বিএনপির ৬৭ নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.08.17
20160817-BNP1000.jpg খুন, গুম ও নিগ্রহের শিকার হওয়া পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আগস্ট ১৭, ২০১৬।
স্টার মেইল

বিএনপির ৬৭জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির দিনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার, গুম ও খুনের তথ্য তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জেলে পাঠানো হচ্ছে, লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

গত আট বছরে এই সরকারের সময়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অন্তত এক হাজার নেতা-কর্মী খুন হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপির মহাসচিব। এই সময়ে পাঁচ শতাধিক গুমের ঘটনা ঘটেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিরোধী পক্ষকে ঘায়েল করা এখন রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। তাঁরা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতেও একইভাবে বিরোধী দল আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা–মামলা হয়েছে।

“২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। শত শত নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। আইভি রহমানসহ নিহত হন বেশ কয়েকজন। বর্তমান সরকারের সময়ে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি,” সম্প্রতি বেনারকে জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ।

তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও নাশকতার মামলায় আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। বিষয়টি রাজনৈতিক কিছু নয়।

৬৭ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ও বরকতউল্লাহ বুলুসহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ঢাকার একটি আদালত।

গত বছরের টানা হরতাল-অবরোধের মধ্যে দায়ের করা এ মামলায় বুধবার পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নেয় আদালত। একইসঙ্গে বিএনপির এসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ঢাকার এক নম্বর মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের জজ কামরুল হোসেন মোল্লা।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন; বিএনপির চেয়ারপার্সনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, একান্ত সচিব শিমুল বিশ্বাস, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল, মহিলা দলের নেত্রী শিরিন সুলতানা ও কাইয়ুম কমিশনার প্রমুখ।

“পুলিশের কাজে বাধা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মুগদা থানায় পুলিশ বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করে। ৯৩ জনকে আসামি করে ওই বছরের ৮ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়,” বেনারকে জানান আসামিদের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া।

এ মামলায় বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী এম কে আনোয়ার ও মকবুল আকন্দ বুধবার আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন নিয়েছেন।

এদিকে এই নিয়ে বিএনপি নেত্রী সেলিমা রহমানের বিরুদ্ধে পরপর দুই দিন দুটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলো। অন্য একটি মামলায় সেলিমা রহমানসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন মহানগর হাকিম আদালত।

হাজার নেতা-কর্মী খুন

বুধবার এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বর্তমান সরকার বিরোধী পক্ষের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন চালাচ্ছে।

তিনি নিজ দলের নেতাকর্মীদের গুম, খুন, নির্যাতনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, “আমাদের হিসেবে গত আট বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে এক হাজারের বেশি বিএনপি নেতা-কর্মী নিহত হয়েছে। পাঁচশ’রও বেশি রাজনৈতিক নেতা-কর্মী গুম হয়েছে।পঙ্গু হয়েছে সহ্রসাধিক। আহত হয়েছে অসংখ্য। আর লক্ষ লক্ষ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। যাদের মধ্যে জেলে গেছে হাজার হাজার।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ এখন একটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এখানে এখন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে। যেখানে মানবাধিকার, আইনের শাসন, গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই।”

নিপীড়নকারীদের জন্য বুমেরাং হয়

বিশ্লেষকদের মতে, বিরোধী দল নিপীড়নের রাজনীতি স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার অধিকারকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত করে, তেমনি তা পরবর্তিতে বুমেরাং হয়ে ক্ষমতাসীনদের কাছে ফিরে আসে।

এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরোধীপক্ষকে ঘায়েল করার ধারাবাহিকতা নব্বইয়ের পট পরিবর্তনের পর চলে আসছে। তবে ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায়, যারা নিপীড়ন করেন তারাও চূড়ান্ত মেয়াদে লাভবান হন না। বরং এটা তাদের জন্য এক সময় বুমেরাং হয়ে যায়।”

“বিএনপি মহাসচিব নেতাকর্মীদের যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে তবে বিরোধী দল যে চাপের মধ্যে আছে তা পরিষ্কার। এতে করে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার সাংবিধানিক অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে,” বলেন ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, “এই রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য দেশের বৃহত্তর বিরোধীদল বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলই এর জন্য দায়ী এবং ভাগিদার। এটাকে পেশাগত বিড়ম্বনা হিসেবে দেখতে হবে।”

এদিকে বিরোধী দলের প্রকাশ করা পরিসংখ্যাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে সমাজবিজ্ঞানী . অধ্যাপক নেহাল করিম বেনারকে বলেন, “সরকার কোন অবস্থায় চাইবে না বিরোধী দল উঠে আসুক। তবে বিরোধী দলকে জনগণের সমর্থন পাওয়ার জন্য সক্রিয় হতে হবে। জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি দিতে হবে। ”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।