সন্ত্রাসবাদ ও বন্দি বিনিময় গুরুত্ব পেল বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.07.29
20160729-BD-Modi1000.jpg দুদিনের ভারত সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। জুলাই ২৭, ২০১৬।
ফটোঃভারতীয় প্রধানমন্ত্রি নরেন্দ্রমোদির টুইটার পেইজ

সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে এ সংক্রান্ত চুক্তিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের পাশাপাশি সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। গত ২৭ ও ২৮ জুলাই দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ রোধ, বন্দি বিনিময় কার্যকর, সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন ও অবৈধ মাদক ব্যবসা বন্ধ সংক্রান্ত চুক্তিগুলো অবিলম্বে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দীর্ঘ তিন বছর পর নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত পঞ্চম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এসব বিষয়ে একমত হয়েছে দুই দেশ। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

গত এক বছরে দেশে অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী আক্রমণ ও চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহে জঙ্গি হামলার পর সন্ত্রাস দমনে নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ।

বিবিসি বাংলার এক খবরে বলা হয়, বৈঠকের পর ভারত জানিয়েছে, সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে তারা আরও বেশি করে সমর্থন দেবে।

শিগগির দুদেশের বন্দি বিনিময়

দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক দেশের আটক বন্দিদের অপর দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে একমত পোষণ করেন।

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে অন্যদেশে আটক নাগরিকদের দ্রুত ও সহজে ফেরত দেওয়ার চুক্তি করার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। উভয়পক্ষই এর প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছে।

বৈঠকে ২০১৩ সালের দ্বিপক্ষীয় বন্দি প্রত্যর্পন চুক্তির একটি ধারার সংশোধনী আনার জন্য সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়। যার ফলে চুক্তিটি আরও বেশি কার্যকর হবে।

সম্প্রতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওই ধারায় সংশোধন আনা হয়। এর ফলে যে কোনো আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে তথ্যপ্রমাণ ছাড়া এক দেশের আসামিকে অন্য দেশে পাঠানো যাবে।

বর্তমানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ, শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলার মামলায় অভিযুক্ত বাংলাদেশের হরকাতুল জিহাদ নেতা মুরসালিন, মুত্তালিন, কুখ্যাত অপরাধী সুব্রত বাইন, চট্টগ্রামের শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টার খুনের অভিযুক্ত মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি দীপু এবং উগ্রপন্থী নেতা মুক্তার হোসেন ভারতে রয়েছে।

এ ছাড়া বাংলাদেশে রয়েছে ভারতের নাগরিক জঙ্গি সালিম ওরফে মোবাশ্বের শাহীদ, দাউদ মার্চেন্ট, মুফতি ওবায়েদুল্লাহ ওরফে আবু জাফর, মাওলানা মনসুর আলী হবিবুল্লাহ, জাহিদ শেখ, মাওলানা এমদাদল্লাহ ও আরিফ হাসান।

বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত কোস্টগার্ড সমঝোতা স্মারক, নকল মুদ্রা চোরাচালান সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক এবং মানবপাচার বন্ধ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক দ্রুত কার্যকর করার বিষয়েও দু’পক্ষ একমত হয়েছে।

বৈঠকে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (সিবিএমপি) কার্যকর বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়।

পাশে থাকার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

গত বৃহস্পতিবার ভারত সফরে থাকা বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এ আশ্বাস দেন বলে বেনারকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহুমদ।

তিনি জানান, “বৈঠকে সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে সহযোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশের পাশে থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।”

এছাড়া বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সৌজন্য সাক্ষাৎকালে ভারতের প্রধামন্ত্রী বলেন, “১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের পাশে যেভাবে ছিল চলমান সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধেও ভারত একই রকমভাবে বাংলাদেশের পাশে থাকবে।”

গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে রাজনাথ সিং ঢাকায় জঙ্গি হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ভারতের পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।

ভারত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের সম্পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেন রাজনাথ।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “দুই দেশকে সব সময় সজাগ থেকে সন্ত্রাসবাদ দমনে প্রচেষ্টা চালাতে হবে এবং শান্তি, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে।”

বৈঠকে শেষে আসাদুজ্জামান খাঁন সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সকল ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশ পাশে থাকবে ভারত।”

এ সময় তিনি  সাম্প্রতিক হামলাগুলোর জন্য দেশীয় জঙ্গি সংগঠনকে দায়ী করে বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব অস্বীকার করেন।

সময়োপযোগী বৈঠক

এদিকে সন্ত্রাস দমনে দুদেশের মধ্যকার এ সহযোগিতাকে সময়োপযোগী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত মহিউদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন, “ভারত বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশি। কোনভাবে বাংলাদেশ আক্রান্ত হলে ভারতও বাদ যাবে না। তাই সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশের সঙ্গী হয়ে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত।”

দুদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠককেও খুব সময়োপযোগী এবং ফলপ্রসূ বলে অভিহিত করেছেন ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।

গতকাল শুক্রবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “যে কোনো বিষয়ে দুই দেশের একসঙ্গে কাজ করা দরকার।”

ভারতের হাইকমিশনার বলেন, “আমরা প্রতিবেশী, বন্ধু ও অংশীদার। আজ আপনাদের (বাংলাদেশের) যদি কোনো সমস্যা হয় তা আমাদেরও (ভারতের) সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। আজকে আমাদের কোনো সমস্যা হলে তা আপনাদেরও সমস্যা হয়ে উঠবে।”

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন দিল্লী থেকে রোহিত ওয়াধওয়ানি

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।