ব্যাংক ডাকাতি ও আট খুনের দায়ে ছয় জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডাদেশ

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.05.31
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
Bank-robbers620.jpg ব্যাংকে ডাকাতি করে টাকা লুট ও আটজনকে হত্যার দায়ে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কয়েকজন সদস্যকে আদালতে হাজির করা হয়। মে ৩১, ২০১৬।
বেনার নিউজ

ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ডাকাতি করে টাকা লুট ও আটজনকে হত্যার দায়ে নিষিদ্ধঘোষিত উগ্রপন্থী জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। এ ছাড়া তিনজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও দুজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

বিচার চলাকালে বিচারক বলেন, “আমি তাদের চেহারা, অভিব্যক্তি ও আচার-আচরণে অনুশোচনার চিহ্ন দেখিনি। পরিস্থিতির চাপে পড়ে তারা এই ঘটনা ঘটায়নি। সে কারণে সমস্ত সাক্ষী-প্রমান ও পরিপাঠ্য বিবেচনা করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়াই উপযুক্ত মনে করছি।”

ওই ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি হলেন উকিল হাসান। এ ছাড়া তিন বছরের কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দুজন হলেন আবদুল বাতেন ও শাহজাহান জমাদ্দার।

মামলা থেকে মোজাম্মেল ও বাবুল সরকারকে খালাস দেওয়া হলেও তারা মুক্তি পাচ্ছেন না। কারণ আদালত বলেছে, জঙ্গি অর্থায়নে তাদের সম্পৃক্ততা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন পরিদর্শক বেনারকে জানান, “আদালত তাদের খালাস দিলেও জঙ্গি অর্থায়নের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলায় তারা আপাতত ছাড়া পাচ্ছেন না। এ বিষয়টি পুলিশ খতিয়ে দেখবে।”

জঙ্গি অর্থায়নে তহবিল গঠনের জন্য এ ডাকাতি করা হয় বলে গ্রেপ্তারদের জবানবন্দিতে উঠে আসে। গ্রেপ্তার ১০ আসামির মধ্যে জেএমবির সাত সদস্য দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।

“আসামিরা পুলিশের চাপের মুখে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে তারা অপরাধে জড়িত নন বলে এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন,” বেনারকে জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মদ।

তবে রাষ্ট্রপক্ষের সরকারি কৌঁসুলি খন্দকার আবদুল মান্নান বেনারকে বলেন, রায়ে তাঁরা সন্তুষ্ট। “পুরোপুরি বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এই রায় দেওয়া হয়েছে। তদন্তে একজনের বিষয়ে সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় আরও দুজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত,” জানান আবদুল মান্নান।

গত বছরের ২১ এপ্রিল বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজার শাখায় ডাকাতি হয়। ডাকাত দল গ্রাহক সেজে ব্যাংকের ভিতরে প্রবেশের পর ৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা নিয়ে গুলি ছোড়ে। তখন পাশের মসজিদের মাইকে প্রতিরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়।

ব্যাংকটির পাশের মার্কেটের ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করলে ডাকাতরা গুলি এবং বোমার ব্যবহার বাড়িয়ে দেয়। এতে ব্যাংকে ব্যবস্থাপক এবং নিরাপত্তা কর্মীর পাশাপাশি ব্যবসায়ী, পথচারী এবং এলাকাবাসী সহ আটজন নিহত হন।

ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় লোকজন তিনজন ডাকাতকে ধরে ফেলে। এদের একজন গণপিটুনিতে নিহত হয়।

মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তরা হল

মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া ছয় আসামি হল ; বোরহান উদ্দিন, সাইফুল আলামিন, মাহফুজুল ইসলাম ওরফে সুমন ওরফে জামিল, মো. জসীম উদ্দিন, মিন্টু প্রধান ও সোহেল রানা ওরফে পলাশ। তাদের মধ্যে সোহেল রানা শুরু থেকেই পলাতক।

রায় ঘোষণার আগে গতকাল কারাগারে আটক আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়।

আদালত জানান, ছয় আসামির বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে আটজনকে হত্যাসহ ডাকাতির অপরাধ প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ সক্ষম হওয়ায় তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হল। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা ২৪ কার্যদিবসে আদালত নিষ্পত্তি করলেন।

রায়ে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যাংক ডাকাতি ও হত্যার অভিযোগ প্রমাণে ৬৪ জন সাক্ষী দিয়েছেন।

জেএমবি থেকে এবিটি

পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আসামিরা জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য ছিল। পরে তারা আরেক জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে (এবিটি) যোগ দেয়। আসামিরা পরিকল্পিত ও নিষ্ঠুরভাবে ব্যাংক কর্মকর্তাদের হত্যাসহ ডাকাতি করে।

পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, এটা দিনে-দুপুরে ডাকাতির ঘটনা ছিল না। এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আসামিরা আগে থেকেই প্রশিক্ষিত এবং তারা ঠান্ডা মাথার খুনি। প্রত্যেক আসামি পূর্বপরিকল্পিতভাবে ব্যাংক ডাকাতিতে অংশ নয় এবং নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে।

দলনেতার কথা কেউ জানে না

মামলার পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আসামিরা তাদের দলনেতা কে, তা জানে না? মামলার তদন্তে উঠে এসেছে, আসামিরা ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অপরাধ সংঘটন করে। কিন্তু এই দলনেতা ছাড়া তারা কাউকে চেনে না। জঙ্গি সংগঠনের আদর্শ অনুযায়ী কেউ কারও বিষয়ে জানতে চাইতে পারে না।আর এ কারণে মূল হোতারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এ কারণে তদন্তেও তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।