এক ডজন মামলায় আদালতে হাজিরা দিলেন খালেদা,১০টিতে জামিন
2016.08.10
আদালতে আত্মসমর্পণ করে রাষ্ট্রদ্রোহ ও নাশকতার ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের আট মামলাসহ ১০ মামলায় জামিন পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।
একইসঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার অপরাধ আমলে নিয়েছে আদালত। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করায় তাঁর বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের হয়।
বুধবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত ও ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত থেকে জামিন পান তিনি। এদিন দুপুর ১২টার দিকে ১২টি মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে যান খালেদা জিয়া। তাঁর আদালতে যাওয়া উপলক্ষে আদালতপাড়ায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে এসব মামলা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে দায়ের করা হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন বেনারকে বলেন, “নাশকতার নয়টি ও রাষ্ট্রদ্রোহের একটিসহ মোট ১০টি মামলায় বিএনপির চেয়ারপার্সনকে জামিন দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা ও নাইকো দুর্নীতি মামলায়ও তিনি হাজিরা দেন। ওই দুটি মামলাতেই জামিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া।”
বারবার তারিখ পেছানোর পর নাশকতা, দুর্নীতি ও রাষ্ট্রদ্রোহের মোট ১২টি মামলায় হাজিরা দিতে বুধবার পুরান ঢাকার আদালত পাড়ায় যান খালেদা জিয়া। আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে নাশকতার ঘটনায় করা আট মামলায় জামিন পান তিনি।
এগুলোর মধ্যে পাঁচ মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ১০ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়েছে। একই দিনে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলারও অভিযোগ গঠনের শুনানি হবে।
প্রথমে মহানগর দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় হাজিরা দিয়ে আদালতেই বিশেষ ক্ষমতা আইনের আট মামলায় তাঁর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। এরপর বিশেষ জজ আদালতে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি ও নাইকো দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে যান তিনি। এ দুই মামলায় এদিন অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ নির্ধারিত ছিল।
গত বছর ২১ ডিসেম্বর এক আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে খালেদা জিয়া বলেন, “আসলে কত লাখ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।”
ওই বক্তব্য দেশদ্রোহী মনোভাবের পরিচয়—এমন অভিযোগ এনে এ বছরের জানুয়ারিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে খালেদার বিরুদ্ধে মামলা করেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের একজন নেতা। বুধবার ওই মামলায় পুলিশের অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ১০ অক্টোবর দিন ধার্য করেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ। এ মামলায়ও খালেদাকে জামিন দেওয়া হয়েছে।
খালেদা জিয়া গত বছরের ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করতে বাধা পেয়ে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধ ডাকেন। তিন মাসব্যাপী ওই কর্মসূচিতে অসংখ্য গাড়ি পোড়ানো ও বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়।
পুলিশ বাদী হয়ে এসব নাশকতার ঘটনায় অসংখ্য মামলা করে। যার মধ্যে রাজধানীর বিশেষ ক্ষমতা আইনে আট মামলায় খালেদাকে হুকুমের আসামি করা হয়। গত বছর মে ও জুন মাসে দারুস সালাম থানায় খালেদাসহ বিএনপি নেতা কর্মীদের আসামি করে দায়ের করা এসব মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
বুধবার আত্মসমর্পণ করে ওই আট মামলায় জামিনের আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। এসব মামলার সবকটিতেই জামিন পান তিনি।তবে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার বিষয়ে তিনটি মামলার সিদ্ধান্ত জানাবে আদালত।
এ ছাড়া জরুরি অবস্থা চলাকালে দায়ের করা নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়ে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করেছে আদালত। তবে এ মামলায় অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি বুধবার শেষ হয়েছে।
ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোকে বরাদ্দ দেওয়ায় খালেদাসহ অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতির অভিযোগে এ মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন—দুদক।
২০০৮ সালে দুদকের দায়ের করা বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলায়ও এদিন আদালতে হাজিরা দেন খালেদা। শুনানি শেষে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করেছে আদালত।
এর আগে গত ৫ এপ্রিল যাত্রাবাড়ী থানার নাশকতার মামলাসহ পাঁচটি মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আনা এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বেনারকে বলেন, “এগুলো সবগুলোই মিথ্যা মামলা। বর্তমান সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য বিরোধী দলের বিরুদ্ধে এসব মামলা করেছে।”