এসপি বাবুল আক্তারের চাকরিতে ফেরা-না ফেরা নিয়ে প্রশ্ন

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.07.22
20160722-Babul-Akhter1000.jpg স্ত্রী খুন হওয়ার পর স্বজন ও সহকর্মীরা পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে (বাঁ থেকে দ্বিতীয়) সমবেদনা জানান। জুন ১০, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের দেড় মাস পার হয়ে গেলেও কাজে যোগ দেননি আলোচিত পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার। প্রশ্ন উঠেছে, চাকরিতে তাঁর বহাল থাকা - না থাকা নিয়ে।

সম্প্রতি গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় চাপা পড়ে গেলেও বাবুল আক্তার ইস্যুটি নিয়ে আগ্রহ কমেনি সাধারণ মানুষের। স্ত্রী হত্যায় সন্দেহভাজন বাবুল আক্তারের চাকরিতে ফেরা-না ফেরার প্রতিই এখন দৃষ্টি অনেকের।

এমন অবস্থায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জানিয়েছেন, বিষণ্নতায় ভুগতে থাকা বাবুল আক্তারের চাকরিতে মনোযোগ দেয়ার মানসিকতা নেই এখন। তবে কর্মস্থলে অনুপস্থিতির অভিযোগ তুলে বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন আইজিপি।

তবে বাবুলের স্বজনেরা বলছেন, চাকরিতে যোগদানের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত তিনি। ওপর মহলের ডাক পেলেই চাকরিতে যোগ দেবেন বাবুল।

যদিও আইজিপি’র বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। বিশ্লেষকদের মতে, উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া একজন দক্ষ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘চাকরি করার মানসিকতা না থাকার’ অভিযোগ আনা ভিত্তিহীন। তা ছাড়া চাকরি চলে যাওয়ারও নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে। সে প্রক্রিয়া না মেনে একজন দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হলে, পুলিশ বাহিনীতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।

পুলিশ বলছে বিষণ্নতা, পরিবারের অস্বীকার

গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক জানিয়েছেন, এসপি বাবুল আক্তার চাকরিতে বহাল আছেন। কিন্তু তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে আসছেন না। এমনকি কারও সঙ্গে যোগাযোগও করেন না। এভাবে কর্মস্থলে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাবুল আক্তার বিষণ্নতায় ভুগছেন দাবি করে শহীদুল হক বলেন, “শুনেছি চাকরি করার মতো মানসিক অবস্থা তাঁর নেই।”

তবে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বেনারকে বলেন, “বাবুল সম্পূর্ণ সুস্থ্য আছেন। তিনি চাকরিতে যোগ দেওয়ার মত মানসিক অবস্থায় নেই, এ কথা সঠিক নয়।”

“পুলিশের পক্ষ থেকে গত ২৬ জুনের পর বাবুল বা আমাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। তাহলে তাঁরা কিভাবে জানলেন যে, বাবুল মানসিকভাবে প্রস্তুত নয়। পুলিশের ওপর মহলের নির্দেশ পেলে যেকোনো মুহুর্তে সে কাজে যোগ দেবে,” জানান বাবুলের শ্বশুর।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বেনারকে বলেন, “বাবুল আক্তারের চাকরি থাকা না থাকা আইজিপির কথার ওপর নির্ভর করে না। তিনি (বাবুল) যদি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হন, তাহলে তাঁর প্রমাণ লাগবে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন কর্মকর্তাকে তাঁর পদ থেকে অপসারণ করতে হলেও তার কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। সেসব অনুসরণ করেই তা করতে হবে।”

“সঠিক প্রক্রিয়া না মেনে বাবুল আক্তার চাকরিচ্যুত হলে, সে ঘটনা সমগ্র পুলিশ প্রসাশনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে,” মন্তব্য করেন তিনি।

উল্লেখ, গত ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড় এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে নিহত হন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু।

ওই ঘটনায় নিজে বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় তিনজনের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় মামলা করেন বাবুল। শুরুতে এ ঘটনায় জঙ্গিদের হাত রয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

পরে এ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামি ওয়াসিম ও আনোয়ার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে ওয়াসিম, আনোয়ার, মো. রাশেদ, নবী, মো. শাহজাহান, কামরুল সিকদার ওরফে মুছা ও মো. কালুর অংশ নেওয়ার কথা জানায়।

এ মামলার তদন্ত চলাকালে গত ২৪ জুন গভীর রাতে বাবুলকে বাসা থেকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর পর আবার সেখানে পৌঁছে দেওয়া হয় বাবুল আক্তারকে। স্ত্রী হত্যার পর সন্তানদের নিয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকছেন তিনি।

বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমগুলো জানায়, স্ত্রী হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনে ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের সময়ই বাবুলের কাছ থেকে পদত্যাগপত্রে সই নেওয়া হয়। এ সময় তাঁকে বাহিনী ছাড়া অথবা স্ত্রী হত্যা মামলার আসামি হওয়ার শর্ত দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, “পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার আইনের বাইরে নন। যদি তিনি স্ত্রী হত্যা করে থাকেন, তাহলে আইন অনুযায়ী তাঁর বিচার হোক। শুধু চাকরিচ্যুত হয়েই মাফ পেতে পারেন না তিনি। কিন্তু যা কিছুই হোক না কেন প্রমান সাপেক্ষে হতে হবে ,মুখের ”কথায় নয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।