স্বনির্ভর করতে ২১ হাজার দরিদ্র নারীকে প্রশিক্ষণ দেবে সরকার
2015.09.03

নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়- বিষয়টি মাথায় রেখে দেশের ২১ হাজার হতদরিদ্র নারীকে উপার্জনক্ষম করে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গত বুধবার মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বেনারকে একথা জানান। গত মাস থেকে ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের অধিনে প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে গেছে।
স্থায়ীভাবে দারিদ্র্য মুক্ত করতে এসব নারীদেরকে জীবন উন্নয়ন ও দক্ষতা অর্জনের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নগদ অর্থ সহায়তাও দেওয়া হবে বলে বেনারকে জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বিকাশ কিশোর দাস।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, স্থায়ীভাবে দারিদ্র মুক্তির লক্ষ্যে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ‘ইনভেস্টমেন্ট কম্পোনেন্ট ফর ভালনারেবল ডেভেলপমেন্ট’ নামে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৮ কোটি টাকা। প্রথম ধাপে দেশের ২১ উপজেলায় এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটি সফল হলে ধীরে ধীরে তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেনারকে বলেন, “নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়া দেশের অর্থনীতির পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। এ কারণে নারীর উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে। তবে এবার হতদরিদ্র নারীদের স্থায়ীভাবে দারিদ্র দূর করতে ভিন্ন রকমের এই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে”।
তিনি আরো বলেন, দারিদ্র দূর করতে ভাতা হিসেবে অনেক সময় সহযোগিতা দেওয়া হলেও সেগুলোর সঠিক ব্যবহার না হওয়ায় তারা তা কাজে লাগাতে পারেনি। তাই এবার আয় বৃদ্ধি, জীবনমানের উন্নয়ন সহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার পরেই তাদের হাতে নগদ অর্থ তুলে দেওয়া হবে। এই অর্থ দিয়ে ক্ষুদ্র কোনো ব্যবসা শুরু করে তারা উপার্জন করতে সক্ষম হবেন।
ইতিবাচক তবে অপর্যাপ্ত
এদিকে সরকারের এ ধরনের উদ্যোগকে ইতিবাচক তবে অপর্যাপ্ত বলছেন নারী নেত্রী ও সমাজকর্মীরা।
এ বিষয়ে নারী নেত্রী ও বেসরকারি সংস্থা উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার বেনারকে বলেন, “নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের এ ধরনের উদ্যোগ অবশ্যই প্রসংশনীয়। তবে মনে রাখতে হবে দেশে ১৬ কোটি মানুষের অর্ধেকই নারী। এদের মধ্যে দেড় থেকে ২ কোটি অর্থনৈতিকভাবে দুর্দশাগ্রস্ত। এই কোটি সংখ্যার বিপরীতে মাত্র ২১ হাজার নারীর জন্য প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করা নিতান্তই নাম মাত্র”।
তিনি আরো বলেন, শুধু প্রশিক্ষণ দিলেই চলবে না। পণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, বিক্রি সকল বিষয়ে তাদেরকে ধারণা দিতে হবে। যাতে করে এই প্রশিক্ষণকে তারা বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে পারে।
আয় বর্ধক কর্মসূচি
এদিকে বিকাশ দাস বলেন, এই কর্মসূচি হতদরিদ্র নারীদের আয় বর্ধক কর্মসূচি। এইসব নারীদের লাইফ স্কিল, উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং নিজেদেরকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ট্রেড বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে এ প্রকল্পের আওতায়। প্রশিক্ষণ শেষে এসব নারীদেরকে ১৫ হাজার করে নগদ অর্থ দেওয়া হবে। এই অর্থ দিয়ে যাতে তারা নিজেরাই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে পারেন।
তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকার ২১টি উপজেলার দরিদ্র নারীদের উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হবে। ইতোমধ্যে, সিরাজগঞ্জের চৌহালি ও বেলকুচি উপজেলায় এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
এ কর্মসূচিতে সফল হলে পর্যায়ক্রমে দেশের হতদরিদ্র সব নারীর উন্নয়নে কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা হবে।
গরিব নারীদের উন্নয়নে এই প্রকল্প শুরু করা হলেও মূলতঃ দেশে এ ধরনের নারীর সংখ্যা কত সে পরিসংখ্যান সরকারের কাছে নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিকাশ দাস বলেন, দেশে মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ। তবে এদের মধ্যে নারীর সংখ্যা কত সেই হিসেব আমাদের কাছে নেই।
এদিকে সরকার নানা ধরনের উদ্যোগ নিলেও প্রান্তিক পর্যায়ের দরিদ্র জনগোষ্ঠী তার সুফল ভোগ করতে পারেন না বলে অভিযোগ এনেছেন অনেকে। তারা বলছেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হাতে জিম্মি থাকে এসব সুবিধা। তারা নিজেদের ইচ্ছেমত তালিকা তৈরি করে, যেখানে দরিদ্র জনগোষ্ঠী লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য নিজেদের পছন্দের মানুষকে সুবিধা দেওয়া। অথবা অর্থ আত্মসাৎ করা।
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার বাসিন্দা নাসিমা আক্তার বেনারকে বলেন, “নারীদের উন্নয়নে বৃদ্ধভাতা, বয়স্কভাতা, মাতৃভাতাসহ আরো নানা ধরনের ভাতা দেওয়া হয়। আবার নারীদের কাজে উদ্বুদ্ধ করতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার কথাও শুনেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কিংবা মেম্বরদের করা তালিকাই চূড়ান্ত হয়। দেখা যায়, একজনই একাধিকবার ভাতা পাচ্ছেন। আবার একজনের নামে আসা ভাতা তুলে নিচ্ছেন আরেক জন। তাই এসব সরকারি সহায়তার কথা শুনে আশ্বস্ত হওয়ার আগেই আশা হারিয়ে ফেলি।”