মানবপাচার রোধে ৭ বিভাগে ৭ ট্রাইব্যুনাল করছে বাংলাদেশ
2015.05.27
মানব পাচার অপরাধের দ্রুত বিচারে বাংলাদেশের সাত বিভাগে সাতটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হচ্ছে। ‘মানব পাচার অপরাধ দমন’ নামের এই ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য ইতিমধ্যে জনপ্রশাসন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ে এই প্রস্তাব পাঠিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।
এতথ্য নিশ্চিত করেছেন স্বয়ং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এসব ট্রাইব্যুনাল চালানোর জন্য কোনো বিধি প্রণয়নের প্রয়োজন হলে তাও করা হবে বলে জানান তিনি।
সাগরপথে মানবপাচার নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তোলপাড়ের মধ্যেই পাচার ঠেকাতে এই ট্রাইব্যুনাল গঠনের পরিকল্পনার কথা জানাল সরকার।
বুধবার আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন অনুযায়ী বিশেষ এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হচ্ছে। এ ট্রাইব্যুনাল গঠনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আমরা আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠিয়েছি।”
তিনি বলেন, সাত বিভাগে একটি করে ট্রাইব্যুনাল হবে। জেলায় জেলায় না হয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে মানবপাচারের মামলাগুলোর বিচার হলে ভিকটিকমদের বিচার পাওয়া সহজ হবে।
বর্তমানে এ সংক্রান্ত মামলা সংশ্লিষ্ট জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হচ্ছে।
২০১২ সালের মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের ২১ (২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘ট্রাইবুনাল গঠন না হওয়া পর্যন্ত সরকার প্রত্যেক জেলার নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনালকে ওই জেলার মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল হিসেবে নিয়োগ করতে পারবে। এ আইনের অধীনে সংঘটিত কোনো অপরাধের অভিযোগ গঠনের ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে।’
মানবপাচার আইনে সংঘবদ্ধভাবে মানবপাচারের অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং সর্বনিম্ন সাত বছর কারাদণ্ড । মানবপাচার মামলার বিচারে এ আইনে দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারককে নিয়ে যে কোনো জেলায় ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথাও বলা আছে।
তবে জেলার চেয়ে বিভাগীয় আদালতে বিচার পাওয়া সহজ হবে বলে উল্লেখ করেন আইন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “সিন্ডিকেটের কারণে যে জেলায়, যে গ্রামে, যে জায়গায় এসব অপরাধ হয় সেই জায়গায় বিচার হলে ভিকটিমরা সঠিক বিচার নাও পেতে পারে।
মানবপাচার নিয়ে বর্তমানে ৫৫৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২৫৭টি মামলায় অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে, বিচার হয়েছে ১২টি মামলার।
মানবপাচার দমনে সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশে বেসরকারিভাবে বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রাও বলছে, যেকোন মূল্যে মানব পাচারকারীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। বন্ধ করতে হবে মানব পাচার।
এ বিষয়ে বায়রার ভাইস প্রেসিডেন্ট এএইচএম গোলাম কিববিয়া বেনারকে বলেন, আমরা বৈধভাবে জনশক্তি রপ্তানির ব্যবসা করি। আমরা চাই অবৈধভাবে শ্রমিক যাওয়া বন্ধ হোক। এর জন্য পাচারকারীদের শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। মানব পাচার অপরাধের বিচারে সরকারের বিভাগীয় ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সময়পোযোগী। তবে আসল অপরাধীরা যাতে বিচারের মুখোমুখি হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় হিতে বিপরীতও হতে পারে।
সরকারের এ উদ্যোগকে ‘পজিটিভ’ বলছেন অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোও। তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ)-এর নির্বাহী পরিচালক ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, সরকারের এ উদ্যোগকে আমরা ‘পজিটিভ’ হিসেবে নিচ্ছি। পাচারকারী চক্রের হোতাদের দুষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। যাতে আর কেউ এ ধরণের ঘৃণ্য কাজ করার সাহস না পায়। এবং দ্রুত এসব মামলার বিচার শেষ করতে হবে।