মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে এবার নতুন পদ্ধতি জিটুজি প্লাস
2016.02.08
বিজনেস টু বিজনেস—বিটুবি এবং গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট—জিটুজি পদ্ধতি ব্যর্থ হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার এবার জি-টু-জি প্লাস (সরকার ও বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে) পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের লক্ষ্য আগামী তিন বছরে ওই দেশটিতে ১৫ লাখ শ্রমিক পাঠানো।
বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির অন্যতম বাজার মালয়েশিয়া, যেখানে বর্তমানে প্রায় ছয় লাখ বাংলাদেশি সেখানে বিভিন্ন পেশায় রয়েছেন। গত কয়েক বছরে নানা আলোচনা ও সমঝোতা হলেও দেশটির শ্রমবাজার পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়নি।
নতুন এই পদ্ধতিতে সরকারের সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) সহযোগিতা করবে। এর আগে তাঁদের এই প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছিল।
সরকারের মূল্যায়ন হচ্ছে, এ কারণেই আগের দুটি উদ্যোগ সফল হয়নি। ২০১২ সালের সমঝোতা স্মারক ও ২০১৪ সালে স্বাক্ষরিত প্রটোকল অনুযায়ী সরকার কয়েক লাখ শ্রমিককে মালয়েশিয়া পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিল। নতুন এই চুক্তি কার্যকর হলে আগের দুটি বাতিল হবে।
“মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে আগের উদ্যোগগুলোর ক্ষেত্রে বায়রার পূর্ণ সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। তবে জি-টু-জি প্লাস চুক্তির ক্ষেত্রে বায়রা সহযোগিতামূলক কিছু কাজে অংশ নেবে। এ ক্ষেত্রে তারা নির্ধারিত কিছু ফি নিতে পারবে,” সাংবাদিকদের জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যে সমঝোতা খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নতুন এ প্রক্রিয়ায় মাথাপিছু খরচ হবে ৩৪ থেকে ৩৭ হাজার টাকা। নিয়োগকর্তাই নিরাপত্তা জামানত, বায়োমেডিক্যাল ফি, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য বিনিয়োগ, ক্ষতিপূরণ বিমাসহ সবকিছু নির্বাহ করবে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী এক মাসের মধ্যে দুই দেশ সমঝোতা স্মারকে সই করার পর জনশক্তি রপ্তানির মূল কাজ শুরু হবে। মন্ত্রণালয় আশা করছে, শ্রমিক পাঠানোর নতুন প্রক্রিয়া আগের তুলনায় স্বচ্ছ হবে এবং এতে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমবে।
“আমাদের বড় অর্জন হলো সোর্স কান্ট্রি (যেসব দেশ থেকে কর্মী নেবে) হিসেবে বাংলাদেশকে তালিকাভুক্ত করেছে মালয়েশিয়া। এর ফলে সেবা, উৎপাদন, নির্মাণ খাতে কর্মী পাঠানো যাবে। আগে শুধু প্লানটেশন খাতে শ্রমিক পাঠানো যেত,” জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সচিব জানান, প্ল্যান্টেশন খাতে কাজ করতে আগ্রহীর সংখ্যা কম হওয়ায় ওই উদ্যোগে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি।
এদিকে জিটুজি পদ্ধতিতে প্রতি ছয় মাসে ৫০ হাজার শ্রমিক পাঠানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) হিসেবে, গত তিন বছরে পাঠানো হয়েছে মাত্র সাত হাজার শ্রমিক।
এখন জিটুজি সংস্কার করে এতে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ জন্য এর নাম দেওয়া হয়েছে, জিটুজি প্লাস।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) কর্মী পাঠানোর জন্য আগ্রহীদের একটি তথ্যভান্ডার তৈরি করা হয়েছে। ওই ভান্ডার থেকেই বাছাই করে শ্রমিক নেবে মালয়েশিয়া।
প্রত্যেক শ্রমিক তিন বছরের জন্য নিয়োগ পাবে, তবে আরও এক বছর কাজ করার সুযোগ থাকবে তার জন্য।
“মালয়েশিয়া সরকার নিয়োগকর্তার কর্মী চাহিদা যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত কোটা নির্ধারণ করবে। নিয়োগকর্তারা প্রাপ্ত কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ দেবে,” জানান শফিউল আলম।
জনশক্তি পাঠানোর প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও জবাবদিহিপূর্ণ হবে—এমন আশা প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়ায় মহিলা কর্মী নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কর্মীদের বেতন সরাসরি ব্যাংক হিসাবে চলে যাবে। এ ছাড়া মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমবে।
তবে এই পদ্ধতিতে যত শ্রমিক পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে, তার বাস্তবতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। তাঁরা বলছেন, বছরে পাঁচ লাখ শ্রমিক পাঠাতে হলে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৩৭০ জন শ্রমিক পাঠাতে হবে, যা বাস্তবে প্রায় অসম্ভব।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস—বায়রার সদস্যরাও মনে করেন, বছরে এত শ্রমিক পাঠানো সম্ভব নয়।
“৫ লাখ না হলেও বছরে আমরা ৩ লাখ কর্মী পাঠাতে পারি। তবে বায়রার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে হবে,” বেনারকে জানান বায়রার সভাপতি আবুল বাসার।
মালয়শিয়া ২০ লাখ অবৈধ শ্রমিককে বৈধতা দিচ্ছে
এদিকে, মালয়মেইল অনলাইন প্রকাশিত খবরে মালয়শিয়ার ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার আহমেদ জাহিদ হামিদী জানিয়েছেন, নিয়োগ কর্তারা এখন থেকে অবৈধ শ্রমিকদের নিবন্ধনের মাধ্যমে তাদের বৈধতা দিতে পারবে। তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে আবেদনের মাধ্যমে করতে হবে।
জাহিদ একই সাথে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্বেও রয়েছেন। মন্ত্রনালয়ে মাসিক ব্রিফিং-এ গত ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি সাংবাদিকদের আরো জানান, “আমরা হিসাব করে দেখেছি যে প্রায় বিশ লক্ষ অবৈধ শ্রমিক এদেশে আছেন। এখন থেকে এজেন্সির মধ্যস্থতা ছাড়াই কোম্পানির নিয়োগ কর্তারা চাকুরি দিতে পারবেন। যাতে শ্রমিকরা হয়রানীর শিকার না হন”।
এই অবৈধ শ্রমিকদের মধ্যে অধিকাংশই ইন্দোনেশিয়ান বলে জানা গেছে, তবে বেশ কিছু বাংলাদেশিও রয়েছেন যারা এখন বৈধতা পাবেন।