জিয়ার স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহার, রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.09.08
20160908-BNP-Zia1000.jpg প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহারের প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যহারের ঘটনায় রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি শনিবার দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিষয়টি নিয়ে পক্ষে–বিপক্ষে কথা বলছেন সরকার ও বিরোধী দলের নেতারা।

জাতীয় জাদুঘরে থাকা জিয়ার স্বাধীনতা পুরস্কারের মেডেল ও সম্মাননাপত্র গত বুধবার সরিয়ে নেওয়া হয়। এর আগে গত ২৪ আগস্ট অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে জাতীয় পুরস্কার-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহারের পাশাপাশি জাতীয় জাদুঘর থেকে ওই পুরস্কারের মেডেল ও সম্মাননাপত্র সরিয়ে ফেলার সুপারিশ করে।

“জাতীয় পুরস্কার-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জাদুঘর থেকে পদকটি নিয়ে এসেছেন,” বেনারকে জানান সংস্কৃতিসচিব আকতারী মমতাজ।

২০০৩ সালে বিএনপি–জামায়াত জোট সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়। সে সময় উত্তরাধিকারকে না দিয়ে জাতীয় জাদুঘরের একটি কর্নারে যথাযোগ্য মর্যাদায় এই দুটি পুরস্কার সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ওই সময় বিরোধী দলে থাকা আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে জিয়াউর রহমানকে পুরস্কার দেওয়ায় আপত্তি তোলে এবং পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে। দলের নেতারা বলেন, জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর সমমর্যাদায় উন্নীত করতে দুজনকে একসঙ্গে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু বিএনপি সরকার তখন বিষয়টিকে তাদের রাজনৈতিক উদারতা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিল।

“এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও সংকীর্ণতা ছাড়া আর কিছু নয়। ক্ষমতার জোরে সরকার পদক নিতে পারে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমান মানুষের হৃদয়ে যে স্থান করে নিয়েছে, সেটা নিয়ে যেতে পারবে না,” বেনারকে জানান বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

অবশ্য সরকারি দলের নেতারা বলেছেন, ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা ঠেকাতে এবং উচ্চ আদালতের রায় কার্যকর করতে এটা করা হয়েছে।

মন্ত্রিসভা কমিটি মনে করে, এই পুরস্কার যদি জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়, তাহলে আগামী প্রজন্মের কাছে ভুল ইতিহাস উপস্থাপিত হবে এবং একটি ভুল বার্তা যাবে।

“বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে কারও তুলনা হয় না। জিয়াউর রহমান নিজেও এমন দাবি করেননি। কিন্তু তাঁর দল সেই দাবি তুলে তাঁকে স্বাধীনতার ঘোষক বানিয়ে জাতির স্বপ্নদ্রষ্টার কাছাকাছি নেওয়ার অপচেষ্টা করছে,” বেনারকে জানান প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।

প্রসঙ্গত, এর আগে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা থেকে জিয়াউর রহমানের কবর সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছে সরকার। এ লক্ষ্যে আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছিল গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এ নিয়েও বিএনপি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল।

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ছবি: বিএনপির ওয়েবসাইট।

এর আগে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পাল্টে রাখা হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সর্বশেষ শাহবাগে জিয়া শিশুপার্কের নাম পাল্টে ফেলার কাজ চলছে।

“বঙ্গবন্ধুর নামে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, তিনি একজন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। তাঁকে বীর উত্তম উপাধিও দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু সরকার। স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার জন্য এগুলো যথেষ্ট,” বেনারকে জানান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ।

জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে দেশে প্রথম স্বাধীনতা পুরস্কার প্রবর্তন করেন। এই পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ এই পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় পরিচয় বিবেচনা করা হয় বলে অভিযোগ আছে।

বিএনপির সংবাদ সম্মেলন

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক সরানোর প্রতিবাদে শনিবার দেশের সব জেলা সদর ও মহানগরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সমাবেশ করবে বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জিয়াউর রহমানের পদক সরানোকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের নিকৃষ্টতম সিদ্ধান্ত আখ্যা দিয়ে ফখরুল বলেন, “এই সিদ্ধান্ত দেশের রাজনীতিতে বিভক্তি আরও বাড়াবে। রাজনীতিকে আরও সংকটময় করে তুলবে”। তিনি বলেন, “সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রতিহিংসাপরায়ণ, ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও গণবিচ্ছিন্ন”।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।