বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বন্যা আহমেদ

বেনার নিউজ প্রতিবেদন
2015.12.02
BD-bonya সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত ব্লগার অভিজিতের স্ত্রী বন্যা আহমেদ মারাত্নক আহত অবস্থায়।
এএফপি

গত ফেব্রুয়ারিতে বইমেলার সময় লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায়কে মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে। সে সময় তার স্ত্রী রাফিদা বন্যা আহমেদকেও মারাত্নকভাবে আঘাত করা হয়, ঘটনাক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। ওয়াশিংটন ডিসিতে মঙ্গলবার বন্যা যুক্তরাষ্ট্রের হিউম্যান রাইটস কমিশনের এক শুনানীতে বক্তব্য রাখার আমন্ত্রন পান।

সেখানে তিনি বলেন, “ বাংলাদেশে এই সময়ে হত্যাকান্ড নিয়মিত ঘটনা হয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতি মাসেই ইসলামী সন্ত্রাসীরা সেকুলার ব্লগার, লেখক ও প্রকাশকদের উপর হামলা চালিয়ে তাদেরকে হত্যা করছে। এবং তা প্রকাশ্যে হাজার হাজার মানুষের সামনে এমনকি বাসায় ও অফিসে”।

বন্যা বলেন, “ একই রকম আক্রমনে ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন অনত দাস, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, নীলাদ্রি চট্টপাধ্যায় এবং ফয়সল আরেফিন দিপন”।

তারমতে, ব্লগার হত্যাকারীদের ধরা হচ্ছে না ও তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা যাচ্ছে না বলে তারা এখন বিদেশী ও সংখ্যালঘুদের উপর হামলা চালিয়ে হত্যাকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি সরকারকে দোষারোপ করলেন, এইসবের কোনো প্রতিকার না করার জন্য।

বন্যা আহমেদ আরো বলেছেন, বাংলাদেশে যে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসের উত্থান হয়েছে, রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ সরকার সেটি অস্বীকার করছে। কারণ বাংলাদেশ সরকার ধর্মীয় গ্রুপগুলোকে অসন্তুষ্ট করতে চায়না।

তিনি বাংলাদেশী সাংবাদিক, লেখক, ব্লগার এবং প্রকাশকদের সুরক্ষায় সহায়তা করার জন্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসির রেবার্ন হাউজ অফিস ভবনে ‘শ্রিংকিং স্পেস ফর সিভিল সোসাইটি’ শীর্ষক এই সিরিজ আলোচনায় এবারের বিষয়বস্তু ছিল ‘হিউম্যান রাইটস ইন বাংলাদেশ’।

ঘণ্টাব্যাপী এই প্যানেল আলোচনা ছিল সবার জন্য উম্মুক্ত। আমন্ত্রিত না হলেও সেখানে উপস্থিত হয়ে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের উপ-প্রধান মাহবুব হাসান সালেহ আলোচকদের বিভিন্ন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ‘বাস্তব পরিস্থিতি’ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়নি। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ আদালতে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান ম্যাকগভার্ন বলেছেন, বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (বিএনপি) মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বে সিভিল সোসাইটি ‘ক্রসফায়ারের’ মধ্যে পড়ে গেছে। তিনি বলেন, গত দুই বছরে দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

এক বছরেই পাঁচজন সেক্যুলার লেখক ও প্রকাশক খুন হয়েছেন। বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির এটা এখনও একটা কারণ। এতে করে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে । তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে এমন খবরও আসছে যে আল-কায়দা ও আইএসসহ আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের উপস্থিতি রয়েছে দেশটিতে।’

মঙ্গলবার রাতে ওয়াশিংটনে কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটাল হিলে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার’ শীর্ষক এক শুনানিতে ম্যাকগভার্ন এসব কথা বলেন।

মার্কিন এ কংগ্রেসম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের খবর পাওয়া গেছে। এসব কারণে স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ বৃদ্ধি পেয়েছে।’ তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্য হিসাবে এবং মানবাধিকার চুক্তিসমূহের অংশ হিসাবে বাংলাদেশের সকলের সুরক্ষা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বাংলাদেশে ভিন্নমত পোষণকারীদের ‘দমন-পীড়ন’, গণগ্রেপ্তার, বিরোধী দলকে রাজনৈতিক সমাবেশ করতে ‘না দেওয়া’ ও বিচার বহির্ভূত হত্যার অভিযোগ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের এই কংগ্রেস সদস্য।

তবে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের উপ-প্রধান মাহবুব হাসান সালেহ শুনানিতে উপস্থিত থেকে মার্কিন কংগ্রেসম্যানের এসব অভিযোগ খন্ডন ও অস্বীকার করে বলেন, বাংলাদেশে আইএসের কোনো অস্বিত্ব নেই।

তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে যাদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে তাদের বিরোধী দলের রাজনীতিক হিসাবে নয়, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী হিসাবেই আন্তর্জাতিক মানদন্ডে ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায় কার্যকর করা হয়েছে।

রেবার্ন হাইস অফিস বিল্ডিংয়ে মার্কিন কংগ্রেসের ‘টম ল্যান্টস হিউম্যান রাইটস কমিশন’ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

এতে অন্যদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক কমিশনের সিনিয়র পলিসি অ্যানালিস্ট শাহার চৌধুরী, পেন আমেরিকান সেন্টারের ‘মুক্ত মন প্রকাশ’ কার্যক্রমের পরিচালক কারিন ডয়েস কার্লেকার, আটলন্টিক কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া সেন্টারের পরিচালক ভারত গোপালাস্বামী ব্রিফিংয়ে অংশ নেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সেন্টার ফর ইনকোয়ারির পাবলিক পলিসি দফতরের পরিচালক মাইকেল ডি ডরা।

মাইকেল ডি ডোরা বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। সন্ত্রাসী গ্রু আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, আল-কায়েদা কিংবা আইএস যদি অবাধে ঘুরে বেড়ানোর এবং দেশটির ওপর অধিক নিয়ন্ত্রণ নেয়ার সুযোগ পায়, তবে বিশ্ব সম্প্রদায় অনেক বড় সমস্যায় পড়বে। বাংলাদেশে তখন অনেক বেশি ভয়াবহ হামলা হবে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।