বিএনপির সেনা মোতায়েনের দাবি ইসির নাকচ
2015.12.22

পৌরসভা নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনে বিএনপির দাবি নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিএনপি গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানায়।
“নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের মতো কোনো পরিস্থিতি এখনো সৃষ্টি হয়নি,” সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।
এদিকে সাংবাদিকদের জন্য পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন, যার মূল কথা হচ্ছে, প্রিসাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কোনো সাংবাদিক ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না।
এর আগে ১৯ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা বৈঠকের সিদ্ধান্তে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমতি পাওয়া সাংবাদিকেরা ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ ও গণনা দেখতে পারবেন।
ওই সভায় ভোটের সংবাদ প্রচারে কড়াকড়ি আরোপের প্রস্তাব করেছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা।
গত ২৮ এপ্রিল ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কিছু ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে গিয়ে পুলিশ সদস্য ও প্রার্থীর লোকজনের হাতে নাজেহাল ও হয়রানির শিকার হন অন্তত ৩০ সাংবাদিক। ওই ভোটে ব্যালটে সিল মারাসহ নানা অনিয়মের ঘটনা গণমাধ্যমে আসে।
তবে ভোটে সাংবাদিকদের বাধা ও নাজেহালের ঘটনায় ইসির তদন্ত কমিটি শেষ পর্যন্ত কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি।
ইসিতে বিএনপির প্রতিনিধিদল
বিরোধী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মইন খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সিইসি সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন।প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন দলের মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, মোয়াজ্জেম হোসেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সুজা উদ্দিন প্রমুখ।
বিএনপি সূত্র জানায়, অন্তত ৪০টি পৌরসভায় বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থীরা নির্বাচনী জনসংযোগে হামলা ও বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। মাঠে থাকলেও ভয়ে ভয়ে প্রচার চালাচ্ছেন তাঁদের সমর্থক-অনুসারীরা। ঢাকার সাভার, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জসহ কয়েকটি পৌরসভায় প্রার্থী ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন।
বিএনপির দাবি, প্রায় সব পৌরসভায় তাদের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকেরা প্রতিদিন সরকারদলীয় প্রার্থীর অনুসারীদের হামলা ও বাঁধার শিকার হচ্ছেন। এর থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও বাদ যাননি।
বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় ‘পৌর নির্বাচন-২০১৫ মনিটরিং সেল’ নামে একটি সেল খুলেছে।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর সারা দেশ ২৩৪টি পৌরসভায় নির্বাচন হবে। এতে বিএনপির প্রার্থী আছেন ২১৯টি পৌরসভায়। এর মধ্যে ৩২টি পৌরসভায় বিএনপির নেতারা দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) হয়ে লড়ছেন।
“বিএনপি সর্বশেষ নির্বাচন কমিশনে এসেছিল ৮ ডিসেম্বর। এর মধ্যে দুই সপ্তাহ কেটে গেছে। এই সময়ে আমরা মাঠপর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করেছি।মাঠে সংঘাত-হানাহানি চলছে। এমনকি গোলাগুলিও হয়েছে। বিরোধী দলের প্রার্থী-সমর্থকেরা সরকারি দলের আক্রমণের শিকার হচ্ছে,” বেনারকে জানান মইন খান।
তাঁর মতে, নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ বলে কিছু নেই। এ অবস্থায় বিরোধী দল নির্বাচনে থাকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
দলীয় পরিচয় ও প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় এবারের স্থানীয় এই নির্বাচনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে উল্লেখ করে মইন খান বলেন, “দেড় শ বছর ধরে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে ব্যক্তিকেন্দ্রিক। এবারই প্রথম দলীয়ভাবে হচ্ছে। নির্বাচনে এখন আর ব্যক্তির প্রভাব নেই। যে কারণে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সৃষ্টি হচ্ছে”।
এ প্রসঙ্গে গতকাল বিএনপির নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর গাড়িতে হামলার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
মইন খান বলেন, এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ যে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন, তার নিশ্চয়তা নেই। সে জন্য বিএনপি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে। সেটা করা হলে মানুষ নির্ভয়ে তাঁর ভোট দিতে পারবেন।
সেনা মোতায়েন না হলে বিএনপি কি নির্বাচন বর্জন করবে—এ প্রশ্নের জবাবে মইন খান কিছু বলেননি।
সর্বশেষ ২০১১ সালের ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি দেশের আড়াই শর মতো পৌরসভায় নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছিল কমিশন।
গতকাল সন্ধ্যার পর দপ্তর ছেড়ে যাওয়ার আগে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, “কমিশন মাঠ থেকে প্রতিবেদন পেয়েছে। আমরাও পর্যবেক্ষণ করছি। সেনা মোতায়েনের কোনো প্রয়োজন হবে না। ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারবেন।”
তিনি জানান, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তাঁদের ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নির্বাহী হাকিমেরা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের হাজার হাজার টাকা জরিমানা করছেন।
সাংবাদিকদের জন্য পাঁচ নিয়ম
পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে ইসির জনসংযোগ শাখার পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান সোমবার সাংবাদিকদের নির্দেশনা বিষয়ক চিঠি ২৩৪ পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছেন।
এতে বলা হয়- প্রিজাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া ভোটকক্ষে প্রবেশ করা যাবে না; সাংবাদিকরা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না; কোনো প্রকার নির্বাচনী উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করা থেকে বিরত থাকবেন; সাংবাদিকরা ভোটে প্রার্থী বা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যে কোনো ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবেন এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তার জন্যে সংবিধান, নির্বাচনী আইন ও বিধিবিধান মেনে চলবেন।
“কোনো কড়াকড়ি নেই সাংবাদিকদের জন্য। আমরা আগের নির্দেশনাগুলোই অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছি,” বেনারকে জানান ইসির জনসংযোগ শাখার পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান।
তবে ইসির এই নির্দেশনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক নেতারা।
“ইসি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে সহায়তা করবে বলে সাংবাদিক সমাজ আশা করে,” বেনারকে জানান জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী।