একটি পরিবারে একটি বা দুটি গাড়ি, আইন হচ্ছে

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.02.11
BD-traffic সড়ক না বাড়লেও সরকারি হিসেবে প্রতিদিন রাজধানীতে প্রায় ১৫০টি নতুন গাড়ি নামার ফলে অসহনীয় যানজটে নাকাল হচ্ছে নগরবাসী।
বেনার নিউজ

চাইলেই একটি পরিবার যত খুশি তত গাড়ি রাখতে পারবে না। প্রতিটি পরিবার কয়টা গাড়ি রাখতে পারবে, তার সীমা নির্ধারণের প্রস্তাব করে আইন তৈরি করা হচ্ছে।

ঢাকাসহ বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে যানজট নিরসনে এই আইন করা হচ্ছে। সড়ক না বাড়লেও সরকারি হিসেবে প্রতিদিন রাজধানীতে প্রায় ১৫০টি নতুন গাড়ি নামার ফলে অসহনীয় যানজটে নাকাল হচ্ছে নগরবাসী।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্র জানায়, রাজধানীসহ বড় শহর সচল রাখতে ও আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে চায় সরকার। আইনে পরিবারপ্রতি সর্বোচ্চ দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হতে পারে।

এ ছাড়া ছোট গাড়ি নিয়ন্ত্রণে সপ্তাহের একেক দিন জোড়-বিজোড় নিবন্ধন নম্বর হিসেবে চলাচলের চিন্তা রয়েছে। তবে সরকারি কাজে ব্যবহার করা গাড়ি এ পদ্ধতির বাইরে থাকবে। ওই সব গাড়ির নম্বর প্লেট বিশেষ রঙের করা হবে, যাতে সহজে চেনা যায়।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ঢাকার স্বতন্ত্র সাংসদ হাজি সেলিমের এ-সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “একটি পরিবারে একটির বেশি গাড়ি ব্যবহার করা যাবে না—এখন পর্যন্ত এমন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।”

তবে মোটর ভেহিক্যাল অরডিন্যান্স ১৯৮৩-এর পরিবর্তে দুটি ভিন্ন আইন প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, এর একটি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ আইন, অন্যটি সড়ক পরিবহন আইন। খসড়া সড়ক পরিবহন আইনে পরিবার-প্রতি গাড়ির সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

“একই পরিবারে ৫ থেকে ৭টি ব্যক্তিগত গাড়ি আছে, যা অস্বাভাবিক। এ জন্য পরিবার-প্রতি গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনার কথা ভাবা হচ্ছে। একটি পরিবার সর্বোচ্চ কয়টা গাড়ি রাখতে পারবে, আলোচনার ভিত্তিতে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে,” বেনারকে জানান বিআরটিএর চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম।


যানজটের মূল সমস্যা প্রাইভেট কার

বিআরটিএ’র হিসেবে, ঢাকায় প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। ২০১২ সালে ৮ হাজার ১৮৭টি, ২০১৩ সালে ৯ হাজার ২৩১টি, ২০১৪ সালে ১২ হাজার ৯৭২টি এবং ২০১৫ সালে ১৮ হাজার ৪২২টি প্রাইভেট কার নিবন্ধন দেওয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট ও বেসরকারি নর্দান ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের যৌথ সমীক্ষায় দেখা যায়, রাজধানীতে বছরে যানজটের কারণে নষ্ট হয় ১১ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকার জ্বালানি। রাজধানীর ৭৩টি মোড়ে দিনে গড়ে নষ্ট হয় ৮৩ লাখ কর্মঘণ্টা। বছরে এ ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ৭৩ হাজার কোটি টাকা।

প্রাইভেট কারকে এ শহরের যানজটের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বুয়েটের হিসাব অনুযায়ী, রাজধানীতে সড়কের তুলনায় গাড়ির চাপ দ্বিগুণ। নিয়মানুযায়ী এ শহরে ২৫ শতাংশ সড়ক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৮ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরে পর্যাপ্ত গণপরিবহনের অভাব রয়েছে। সিএনজিতে চলায় এখন গাড়ির জ্বালানি খরচও অনেক কম। এ সুযোগে মধ্যবিত্তদের অনেকেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনছেন।

বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট পরিচালিত সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, এমনিতেই একটি শহরের আয়তনের তুলনায় যে পরিমাণ রাস্তা থাকা প্রয়োজন, ঢাকা শহরে তার তিন ভাগের এক ভাগও নেই। ব্যক্তিগত গাড়ি বেড়ে যাওয়ায় রাস্তায় পার্কিং-সুবিধা দিতে গিয়ে নাগরিকের চলাচলের জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়ছে।  

বিআরটিএ’র হিসাবে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে গাড়ি চলাচল করছে ৯ লাখ ৪৮ হাজার ৮৮৩টি। এর মধ্যে প্রাইভেট কারই ২ লাখ ২৩ হাজার ২৩৯টি। আর সারা দেশে প্রাইভেট কারের সংখ্যা ২ লাখ ৮৮ হাজার ২৩৭টি।

“ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের লাগাম টেনে ধরার সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া উচিত ছিল,” বেনারকে জানান পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল হক।

তাঁর মতে, রাজধানীতে গাড়ির বাড়তি চাপের কয়েকটি কারণের অন্যতম হলো পরিবহন ক্ষমতার ঘাটতি। এ কারণে ছোট গাড়ি বাড়ে, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে যানজট। যানজট বাড়লে বড় গাড়ির পরিবহন ক্ষমতা কমে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।