মিতু হত্যার সন্দেহভাজন আসামি মুছাকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.10.06
20161006-Babul-Akter1000.jpg সিএমপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার। অক্টোবর ০৬,২০১৬।
বাংলানিউজ

আলোচিত সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলার আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছাকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের প্রায় চার মাস পর বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার ইকবাল বাহার এক সংবাদ সম্মেলনে মুছার খোঁজ পেতে এ ঘোষণা দেন।

তবে  পরিবারের দাবি, সাড়ে তিনমাস আগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদ‌স‌্যরা মুছাকে ধরে নিয়ে গেছে।

পরিবারের ওই অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ কমিশনার বলেন,“মুছার অবস্থানের খবর দিতে পারলে কিংবা গ্রেপ্তারে সহায়তা করলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।”

প্রধান আসামি কে জানে না পুলিশ

মিতু হত্যার চার মাস পরেও প্রধান হত্যাকারীকে সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। তবে অন্যতম সন্দেভাজন মুছা ধরা পড়লে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, এ পর্যন্ত মিতু হত্যা মামলায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।

মিতু হত‌্যার পর এই সাতজন গ্রেপ্তার হওয়ার পাশাপাশি পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় আরও দুজন।

মাহমুদা আক্তার মিতু। ফাইল ফটো। পারিবারিক অ্যালবাম।

ইকবাল বাহার বলেন, “আমরা তথ্য পেয়েছি যে, মুছার নেতৃত্বে একটি দল এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তবে মুছা নিজে না অন্য কারও নির্দেশে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে—সেটি জানতে তাকে গ্রেপ্তার করা জরুরী। তাকে গ্রেপ্তার করা গেলে মামলার জট খুলবে।”

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম ও আনোয়ার হোসেন হত‌্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। ওই জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে তারা মুছার নাম উল্লেখ করে।

এসপি হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বাবুল আক্তারের চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বদলি হওয়ার কয়েকদিন পরই গত ৫ জুন নিহত হন মিতু। ওইদিন সকালে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে সন্তানের সামনে তাঁকে গুলি করে ও পরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

ওই ঘটনায় চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন বাবুল আক্তার। পরে দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকার বনশ্রীতে শ্বশুর বাড়িতে ওঠেন তিনি।

স্ত্রী হত্যার ১৯ দিনের মাথায় গত ২৪ জুন নাটকীয়ভাবে বাবুল আক্তারকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। স্ত্রী হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওই সময় তাঁর কাছ থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্র নেওয়ার গুজব ওঠে।

এরপর গত ১৪ আগস্ট বাবুলের অব্যাহতির আবেদন পাওয়ার কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন। পরে ৬ সেপ্টেম্বর বাবুলকে চাকরি থেকে অব‌্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে এক প্রজ্ঞাপনে জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মিতু হত্যার সন্দেহভাজন আসামি মুছা রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ছাত্রলীগ নেতা রাশেদ হত্যাসহ প্রায় ছয়টি মামলার আসামী। তবে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার থাকাকালে তিনি বাবুল আক্তারের সোর্সও ছিলেন।

এ ছাড়া মিতুকে হত‌্যার অস্ত্র জোগানদাতা হিসেবে গ্রেপ্তার হওয়া এহতেশামুল হক ভোলাও বাবুলের সোর্স ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মুছা পুলিশের কাছে আটক?

মুছাকে ধরতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হলেও তার স্ত্রী পান্না আক্তার বলেছেন, সে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর কাছে আছে। গত জুলাই মাসের শুরুতে চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, ২২ জুন সকালে বন্দর এলাকায় নিজ বাসা থেকে মুছাকে ধরে নিয়ে যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদ‌স‌্যরা। তবে তখন থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে পুলিশ।

মিতু হত্যা মামলার আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা। ফাইল ফটো: স্টার মেইল।

বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বেনারকে বলেন, “আমরা মুছাকে গ্রেপ্তার করিনি, গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। এ জন্যই তার খোঁজ চেয়ে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।”

পরিবারের অভিযোগ গুরুত্ব দেওয়া উচিত

আসামি গ্রেপ্তারে পুরস্কার ঘোষণার রীতি ইতিবাচক হলেও আসামীর পরিবারের অভিযোগও খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এছাড়া হত্যার চার মাস পরেও মিতু হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনতে না পারার বিষয়টি পুলিশের অন্যতম ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান বেনারকে বলেন, “মুছার স্ত্রী বেশ কিছুদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তার স্বামীকে তুলে নেওয়া হয়েছে। এখন হুট করে পুলিশ সেই মুছাকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করেছে।”

তাঁর মতে, পুলিশের উচিত মুছার পরিবারের অভিযোগ গুরুত্ব দেওয়া। কারণ, কারা তাকে নিয়েছে, সেটা দেখার দায়িত্ব রাষ্ট্রেরই।”

এদিকে একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হওয়া স্বত্বেও মিতু হত্যা তদন্তে ধীর গতি পুলিশের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাহফুজুল হক মারজান।

তিনি বেনারকে বলেন, “মিতু হত্যার পর টুকরো ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এর মূল কেন্দ্রবিন্দু বাবুল আক্তার। আপাতদৃষ্টিতে দেখা যায়, মিতুকে হত্যার মাধ্যমে বাবুলকে দোষী বানানোর চেষ্টা চলছে। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে বাবুলকে কর্মচ্যুত করার জন্য মিতু হত্যাকাণ্ড হতে পারে বা আরও কিছু ঘটনাও থাকতে পারে।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।