শান্তি রক্ষী সেনাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের নাজমা‏

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.02.29
BD-women বাংলাদেশের সেনা কর্মকর্তা কর্নেল ডা. নাজমা বেগম প্রথম নারী হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে একটি কন্টিনজেন্ট কমান্ডারের দায়িত্ব পেয়ে ইতিহাসের অংশ হয়েছেন।
আইএসপিআর

নারীর ক্ষমতায়ন আর বাংলাদেশ যেন এখন সমার্থক শব্দ। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ এক অনবদ্য উদাহরণ। বিষয়টি আরো প্রতিষ্ঠিত করলেন বাংলাদেশের সেনা কর্মকর্তা কর্নেল ডা. নাজমা বেগম। বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে একটি কন্টিনজেন্ট কমান্ডারের দায়িত্ব পেয়ে ইতিহাসের অংশ হয়েছেন তিনি।

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কোন বাংলাদেশি নারীর এই নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ- দেশের জন্য বিরাট সম্মান বয়ে আনল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ডা. নাজমা শুধু বাংলাদেশের নারীদের জন্যই নন, বিশ্বের সকল নারীর অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন বলেও মন্তব্য তাদের।


আইভরি কোস্টে ‘শান্তি’ ছড়াবেন নাজমা

দায়িত্বের শুরতেই আফ্রিকার দেশ আইভরি কোস্টে কাজ করবেন ডা. নাজমা ও তাঁর দল। এ লক্ষ্যে গত শনিবার রাতে ঢাকা ছেড়েছেন কর্নেল নাজমার নেতৃত্বে একটি চিকিৎসা দল।

এ বিষয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)জানানো হয়, ৫৬ সদস্যের এই দলে মোট ছয়জন নারী আছেন। তাঁরা আইভরি কোস্টে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি হাসপাতালে সাধারণ মানুষ ও কর্মরত সেনা কর্মকর্তাদের চিকিৎসা সেবা দেবেন। এর আগে নাজমা বেগম সেনাবাহিনীতে প্রথম নারী অধিনায়ক হিসেবে ২১ ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্সের নেতৃত্ব দেন এবং মেডিকেল সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (এডিএমএস) হিসেবে ২১ পদাতিক ডিভিশনে (বগুড়া সেনানিবাস) কর্মরত ছিলেন।

আইএসপিআর জানায়, নাজমা বেগমের বাড়ি নীলফামারী শহরে। তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন নীলফামারী সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ও নীলফামারী কলেজ থেকে। এরপর পড়াশোনা করেন রংপুর মেডিকেল কলেজে। ১৯৯৩ সালে নাজমা বেগম সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে যোগ দেন।


‘সব ধরনের রেকর্ড ভাঙছে বাংলাদেশের নারীরা’

বাংলাদেশে সেনাবাহিনীতে শুধু নয় পুরো নারী সমাজে বিরাট সুখবর বয়ে এনেছেন ডা. নাজমার এ অর্জন।

“বাংলাদেশ সব ধরনের রেকর্ড ভাঙছে। নারীর ক্ষমতায়নেও। ২০০৯-২০১৬ পর্যন্ত বাংলাদেশে নারী সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্বের অন্য কোন দেশেই এত দিন একটানা নারী সরকার প্রধান থাকেননি। জাতিংঘের নানা প্রেক্ষিতেও বাংলাদেশের নারীরা অনেক এগিয়ে। বিশেষ করে শান্তি মিশনে বাংলাদেশি নারী পুলিশের ভূমিকা ও অংশগ্রহণ বিশ্বে ব্যাপক আলোচিত ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় এবার ডা. নাজমা শান্তিরক্ষা মিশনে একটি কন্টিনজেন্ট কমান্ডারের দায়িত্ব পেয়ে আবারও একটি অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করলেন। বিশ্বের শান্তি রক্ষার ইতিহাসের প্রথম নারী তিনি, যিনি আর্মড কন্টিনজেন্ট পরিচালনার দায়িত্ব পেলেন। এই অর্জন বাংলাদেশ সম্পর্কে নিন্দুকদের সব খেতাবকে পাল্টে দিতে পারে।”

প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলেন থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনে (ইউএনইএসসিএপি)বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি সাঈদা মুনা তাসনিম।

এতে তাঁর খুশির হওয়ার পরিমাণটা আরো অনুমাণ করা যায়- তার পরের বক্তব্যে। তিনি বেনারকে বলেন, “ডা. নাজমাকে আমি স্যালুট জানাই। পুরো জাতিরই স্যালুট জানাতে হবে। বিশ্বের নারী শান্তি রক্ষীদের জন্য তিনি উদাহরণ। বিশ্বের অন্য দেশ যা পারেনি, বাংলাদেশ সে উদাহরণ সৃষ্টি করতে পেরেছে। এটি বিশ্বে বাংলাদেশের নতুন মাইল ফলকের সূচনাও বলা যায়।”

‘উপযুক্ত পরিবেশ পেলে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারে বাংলাদেশের নারীরা’

ডা. নাজমার খবরে খুশির রেশ পাওয়া যায় সংসদ ভবন এলাকাতেও। এ বিষয়ে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি বেনারকে বলেন, “দেশের জন্য এটি বিরাট অর্জন। এটা অত্যন্ত আনন্দের এবং গৌরবের বিষয়। এর মাধ্যমে বিশ্বের ইতিহাসে বাংলাদেশ, এদেশের সেনাবাহিনী ও ডা. নাজমার নাম উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত জ্বল জ্বল করছে।”

তিনি বলেন, “একটা সময় ছিল যখন সেনাবাহিনীতে সামান্য কয়েকটি ক্ষেত্রে নারীদের নিয়োগ দেওয়া হত। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাপকভাবে সেনাবাহিনীতে নারী নিয়োগ দেওয়া শুরু করেন। তার সুফল হিসেবে নাজমা বেগমের এই আন্তর্জাতিক যাত্রা। এর মাধ্যমে তিনি অন্যদেরকে পথ দেখালেন। পরিবেশ পেলে নিজের যোগ্যতার মাধ্যমে নারীরা এগিয়ে যেতে পারে সে উদাহরণ তিনি। আশা করি তার দেখানো পথে অন্য নারীরাও এগিয়ে যাবে। আরো আরো দৃষ্টান্ত তৈরি হবে।”

নাজমা বেগমের আরো একটি পরিচয় তুলে ধরে ফজিতুন্নেছা বাপ্পি বলেন, “ডা. নাজমা  একজন লেখকও। সদ্য শেষ হওয়া বইমেলাতেও তার কয়েকটি বই বের হয়েছে। সফল এই নারীর জন্য প্রাণঢালা অভিনন্দন।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।