে কোথাও গিয়ে আবারও বাসা ভাড়া নেয়।”


পুলিশের প্রতি অনাস্থাই দায়ী!

জনগণের স্বার্থে এসব তথ্য সংগ্রহ করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও পুলিশকেই উপদ্রব ভাবছে জণগণ। আর এর জন্য পুলিশের ইমেজকেই দায়ী করছেন তারা।  

এ বিষয়ে রাজধানী উত্তরা এলাকার আতিকুর রহমান নামের একজন ভাড়াটিয়া বেনারকে বলেন, “নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের তথ্য সংগ্রহ ইতিবাচক। তবে আমাদের দেশে পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে মানুষের ভীতি রয়েছে। এদেশে পুলিশ মানেই হয়রানী। সাধারণ নাগরিকদের গোপন তথ্য পেয়ে অপরাধ দমনের চেয়ে তাদেরকে হয়রানী করবে না, সে গ্যারান্টি কি পুলিশ দিতে পারবে? আমার মনে হয় না সেই ইমেজ বা আস্থা আজও বাংলাদেশের পুলিশ অর্জন করতে পেরেছে। তাই এভাবে তথ্য সংগ্রহ করার উদ্যোগ সময়োপযোগী নয় বলে আমি মনে করি।”


নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিট পুলিশ

এদিকে পরিধি ও জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজধানীকে নিরাপদ করতে গত বছরের নভেম্বর থেকে বিট পুলিশিং কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সারা রাজধানীতে মোট ২৮৭টি বিট সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব বিটের প্রতিটিতে একজন উপপরিদর্শকের (এসআই) নেতৃত্বে অন্যান্য পদমর্যাদার পুলিশ সদস্য থাকবে।

এ বিষয়ে গত সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “অপরাধ দমনে নির্দিষ্ট কোনো এলাকার কমিউনিটিকে একজন পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্বে যুক্ত করে পরিচালিত কার্যক্রম বা নীতি হচ্ছে বিট পুলিশিং। কমিউনিটির সকল মানুষকে একীভূত করে মত বিনিময় করা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তাবায়নে, অপরাধ দমনে এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রমে মাধ্যমে সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের মাধ্যমে একটি টেকসই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সৃষ্টি করাই বিট পুলিশিং এর উদ্দেশ্য”।

তিনি জানান “বিটের অফিসারের কাজ হচ্ছে ওই বিটের প্রত্যেকটি মানুষকে চেনা- উঠান বৈঠকের মাধ্যমে, ব্যক্তি যোগাযোগের মাধ্যমে, ছোট ছোট বৈঠকের মাধ্যমে সবার সাথে পরিচিতি হওয়া এবং তথ্য বিনিময় করা।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।