শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত ও শিবিরের সাজ্জাদকে ফেরত পাঠাচ্ছে ভারত
2016.02.26
বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে ফিরিয়ে দিতে সম্মত হয়েছে ভারত। একই সঙ্গে ওই দেশটির কারাগারে বন্দী চট্টগ্রামের রোমহর্ষক আট খুন মামলার আসামি সাজ্জাদ হোসেনকেও ফেরত দেওয়া হবে।
তবে দুই দেশের মধ্যে থাকা বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তির বাইরে ওই দুই অপরাধীকে ফিরিয়ে দিতে চায় ভারত। এর আগে গত বছরের ১০ নভেম্বর বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার নেতা অনুপ চেটিয়া ও তার দুই সহযোগিকে চুক্তির বাইরে ফেরত দিয়েছে বাংলাদেশ।
এর একদিন পর নারায়নগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনও বাংলাদেশে এসেছে চুক্তির বাইরে। এবারও দুই সন্ত্রাসী আসছে একই প্রক্রিয়ায়। দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও খুব শিগগির তারা ফিরছেন বলে সরকারের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
গত নভেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ৩৬ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামের তালিকা তুলে দেওয়া হয় ভারতের কাছে। ওই তালিকায় সাজ্জাদ ও সুব্রতর নাম রয়েছে।
সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, ঢাকায় পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পাঠানো এক চিঠিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাজ্জাদ ও সুব্রত বাইনকে ভারত সুবিধাজনক তারিখ ও সময়ে ফেরত পাঠাতে চায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ইতিমধ্যে সম্মতি দিয়েছে।
তবে দুই মন্ত্রণালয়ের কোনও কর্মকর্তা এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। পুলিশ সদর দপ্তরের কাছেও এ-সংক্রান্ত নেই।
“এটা সরকারের নীতি নির্ধারনী পর্যায়ের বিষয়। তাদের দেশে ফেরার বিষয়টি পুলিশ সরাসরি দেখছে না। অন্যদের মতো পুলিশও এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুনছে,” বেনারকে জানান পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র এবং অতিরিক্ত উপ মহাপরিদর্শক (এডিশনাল ডিআইজি) নজরুল ইসলাম।
দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ
চট্টগ্রামের আট খুন মামলার আসামি ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের দুর্ধর্ষ ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন খানকে চার বছর ধরে দেশে আনার চেষ্টা চলছে।এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চিঠি চালাচালি চলছে।
সাজ্জাদ ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে মো. আবদুল্লাহ বলে পরিচিত। আবার বাংলাদেশ থেকে পাঠানো প্রস্তাবে তাঁর নাম কোথাও সাজ্জাদ খান আবার কোথাও সাজ্জাদ হোসেন খান উল্লেখ আছে।
পুলিশের সূত্র বলেছে, ২০০০ সালের ১২ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটে মাইক্রোবাস থামিয়ে ছাত্রলীগের ছয় নেতা-কর্মীসহ আটজনকে গুলি করে হত্যা করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা। ওই মামলায় সাজ্জাদসহ চারজনের মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
২০০৮ সালের ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের একটি আদালত এ রায় ঘোষণার আগেই সাজ্জাদ দুবাই পালিয়ে যান। পরে হাইকোর্টে তিনি খালাস পান।
এর আগে ২০০১ সালের ২ এপ্রিল সাজ্জাদ একে-৪৭ রাইফেলসহ চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এর বছর দেড়েক পর জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে দুবাই চলে যান। অস্ত্র আইনের মামলায় তাঁকে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
২০১২ সালের ৭ নভেম্বর ভারতের পাঞ্জাবের অমৃতসরে গ্রেপ্তার হন সাজ্জাদ। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে বার্তা পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
ঢাকায় পুলিশের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, সাজ্জাদ এখন আর দেশে ফিরতে চান না। তিনি পাঞ্জাবে বিয়ে করেছেন। একটি সন্তানও আছে। ভারত থেকে সাজ্জাদকে ফিরিয়ে আনার সময় সেখানকার মানবাধিকার সংস্থাগুলো সাজ্জাদের স্ত্রী-সন্তানের বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আলোচিত সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন
তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন দেশে নেই। কিন্তু তাঁর নামে চাঁদাবাজি হয় বাংলাদেশে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী এবং সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের কাছে তিনি খুবই পরিচিত।
কলকাতায় ২০০৮ সালের ১১ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন। অবৈধ অনুপ্রবেশ ও অস্ত্র রাখার দায়ে মামলা হয তাঁর বিরুদ্ধে।
সুব্রত কলকাতায় গা ঢাকা দিয়ে ফোনের মাধ্যমে বাংলাদেশে নিয়মিত চাঁদাবাজি করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি কলকাতায় নিজেকে ‘ফতে আলী’ হিসেবে পরিচয় দিতেন।
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, “সুব্রত বাইন বাংলাদেশের একজন কুখ্যাত অপরাধচক্র নেতা । তাকে সচরাচর 'শীর্ষ সন্ত্রাসী' হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকায় কমপক্ষে ৩০টি খুনের মামলা রয়েছে।”
২০০১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় যে ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছির সুব্রত বাইন তাদের অন্যতম।
সুব্রত বাইনের বাবার নাম বিপুল বায়েন । মা কুমুলিনি বায়েন। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। তিনটি বিয়ে করেছেন। বাংলাদেশে দুটি, পশ্চিমবঙ্গে একটি। তার প্রথম স্ত্রীর নাম লুসি। সেই ঘরে তার দুই সন্তান। দ্বিতীয় স্ত্রী সুইটির সঙ্গে তার ডিভোর্স হয়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া এলাকার মেয়ে জামেলা খাতুন তার তৃতীয় স্ত্রী।
১৯৮৭ সাল থেকে মগবাজার কেন্দ্রিক আন্ডারওয়ার্ল্ডে বিচরণ করতে শুরু করেন সুব্রত বাইন। রফিক মার্ডার দিয়ে খুনাখুনিতে জড়ান সুব্রত। এরপর একে একে ট্রিপল, ডাবল মার্ডার।
১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদকে হত্যার মধ্য দিয়ে নামকরা সন্ত্রাসী হিসাবে সুব্রত বাইনের অভিষেক হয়। ২০০৩ পর্যন্ত সুব্রত বাইন ছিল ঢাকার অপরাধ জগতের প্রভাবশালী চক্র সেভেন স্টার গ্রুপের প্রধান। ২০০৩ সালের দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর তৎপরতা বেড়ে গেলে সুব্রত ভারতে পালিয়ে যান।