ব্যবসায়ী হত্যার এক দশক পর পলাতক ৪ আসামীর ফাঁসির আদেশ

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.05.23
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
গাজীপুর জেলা কারাগারের বাইরের ফটক।
কারা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট

প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশে কোনো না কোনো আদালতে হত্যার দায়ে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হচ্ছে। এবার ঢাকার অদূরে গাজীপুরে ব্যবসায়ী হত্যার দায়ে নিম্ন আদালতে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যাঁদের সবাই পলাতক আছেন।

রায় ঘোষণার সময় আইনজীবী ছাড়া রায়ের দিন বাদী বা বিবাদী পক্ষের কেউই আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। গত এক দশকে মামলার একজন আসামিও গ্রেপ্তার হয়নি। এই মামলা উচ্চ আদালতে গেলে তা শেষ হতে আরও কত বছর লাগবে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না।

১০ বছর আগে ব্যবসায়ী মোকছেদ আলী সেন্টুকে হত্যার দায়ে গত রোববার এ রায় দেন গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মো. ফজলে এলাহী ভূঁইয়া। রায়ে ফাঁসির পাশাপাশি প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অপর একটি ধারায় প্রত্যেককে ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়।

তবে আসামিরা পলাতক রয়েছে বলে বেনারকে জানান রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌঁসুলি মকবুল হোসেন কাজল। তিনি বলেন, “চাঁদা না দেওয়ায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা ১০ বছর আগে এক রাতে টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকায় নিজ বাড়ির পাশেই মোকছেদ আলী সেন্টুকে কুপিয়ে হত্যা করেন। ওই ঘটনার পর টঙ্গী থানায় মামলা করেন নিহতের বাবা মোহাম্মদ আলী।”

আসামিরা হলেন; টঙ্গীর এরশাদনগরের মো. রুবেল ওরফে টাইগার রুবেল (৩৫), ওই এলাকারই বাসিন্দা আবদুল রউফের ছেলে বাবু (৩২), আশরাফ আলী (৩০) ও টঙ্গীর আউচপাড়ার ছলেমান (৩১)।

জানা যায়, শুরু থেকেই আসামিরা পলাতক থাকায় বিবাদী পক্ষ কোনো আইনজীবী নিয়োগ দেয়নি। তবে নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্র আসামিদের পক্ষে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেন। আসামিপক্ষে এই মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট ফয়েজ উদ্দিন।মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৬ সালে ২৭ জানুয়ারি রাত সাড়ে দশটার দিকে টঙ্গীর এরশাদ নগর এলাকায় আসামিরা চাঁদার দাবিতে  মোকছেদ আলী সেন্টুকে কুপিয়ে হত্যা করে।

এক দশকেও আসামি গ্রেপ্তার নেই

মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও এই খুনের বিচার শেষ হতে প্রায় এক দশক লেগে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। এতদিনেও আসামিদের গ্রেপ্তার করতে না পারায় প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে।

মানবাধিকার কর্মীদের মতে, এত দিনেও একজন আসামিকে আটক করতে না পারা দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা। এ ক্ষেত্রে পুলিশের আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা।

আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে গেলে এই মামলা কবে শেষ হবে, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না।

এ মামলার রায় অপরাধ প্রতিরোধে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা জানতে চাইলে মানবাধিকারকর্মী এলিনা খান বেনারকে বলেন, একটি মামলার রায় হতে ১০ বছর লাগল। আসামিরা বুঝতে পারল, চেষ্টা করলে ১০ বছর মামলা টানা যায়।

তাঁর মতে, “বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, বাদী-বিবাদী দুপক্ষকেই প্রভাবিত করে। সময় ও অর্থের অপচয় হয়। সুতরাং যাঁরা অপরাধ করেছে এ রায় তাদের ওপর খুব একটা প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি না।”

মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে–বিপক্ষে মত

এদিকে দেশে ‘মৃত্যুদণ্ডের’ বিধান চালু রাখা না রাখা নিয়ে মতপার্থক্য জোরদার হচ্ছে। ঘনঘন মৃত্যুদণ্ড দেওয়া প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান বেনারকে বলেন, “মৃত্যুদণ্ড দিলেই সমাজে শান্তি ফিরে আসবে, এমনটি নয়। বরং মানুষ এত হিংসাত্মক হয়ে প্রতিপক্ষকে হত্যা করবে এমন পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়; সে জন্য রাষ্ট্রকে কাজ করতে হবে।”

ওই মানবাধিকারকর্মী মনে করেন, আইন, নীতি, গণতন্ত্র ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বিচার পাবার সংস্কৃতিতে ফিরে আসার মধ্যে দিয়ে এর সমাধান সম্ভব। তিনি বলেন, “আমাদের আন্দোলন করতে করতে হবে যাতে বাংলাদেশের আইন থেকে মৃত্যুদণ্ড তুলে দেওয়া যায়।”

আরেক মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান মনে করেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় এখনই মৃত্যুদণ্ড তুলে দেওয়া উচিত নয়। সোমবার বেনারকে তিনি বলেন, "এমনিতেই মানুষ বিচার পায় না, তার ওপর মৃত্যুদণ্ড উঠে গেলে আসামিদের মাঝে আরও বেপরোয়া মনোভাব কাজ করতে পারে।"

বিচার ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পরিবর্তে আজীবন কারাবাস অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে মৃত্যুদণ্ড তুলে দেওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন এলিনা খান।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।