সামাজিক কাজে তরুণদের যুক্ত করার প্রচারাভিযান
2015.09.04

নীলফামারীর ভোগদাপুর ইউনিয়নের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের বিয়ে। মো. সামসুদ্দোহা সাদির কানে যখন খবরটা পৌঁছাল তখন হাতে সময় আছে মাত্র একদিন।
খুব দ্রুত এলাকার তরুণদের সংগঠিত করে ফেলল নীলফামারী সরকারি কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র ও স্থানীয় তরুণ সাদি। খবর পৌঁছে দিল পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার কাছে। বিয়েটা শেষ পর্যন্ত ঠেকানো গেল।
বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন এইড সাদির মতো তরুণদের সংগঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ নামে একটি প্রকল্পের আওতায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে উঠে আসা তরুণদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে ওই প্রকল্পের আওতায়।
প্রাথমিকভাবে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ২০ জন। তাঁরা গত মাসের ২৫ তারিখ থেকে এ মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত প্রশিক্ষণ পেয়ে নিজ এলাকায় ফিরে গেছেন। এখন এঁরা সারা দেশে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন ইস্যুতে তরুণদের সংগঠিত করবেন।
“বাংলাদেশের যেকোনো ঐতিহাসিক ঘটনায় এ দেশের যুবারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তারা যেন অবিচার, অন্যায়কে রুখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে সে জন্য তাদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে,” বেনারকে জানান অ্যাকশন এইডের এ দেশীয় পরিচালক ফারাহ কবির।
বাংলাদেশ ছাড়াও অ্যাকশন এইড ডেনমার্ক, এল সালভেদর, ঘানা, জর্ডান, কেনিয়া, মিয়ানমার, নেপাল ও প্যালেস্টাইনে এ ধরনের প্রকল্প পরিচালনা করছে। ওই সব দেশেও তরুণদের সম্পৃক্ত করে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
“গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশে সম্প্রসারণ হওয়ার কারণ এ দেশে এখন তরুণ-যুবাদের প্রাধান্য বেশি। এখানে প্রতি তিনজন মানুষে একজন তরুণ। দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনে তাদের অবদান রাখার সুযোগ এবং সময় দুটোই বেশি,” বেনারকে জানান প্রকল্পটির পরিচালক লিয়া গাফনি।
গত বছর জাতিসংঘ জনসংখ্যা কর্মসূচি (ইউএনএফপিএ) বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এখন তরুণ-যুবাদের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৮০ লাখ।
ইউএনএফপিএর বাংলাদেশ প্রতিনিধি আর্জেন্টিনা মেটাবেল বাংলাদেশের এই তরুণ জনগোষ্ঠীর পেছনে ব্যাপক বিনিয়োগের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ পেলে এবং প্রশিক্ষণ কাজে লাগানোর সুযোগ পেলে তরুণেরা দেশের চেহারা বদলে দিতে পারে।
প্রশিক্ষণের পর এলাকায় ফেরা
প্রকল্পটির আওতায় তরুণেরা মূলত সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) পরবর্তী সময়ের উন্নয়ন, জেন্ডার সংবেদনশীলতা বিষয়ে প্রশিক্ষণ পাবেন।
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, নাগরিকেরা কর দেওয়ার বিনিময়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা পাওয়ার অধিকার রাখেন। প্রকল্পের আওতায় তরুণেরা অধিকারগুলো সম্পর্কে প্রশিক্ষণ পাবেন।
পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর জন্য জাতিসংঘ যে এমডিজি বেঁধে দিয়েছেন, সেটির মেয়াদ এ বছর শেষ হচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচন, মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নয়নে কী কী কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে, সেই কার্যক্রম থেকে কীভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সর্বোচ্চ সেবা পেতে পারেন সে বিষয়েও তরুণেরা প্রশিক্ষণ পাবেন।
এর বাইরে তরুণেরা যেন জেন্ডার সংবেদনশীল হন, নিজের সমাজে ও রাষ্ট্রে নারীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করতে পারেন সে বিষয়েও ধারণা পাবেন।
প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন ইস্যুতে প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর তরুণেরা তাঁদের নিজেদের মানুষের কাছে ফিরে যাবেন। তাঁরা স্থানীয় লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হবেন।
বিউটিফুল রাইজিং
প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, ডেনমার্কে ‘বিউটিফুল রাইজিং’ নামে একটি প্রকল্পের আওতায় তরুণেরা প্রশিক্ষণ পেয়েছেন এবং কার্যকরভাবে তা কাজে লাগাচ্ছেন।
বিউটিফুল রাইজিং প্রচারাভিযানে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে তরুণদের কাছ থেকে পরিকল্পনা আহ্বান করা হয়। ওই পরিকল্পনাটি সহজ-সুন্দরভাবে বাস্তবায়িত হবে সে বিষয়ে একটি প্যানেল কাজ করে থাকে। ওই প্যানেলটি যেভাবে পথ দেখায়, সে অনুযায়ী তরুণেরা আবার তাঁদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ে গিয়ে কাজ করেন।
বাংলাদেশের তরুণদের ডেনমার্কের ওই প্রচারাভিযানটি কীভাবে চলেছে সে বিষয়ে জানানো হবে। তাঁরা বাংলাদেশে এই মডেলে কাজ করবেন।
অ্যাকশন এইডের গ্লোবাল প্লাটফরম, বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে তরুণদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন সাদির মতো তরুণেরা। যাঁরা এরই মধ্যে সমাজ পরিবর্তনে ইতিবাচক কাজের সঙ্গে ছিলেন।
অ্যাকশন এইড জানিয়েছে, গ্রামের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, শহরের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ছাড়াও বেসরকারি সংস্থায় যারা তরুণ-যুবাদের নিয়ে কাজ করছে তাদের কে নিয়ে অ্যাকশন এইড কাজ করবে।
জাতীয় যুবনীতি
যুগোপযোগী জাতীয় যুবনীতি প্রণয়নের দাবি বহুদিনের হলেও তা প্রণয়নের কাজ চলছে ঢিমেতালে। তবে সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, সরকার জাতীয় যুবনীতি ২০০৩ যুগোপযোগী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সে লক্ষ্যে জাতীয় যুবনীতি ২০১৫-এর খসড়া ইতিমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং জনসাধারণের মতামতের জন্য তা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
‘‘জাতীয় যুবনীতি অনুসারে বাংলাদেশের ১৮-৩৫ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীকে যুব হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে,’’ বেনারকে জানান যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার।
কর্ম প্রত্যাশী অনুৎপাদনশীল যুব সমাজকে সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল এবং উৎপাদনমুখী শক্তিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে সরকার ১৯৭৮ সালে যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে এর নামকরণ করা হয় ‘যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়’।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত জুন মাসে যুব সংগঠনসমূহের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে যুব সংগঠন (নিবন্ধন এবং পরিচালনা) আইন, ২০১৫ তৈরি করেছে, যা জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার অপেক্ষায় ।
“দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি যুব সমাজের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান ছাড়া সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। এ জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন যুগোপযোগী জাতীয় যুবনীতি,” বেনারকে জানান বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল্লাহ আল কাফি রতন।
১৯৭৬ সালের ২৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত এই যুব সংগঠনটি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ভ্রাতৃপ্রতিম যুব সংগঠন।