বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে দুই বাংলাদেশি নিহত
2016.09.23
ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিএসএফের গুলিতে আবারও প্রাণ হারিয়েছেন দুই বাংলাদেশি।
সীমান্ত হত্যা শুন্যের কোটায় আনতে ভারতের ক্রমাগত প্রতিশ্রুতি স্বত্বেও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা অব্যাহত রেখেছে বিএসএফ, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকেরা।
শুক্রবার ভোরে ঝিনাইদহ ও কুড়িগ্রাম সীমান্তে পৃথক দুটি ঘটনায় দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনী-বিএসএফ।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে নিহত বাংলাদেশির লাশ ফেরত আনা হয়েছে।
গরু চোরাচালানই কারণ
নিহত দুই বাংলাদেশিই গরু ব্যবসায়ী ছিলেন বলে পারিবারিক ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্রে জানা যায়। গরু পারাপারের কাজেই তারা ভারতের সীমান্তে প্রবেশ করেছিলেন।
বিজিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতের শেষ দিকে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বাঘাডাঙ্গা সীমান্তের ওপারে জসিম মণ্ডল (২৬) নামের এক যুবক বিএসএফের গুলিতে নিহত হন। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনার বাসিন্দা।
শুক্রবার ভোরের দিকে একইভাবে কুড়িগ্রামের রৌমারি সীমান্তের গয়েতাপাড়া এলাকায় নিহত হন লাল মিয়া (২৫) নামের আরেক তরুণ।
ঝিনাইদহ বিজিবির খালিশপুর-৫৮ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, “বাঘাডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ভারতের ৮০০ গজ ভেতরে হাজরাখাল এলাকায় ঢুকে জসিম বিএসএফের টহল দলের সামনে পড়ে যায়। বিএসএফ তাকে থামতে বললে পালানোর চেষ্টা করেন তিনি। এ সময় গুলি করে বিএসএফ সদস্যরা।”
বিএসএফের বরাত দিয়ে তাজুল জানান, আহত অবস্থায় জসিমকে ভারতের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার লাশ স্থানীয় থানায় রাখা হয়।
তবে ঝিানইদহের স্থানীয় সাংবাদিক রবিউল ইসলাম প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে বেনারকে জানান, গরু আনতে যাওয়ার পথে নিহত জসিম ও তার সঙ্গীরা দু্জন বিএসএফ সদস্যকে লাঞ্ছিত করে। এসময় গুলি চালায় বিএসএফ।
ময়নাতদন্তের পর শুক্রবার রাত ন’টার দিকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে জসিমের লাশ বাংলাদেশকে ফেরত দেওয়া হয় বলে রাতে বেনারকে জানান কর্নেল তাজুল।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বিএসএফকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।”
এদিকে কুড়িগ্রামের রৌমারি সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত লাল মিয়ার বাবা আবদুল হাই জানান, “ভোরের দিকে গরু আনতে ওপারে যাওয়ার পথে গয়েতাপাড়া এলাকায় বিএসএফের সদস্যরা তাকে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রামে ফেরার পর হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়।”
সম্প্রতি সীমান্তের ওই এলাকায় দুই দেশের গরু পাচারকারীদের আনাগোনা বেড়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান বিজিবির দাঁতভাঙ্গা কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আব্দুল আজিজ।
৮ মাসে নিহত ২৩
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে, গত আট মাসে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন বাংলাদেশের ২৩ নাগরিক। এছাড়া ২৫ জন আহত এবং ১৮ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন।
এর আগে ২০১৫ সালে ৪৩ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। এ ছাড়া গুলিতে আহত হন ৭৩ জন এবং অপহরণ করা হয় ৫৯ বাংলাদেশিকে।
উদ্বেগের বিষয়
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকা স্বত্বেও প্রতিনিয়ত সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশি হত্যার বিষয়টি উদ্বেগের বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। প্রতিশ্রুতির পরেও সীমান্ত হত্যা না বন্ধ না হওয়ায়, এ ব্যাপারে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা আরো বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন তাঁরা।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বেনারকে বলেন, “ভারত সরকার সকল পর্যায়ে বারবার সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। তারপরেও এটা বন্ধ হচ্ছে না। এর জবাব ভারত সরকারকে দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “গরু ব্যবসা বা অন্য যেকোন কারণে বাংলাদেশিরা ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশ করলে, সেটারও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। সেগুলো না করে নিরস্ত্র মানুষ হত্যা করাটা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের বিষয়।”