দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি, সব নাটকের অবসান

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.11.21
BD-warcrimes ফাঁসি কার্যকরের পর গভীর রাতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মি ও সেখানে অংশ নেয়া সাধারন মানুষ বিজয় উল্লাস করছে। ২১ নভেম্বর, ২০১৫
বেনার নিউজ

চার দশক আগে  স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ৬৮ বছর বয়সী  আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও ৬৭ বছর বয়সী  সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে তাদের ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হয় বলে জানিয়েছেন পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক। আইজি প্রিজন ও রাবের কমর্কতারাও বিষয়টি  নিশ্চিত  করে বলেছেন,  আলাদা  ফাসির  মঞ্চে এক সঙ্গে একই সময়ে ফাঁসি কাযর্কর  হয়।

একাত্তরে নির্বিচারে অসংখ্য মানুষ হত্যা করার অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে চেয়েছিলেন দুই যুদ্ধাপরাধী।

যুদ্ধকালে চট্টগ্রাম অঞ্চলে নজিরবিহীন নিষ্ঠুরতার জন্য ‘সাকা কোনো উদারতা পাওয়ার যোগ্য নয়’ বলে মন্তব্য করেছিল উচ্চ আদালত।

মুজাহিদ সম্পর্কে আপিল বিভাগ বলেছিল, এ ধরনের নিষ্ঠুরতার প্রমাণ পাওয়ার পর অপরাধী সর্বোচ্চ দণ্ড না পেলে তা হবে ন্যায়বিচারের পরিহাস।

প্রায় ৭২ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর ও নাটকীয় পরিস্থিতির অবসান ঘটেছে মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যাকারী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার মধ্য দিয়ে।

গতকাল রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের স্থায়ী ফাঁসির মঞ্চে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে তাঁদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়, যা নিয়ে মানুষের মধ্যে দ্বিধা–দ্বন্দ্ব ও সংশয় ছিল।

এর আগে অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন এ দুই মানবতাবিরোধী অপরাধী, যাঁরা একসময় বাংলাদেশের মন্ত্রী ছিলেন। তাঁরা আদৌ প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন কি না, এ নিয়ে দিনভর নাটকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। রাত ১০টার দিকে তাঁদের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

কারাগার সূত্র জানায়, রাতেই লাশ র‍্যাব-পুলিশের পাহারায় অ্যাম্বুলেন্সে করে সাকা চৌধুরীর লাশ চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর মুজাহিদের লাশ পাঠানো হয় ফরিদপুরের গ্রামের বাড়িতে। সেখানে তাঁদের লাশ দাফন করা হবে।

কারাগার সূত্র জানিয়েছে, ফাঁসি দেওয়ার পর নিয়মানুযায়ী, সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের দেহ প্রায় ২০ মিনিট ঝুলিয়ে রাখা হয়। এরপর কিছু প্রক্রিয়া শেষে কারাগারের চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

ফাঁসি কার্যকরের সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক, কারা-উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন) গোলাম হায়দার, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আসাদুজ্জামান, চিকিৎসক, ম্যাজিস্ট্রেটসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

ফাঁসির আগে কারা জামে মসজিদের ইমাম তাঁদের তওবা পড়ান। ফাঁসি দেওয়ার প্রক্রিয়ার সময় ভেতরে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন কর্মকর্তা রাতে বলেন, জল্লাদেরা সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের সেলে গিয়ে তাঁদের পিছমোড়া করে হাত বেঁধে ফেলেন। একজন জল্লাদ কালো কাপড়ের যমটুপি পরিয়ে দেন। এরপর সেল থেকে ফাঁসির মঞ্চের নিয়ে আসেন।

একপর্যায়ে লাল রুমাল ফেলে সংকেত দেন কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক। সঙ্গে সঙ্গে ফাঁসির মঞ্চের লিভার টেনে ধরেন জল্লাদ। এতে দু’জনের ফাঁসি কার্যকর হয়ে যায়।

এর আগে রাত সাড়ে আটটার দিকে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের পরিবারের সদস্যদের দেখা করার জন্য খবর দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। রাত নয়টার সাকা চৌধুরীর ও মুজাহিদের স্বজনেরা কারাফটকে যান। এর কিছুক্ষণ পর তাঁরা কারাগারের ভেতরে ঢোকেন।

জাতীয় রাজনীতিতে বহু বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচনার জন্ম দেওয়া সাকা চৌধুরী ১৯৭৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ছয়বার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। মুসলিম লীগ থেকে রাজনীতি শুরু করেন, পরে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। এইচ এম এরশাদের সামরিক শাসনামলে তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

সর্বশেষ সাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। প্রায় চার দশকের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি বারবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন মূলত ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে ভরা কথার জন্য।

মুক্তিযুদ্ধকালে সাকা চৌধুরী কাজ করতেন পাকিস্তানি দখলদার সেনাদের সহযোগী হিসেবে। তাঁর বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী ছিলেন কনভেনশন মুসলিম লীগের সভাপতি ও পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার।

অন্যদিকে মুজাহিদ ছিলেন বিএনপি–জামায়াত জোট সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী। মন্ত্রী হিসেবে জাতীয় পতাকাবাহী গাড়ি নিয়ে এই যুদ্ধাপরাধীর চলাচল মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভ ও ঘৃণা সৃষ্টি করেছিল।

এর আগে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রথম ফাঁসি কার্যকর করা হয় জামায়াতের এক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার। এরপর চলতি বছরের ১১ এপ্রিল জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর হয়।


প্রাণভিক্ষা নিয়ে দিনভর নাটকীয়তা

সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন বলে সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও তাঁদের পরিবার ও দল বলছে, উল্টো কথা।

সাকার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাঁদের জানামতে সাকা চৌধুরী প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন না। গণমাধ্যমে শোনা ‘প্রাণভিক্ষা’ চাওয়ার তথ্য তাঁরা বিশ্বাস করেন না।

আবার মুজাহিদের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এসবই গুজব’। বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকেও একই রকম কথা বলা হয়েছে।

গত বুধবার সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের করা ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। গত বৃহস্পতিবার সেই রায়ের অনুলিপি কারাগারে পৌঁছায় এবং বৃহস্পতিবার রাতেই সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদকে রায় পড়ে শোনানো হয় বলে কারাগারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

রায়ের অনুলিপি কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই ‘তাঁরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কী না’ বিষয়টি আলোচিত হচ্ছিল। শুক্রবার কারা কর্মকর্তারা জানান, ওই দিন একাধিকবার তাঁদের কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়, কিন্তু তাঁরা কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।

গতকাল সকাল থেকেই সংবাদকর্মীরা পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দীন সড়কে কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে ভিড় জমান। তবে কারাগারের ভেতরে কী হচ্ছে সে বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে দিনভর কিছু বলেননি। মুঠোফোনে সংগৃহীত ভাসা ভাসা খবরই ছিল সবার ভরসা।

গতকালও কারাগারের সামনে ছিল অতিরিক্ত নিরাপত্তা। নাজিমউদ্দীন সড়কে সকাল থেকেই পুলিশ যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত করে দেয়।

সাকা ও মুজাহিদ প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কী না বা করেছেন কী না—সে প্রশ্নটিরই উত্তর খুঁজে ফিরছিলেন গণমাধ্যমকর্মীরা।

প্রায় ঘণ্টা দেড়েক এরকম পরিস্থিতির পরে বেলা তিনটার পরে প্রথমে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।


গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গুলশানের বাসভবনে আইনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯ এ মহামান্য রাষ্ট্রপতির যে ক্ষমা করার ক্ষমতা সেই ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য তাঁরা আবেদন করেছেন।


মুজাহিদ প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে যে কথা বলা হয়েছে তা গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ছেলে আলী আহাম্মদ মাবরুর বলেন, তাঁর বাবা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন বলে যে খবর ছড়ানো হচ্ছে তা গ্রহণযোগ্য নয়।

রাতে শেষ দফা পরিবারের সদস্যরা মিলে সাকা চৌধুরীর সাথে কারাগারে সাক্ষাত শেষে তার আরেক ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, ‘আমার বাবা প্রাণভিক্ষা চাননি, তিনি বলেন বাজে কথা কে বলেছে?’

গতকাল এক বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান বলেছেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে কারা অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার আবেদনের যে খবর প্রচারিত হচ্ছে তা অসত্য ও বিভ্রান্তিকর।
জামায়াত সোমবার সারাদেশে হরতালের ডাক দেয়।


বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে মুজাহিদের ফাঁসি

মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঢাকার মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (বর্তমানে শারীরিক শিক্ষা কলেজ) ক্যাম্প স্থাপন করে পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার ও আলবদর বাহিনী। আলবদর নেতা মুজাহিদ নিয়মিত ওই ক্যাম্পে যাতায়াত করতেন এবং পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে বুদ্ধিজীবী ও বাঙালি নিধনের পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করতেন। ওই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় একাত্তরের ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় বুদ্ধিজীবী নিধন।

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিধনের পরিকল্পনার দায়ে ৪৪ বছর পর ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হলো মুজাহিদকে।

২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে মুজাহিদকে ফাঁসির আদেশ দেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও একই অভিযোগে ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন। বাকি ছয়টি অভিযোগে জেল বা খালাস হয় তাঁর।

আপিল বিভাগ রায়ে বলেন, মুজাহিদ প্রথমে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র সংঘের ফরিদপুর শাখার সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র সংঘের সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি যে ছাত্র সংঘকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই ছাত্র সংঘ পরে আলবদর বাহিনীতে পরিণত হয়। তখন তিনি আলবদর বাহিনীর নেতা হয়ে যান।

আলবদরের ঊর্ধ্বতন নেতা হিসেবে অধীনস্থ বাহিনীর অপরাধের দায়ভার মুজাহিদকে নিতে হবে। নেতা হিসেবে এ দায় তিনি কিছুতেই এড়াতে পারেন না।


গণহত্যার দায়ে সাকার ফাঁসি

একাত্তরের ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যাসহ চারটি অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে। এর মধ্যে দুটি অভিযোগ গণহত্যার।

২০১২ সালের ৪ এপ্রিল সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৩টি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই ২৩ অভিযোগের মধ্যে নয়টিই ছিল গণহত্যার। ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের রায়ে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে নয়টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে চারটিতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও পাঁচটিতে নানা মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয় তাঁকে। বাকি ১৪টি প্রমাণিত না হওয়ায় তিনি খালাস পান।

যে চারটি অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে ফাঁসি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল, আপিল বিভাগও সে রায় বহাল রাখেন। তৃতীয় অভিযোগ অনুসারে, একাত্তরের ১৩ এপ্রিল সকালে সাকা চৌধুরী পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে রাউজানের গহিরা গ্রামের কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নূতন চন্দ্র সিংহের বাড়িতে অভিযান চালান। মন্দিরে প্রার্থনারত নূতন চন্দ্রকে টেনেহিঁচড়ে বের করার পর সাকা চৌধুরী পাকিস্তানি সেনাদের বলেন, ‘একে হত্যার জন্য বাবার (ফজলুল কাদের চৌধুরী) নির্দেশ আছে।’

পাকিস্তানি সেনারা গুলি করলে নূতন চন্দ্র আহত অবস্থায় কাতরাতে থাকেন, তখন সাকা চৌধুরী নিজে গুলি করে নূতন চন্দ্রের মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১৩ এপ্রিল দুপুরে সাকা চৌধুরী পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে রাউজানের সুলতানপুর গ্রামের বণিকপাড়ায় গিয়ে গণহত্যা চালান এবং বাড়িঘরে আগুন দেন।

ষষ্ঠ অভিযোগ অনুসারে, একাত্তরের ১৩ এপ্রিল বিকেলে সাকা চৌধুরী পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে রাউজানের হিন্দু-অধ্যুষিত ঊনসত্তরপাড়া গ্রামে সশস্ত্র অভিযান চালান। এলোপাতাড়ি গুলিতে ৬০-৭০ জন নিহত হয়।

অষ্টম অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ১৭ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতায় সাকা চৌধুরী চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহমেদ ও তাঁর ছেলে শেখ আলমগীরকে অপহরণ করার পর হত্যা করেন।


সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবি

ফাঁসি কার্যকর করায় সন্তোষ প্রকাশ করে তাঁদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানিয়েছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

“এই দুই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়েই ট্রাইব্যুনালকে তাঁর দায়িত্ব শেষ করলে হবে না। তাঁরা মন্ত্রী-সাংসদ হয়েছেন। বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের উচিত যুদ্ধাপরাধীদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে শহীদ পরিবারগুলোকে দিয়ে দেওয়া,” বেনারকে জানান শাহরিয়ার কবির।

ফাঁসি কার্যকর করার দাবিতে গতকাল শনিবার দিনভর এবং রাতে শাহবাগে অবস্থান করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা। কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনেও মঞ্চের অনেক কর্মি ফাঁসি হওয়া পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে শ্লোগান দিয়ে যায়। সারাদিন শাহবাগে শ্লোগান, আবৃত্তি, জাগরণের গান, বক্তৃতা, ফুলের আলপনা, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন হয়েছে।

ফাঁসি কার্যকরের পর গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, “সাকা-মুজাহিদের ফাঁসির মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদ পরিবারের আত্না আজ শান্তি পাবে, সাধারন মানুষের কাছে এটা একটা বড় বিজয়ের দিন”।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।