খোয়া যাওয়া ১৫ মিলিয়ন ডলার ফেরত পাওয়ার আশা
2016.07.25
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া টাকার একটি অংশ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। মাসখানেকের মধ্যে ১৫ মিলিয়ন ডলার ফেরত পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ।
ফিলিপাইনের সংবাদ মাধ্যম ফিলস্টারের একটি প্রতিবেদনে যেমন এই আভাস দেওয়া হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেও এ বিষয়ে তাঁদের প্রস্তুতির কথা জানা গেছে। দুই দেশই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
ফিলিপাইনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, খোয়া যাওয়া অর্থ দ্রুত ফেরত পেতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত থাকার কথা জানায় দূতাবাস সূত্র।
ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ টেলিফোনে বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশের অর্থ ফেরত পেতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ। আমরা আশা করছি যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত চুরির অর্থ ফেরত দেবে ফিলিপাইন।”
এদিকে ফিলস্টারের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ক্যাসিনো জাঙ্কেটের অপারেটর কিম অংয়ের ফেরত দেওয়া ১৫ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দেওয়ার একটি আবেদনে ওই দেশটির নিম্ন আদালত সম্মতি দিয়েছে। এর মাধ্যমে খোয়া যাওয়া অর্থ ফেরত পাওয়ার পথ অনেকটাই সহজ হলো।
গত বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে আদালতের এ সম্মতির কথা জানান, দেশটির অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের (এএমএলসি) নির্বাহী পরিচালক জুলিয়া বাক।
বাংলাদেশে ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া টাকার একটি অংশ এখন ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রক্ষিত রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারকে এখন তা ফেরতের জন্য ১৫ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। আদালত তা মঞ্জুর করলে টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
আর এ আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল খুব শিগগির ফিলিপাইন যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেয় সাইবার অপরাধীরা। এর মধ্যে প্রায় ২১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংক ঘুরে অংয়ের ক্যাসিনোতে ঢোকে।
ফিলিপাইনের সিনেট কমিটি এ বিষয়ে তদন্ত শুরুর পর গত এপ্রিল-মে মাসে কয়েক ধাপে ১৫ মিলিয়ন ডলার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন ব্যবসায়ী অং।
শিগগির টাকা পাওয়ার আশা
ফেরত পাওয়ার পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে এখনই গণমাধ্যমের কাছে বিস্তারিত কিছু বলতে নারাজ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তবে টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে্ন তাঁরা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বেনারকে বলেন, “এ বিষয়টা শেয়ার করার সুযোগ কম। তবে চুরি যাওয়া টাকা ফেরত পাওয়ার উজ্জল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগির আমরা টাকা ফেরত পেয়ে যাব।”
দ্রুত আনুষ্ঠানিকতা সারবে বাংলাদেশ
এদিকে পৃথক একটি প্রতিবেদনে ফিলস্টার জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার এক গোলটেবিল বৈঠকে রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ ক্যাসিনো ব্যবসায়ী অংয়ের ফেরত দেওয়া অর্থ এক মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ফেরত পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, আরও পৌণে তিন মিলিয়ন ডলার, যা সোলারিজ রিসোর্ট অ্যান্ডর ক্যাসিনোর অ্যাকাউন্টে জব্দ রয়েছে; তা ফেরত পেতে ইতিমধ্যে ফিলিপাইন অ্যামিউজমেন্ট অ্যান্ড গেইমিং করপোরেশনের প্রধান আন্দ্রেয় ডোমিঙ্গোর সঙ্গে আলাপ–আলোচনা চলছে।
টাকা ফেরত আনার জন্য আদালতের আনুষ্ঠানিকতা সারতে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের একটি দল ম্যানিলায় পৌঁছাবেন বলেও জানান জন গোমেজ।
‘সময় লাগবে’ মনে করছেন বিশ্লেষকেরা
ফিলিপাইনের আদালতের এ সম্মতিতে টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সকল প্রক্রিয়া শেষ করে অর্থ ফেরত পেতে সময় লাগবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন, “এটা অত্যন্ত সুখবর। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন আবেদন করলে তার ওপর শুনানি হবে। তারপর তারা সিদ্ধান্ত নেবে। টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, তবে এখনও বেশ সময় লাগবে।”
তাঁর মতে, কবে নাগাদ ফেরত আসতে পারে, সেটা নিয়ে আগাম কিছু না বলাই ভালো।
যেভাবে খোয়া গেল ৮১ মিলিয়ন ডলার
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতে সুইফট ম্যাসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে ৮১ মিলিয়ন ডলার যায় ফিলিপাইনের একটি ব্যাংকে, আর অন্য আদেশের মাধ্যমে ২ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয় শ্রীলঙ্কায়।
শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া আটকানো যায়। তবে ফিলিপাইনের ব্যাংকে চলে যাওয়া অর্থ স্থানীয় মুদ্রায় বদল হয়ে চলে যায় জুয়ার টেবিলে।
বিশ্বের আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই সাইবার চুরির ঘটনা বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারে ফিলিপাইনের একটি পত্রিকার খবর প্রকাশের পর,ঘটনার এক মাস পর।
শুরু থেকে বিষয়টি জেনেও চেপে রাখেন সাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরে আতিউর রহমান। যার জন্য সমালোচনার মুখে পদ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।