জিকা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রস্তুত বাংলাদেশ: স্বাস্থ্য মন্ত্রী
2016.02.09
ইবোলার পর বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়েছে জিকা নামের ভাইরাস। জিকা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় ইতিমধ্যে বিশ্বময় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এমন পরিস্থিতিতে থেমে নেই বাংলাদেশ। মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের সংক্রমন রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত সরকার। তবে এখনই এদেশে জিকা ভাইরাস সংক্রমনের আশঙ্কা নেই বলেও ঘোষণা এসেছে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে।
শঙ্কা নেই, শনাক্ত হলে চিকিৎসার দায়িত্ব সরকারের
জিকা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মুখে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হল যে, এদেশে জিকা সংক্রমনের কোন শঙ্কা নেই। তবুও যদি কোন রোগী শনাক্ত হয়, তাহলে তার সম্পূর্ণ চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে সরকার। সর্বোপরি জিকা ঠেকাতে সব ধরনের প্রস্তুতির কথা জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের কোনো আশঙ্কা নেই। তা সত্ত্বেও দেশে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা জারির পরিপ্রেক্ষিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, তবুও কোন রোগী চিহ্নিত হলে সমস্ত চিকিৎসা ব্যয় দেবে সরকার। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া, ফলোআপ করা সবকিছুই সরকারের দায়িত্বে থাকবে।
মন্ত্রী জানান, জিকা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার সবরকম ব্যবস্থাই নিয়েছে। বাংলাদেশে এই ভাইরাস কোনভাবেই সংক্রমিত হতে পারবে না, আপনারা আশ্বস্ত থাকুন।
প্রাণঘাতি নয় জিকা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দীন মো. নুরুল হক বলেন, রোগটি প্রাণঘাতী নয়। বাংলাদেশে এ রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা নেই। যদি কোনো ভাবে কাউকে এটি আক্রান্ত করেও থাকে, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে এবং মৃত্যুঝুঁকিও কম।
সরকারের গৃহীত ব্যবস্থা
জিকা সংক্রামণ রোধে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া ব্যবস্থাগুলোর উল্লেখ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। লিখিতভাবে জানানো হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা কিছু কার্যক্রম চালাচ্ছে। যেমন- জিকা ভাইরাস সংক্রমণ সংক্রান্ত জাতীয় কর্মকৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।
জিকা আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আগত সন্দেহজনক জিকা রোগী শনাক্তকরণে সকল আন্তজার্তিক প্রবেশদ্বারগুলোতে ইতোমধ্যে কর্মরত মেডিকেল টিমের কার্যক্রম নিশ্চিত করা হয়েছে। শাহ্জালাল আন্তজার্তিক বিমান বন্দরে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আক্রান্ত দেশ থেকে আগত যাত্রীর জিকা ভাইরাস সংক্রমণ সংক্রান্ত স্ক্রিনিং কার্যক্রম মনিটর করার জন্য ওয়েব ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
মশা ও মানুষের রক্ত নমুনায় জিকা ভাইরাস শনাক্তকরণের জন্য পিসিআর রিজেন্ট সংগ্রহের ব্যাপারে আন্তজার্তিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ সাপেক্ষে অনলাইনে চাহিদা জানানো হয়েছে। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া এবং সম্ভাব্য জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এডিস মশা নিধনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকারের উদ্যোগে সমন্বিতভাবে প্রতিরোধ কার্যক্রমগুলো হাতে নিয়েছে।
এছাড়া আরো জানানো হয়, গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার কীটতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে কীটতত্ত্ববিদরা এডিস মশায় জিকা ভাইরাস আছে কিনা তা দেখার জন্য এডিস মশার নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছেন। ইতমধ্যে সারাদেশের সকল সিভিল সার্জন এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা ই-মেইল বার্তা দিয়ে জিকা ভাইরাস সম্পর্কিত তথ্য উপাত্ত জানানো হয়েছে।
গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রেই ভয়
বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইডিসিআর) পরিচালক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, জিকা ভাইরাস নিয়ে ভয় নয়, সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। গর্ভবতী হতে চান এমন কারো জন্য এ ভাইরাস অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, পুরুষ কিংবা স্বাভাবিক নারীদের ক্ষেত্রে জিকা তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না। এতে মৃত্যুর ঝুকি নেই বললেই চলে। এডিস মশা বাহিত জিকার লক্ষণগুলো বাংলাদেশের ডেঙ্গুর মতোই। তবে এটি ডেঙ্গুর মতো ভয়াবহ নয়। এটি সবচেয়ে ক্ষতিকর গর্ভবতী নারীর বাচ্চার ক্ষেত্রে। তবে কোনও নারী যদি আফ্রিকা থেকে গর্ভবতী হয়ে আসেন, তাহলেই কেবল তার ক্ষেত্রে ভয় আছে। কারণ, জিকায় আক্রান্ত গর্ভবতি মায়ের গর্ভস্থ শিশু বিকলাঙ্গ হতে পারে। তাদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয় না। ফলে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশু জন্ম নেয়।
তিনি বলেন, জিকা ভাইরাস বাংলাদেশে না থাকলেও এডিস মশা আছে। তবে জিকা আক্রান্ত এলাকা ভ্রমণকারীদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ডেঙ্গুর মতো জ্বর হয়। এর লক্ষণ হিসেবে শরীরে জ্বরের সঙ্গে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, বিশেষ করে হাত এবং পায়ের সংযোগস্থলে বেশি ব্যথা হয়। এছাড়া গায়ে ফুসকুড়িউঠতে থাকে।
বিশ্বে জিকা আক্রান্ত ৪০ লাখ
দি প্যান আমেরিকান হেলথ অর্গানাইজেশন জানিয়েছে, দুই আমেরিকার ২৪টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে জিকা ভাইরাস । আর এতে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ লাখ। আক্রান্ত প্রধান দেশ ব্রাজিলেই এই ভাইরাসের কারণে প্রায় ৪০ হাজার শিশু বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
১৯৪৭ সালে পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডার অতি পরিচিত জিকা নামক বনাঞ্চলে প্রথম এ ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যায়। ওই বনেরই নামে এর নামকরণ করা হয় জিকা ভাইরাস। এরপর ১৯৫৪ সালে নাইজেরিয়ায় প্রথম মানবদেহে এ ভাইরাস সংক্রমণের তথ্য পাওয়া যায়। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলোতে। তবে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে মানুষ, এডিস মশা, বানর বা অন্য কোনো প্রাণির দেহে জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয়নি।