হত্যা ও ধর্ষণের দায়ে রাজাকার ফোরকানের ফাঁসি
2015.07.16
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে পটুয়াখালীর রাজাকার ফোরকান মল্লিককে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তার বিরুদ্ধে তিন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা, এক নারীকে ধর্ষণের পর খুন এবং অন্য এক নারীকে দল বেঁধে ধর্ষণে জড়িত থাকার দায়ে এই মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেয়া হয়।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের ২০টি মামলার রায় দিলেন দুই ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ১১টি মামলার রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-২। ট্রাইব্যুনাল-১ রায় ঘোষণা করেছেন নয়টি মামলার।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ বৃহস্পতিবার এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। এতে বলা হয়, ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে গঠন করা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে তিনটি প্রমাণিত হয়েছে।
এর মধ্যে তৃতীয় ও পঞ্চম অভিযোগে তাঁকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। চতুর্থ অভিযোগে দেওয়া হয় আজীবন কারাদণ্ড। প্রথম ও দ্বিতীয় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এই দুটি অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
রায় ঘোষণার সময় পাঞ্জাবি ও লুঙ্গি পরা ফোরকান এজলাসে আসামির কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। গত বছরের ২৫ জুন গোয়েন্দা পুলিশ বরিশালের রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ফোরকানকে গ্রেপ্তার করে।
রায়ে বলা হয়, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ছইলাবুনিয়া গ্রামের ফোরকান মল্লিক (৬৩) একাত্তরে মুসলিম লীগের সমর্থক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি অন্যদের নিয়ে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠন করেন।
মুক্তিযুদ্ধকালে সুবিদখালী বাজারের ডা. দেবেন্দ্রনাথ সরকারের বাড়িতে থানা শান্তি কমিটি ও সুবিদখালী পুরোনো হাসপাতাল ভবনে রাজাকারদের প্রধান ক্যাম্প স্থাপন করে ফোরকান মির্জাগঞ্জ থানার বিভিন্ন এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় দেবেন্দ্রনাথ সরকার হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ও এই মামলার সাক্ষী শান্তি রঞ্জন দে বেনারকে বলেন, “এই রায় দ্রুত কার্যকরের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।”
রায়ের প্রতিক্রিয়া
রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মোখলেছুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে সরাসরি জড়িত ছিল—এমন একজন আসামির সাজা হলো। আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট।”
ফোরকানের আইনজীবী আবদুস সালাম খান বেনারকে বলেন, “এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। পারিবারিক শত্রুতাবশত এই মামলা করা হয়েছিল।”
রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন কি না—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “আপিল করার মতো আর্থিক সংগতি তাঁর নেই। তারপরও আমরা তাঁর পরিবারকে আপিল করার পরামর্শ দিয়েছি।”
রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি
ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায়ে সন্তোষ ও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন পটুয়াখালীবাসী। তাঁরা এ রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন।
রায় শুনে শহীদ আবদুল কাদের জমাদ্দারের সহধর্মিণী রাজিয়া বেগম টেলিফোনে বেনারকে বলেন, ‘এই রায়ে আমি স্বামী হত্যার বিচার পাইছি। এত দিন আমি এ কথা শোনার অপেক্ষায় ছিলাম।”
মির্জাগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. ওয়াজেদ আলী স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, “এ রায়ে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা সবাই সন্তুষ্ট, খুশি।”
গনজাগরণ মঞ্চের সন্তোষ
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে পটুয়াখালীর যুদ্ধাপরাধী রাজাকার ফোরকান মল্লিককে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে গণজাগরণ মঞ্চ।
মিছিল পরবর্তী এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণজাগরন মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, “গণজাগরণ মঞ্চ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করছে। এই রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দিকে আরেকধাপ এগিয়ে গেলো বাংলাদেশ। এই রায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪৪ বছর পর শহীদ পরিবারের সদস্যরা কিছুটা হলেও স্বস্তি বোধ করবেন। যাবতীয় আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে অবিলম্বে এই রায় কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি”।
তিনি আরো বলেন, “আমরা দেখছি, আল বদর মুজাহিদের বিচারিক কার্যক্রম দীর্ঘদিন আগে শেষ হলেও এখনো তার রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশিত হয়নি, যার কারণে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। রাজাকারদের সাজা কার্যকরে অযাচিত কালবিলম্ব অত্যন্ত হতাশাজনক। আমরা অবিলম্বে আল বদর মুজাহিদের মৃত্যুদন্ডের রায় কার্যকরের দাবী জানাই”।