মালয়েশিয়ায় উগ্রবাদ-নিরসন সম্মেলনে সন্ত্রাসের-হুমকি অবসানে সমঝোতা
2016.01.27
এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের শীর্ষ কর্মকর্তারা মঙ্গলবার দুদিনের সম্মেলনে সন্ত্রাস প্রতিরোধে যৌথ উদ্যোগ নেয়ার ক্ষেত্রে ভালো সমঝোতায় পৌঁছতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানালেন মালয়েশিয়ার এক কর্মকর্তা।
কুয়ালালামপুরে আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা ২০১৬ সালে সন্ত্রাস প্রতিরোধ পর্যালোচনায় উগ্রবাদ ও জিহাদি কার্যক্রম নিরসনে গৃহীত ব্যবস্থা যথেষ্ট নয় বলে উল্লেখ করেন।
বিশেষজ্ঞদের অনেকে কিছু দূর্বলতা তুলে ধরে বলেন, এ বিষয়ে যথেষ্ট গবেষণা হয়নি এবং স্থানীয় কমিউনিটির অংশগ্রহন নিশ্চিত করা হয়নি। অন্য আলোচকরা আহ্বান জানান উগ্রবাদে জড়িত অভিযুক্তদের বা আটক সন্ত্রাসীদের পূনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসতে।
মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমাদ জাহিদ হামিদী মঙ্গলবার বলেন, “আমরা সন্ত্রাসবাদের হুমকি ও ব্যাপক মিশনে যাবার জন্য গভীর সমঝোতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি”।
তিনি বিশ্বের ১ নম্বর নিরাপত্তা সমস্যা মোকাবেলায় ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উপর জোর দেন।
তিনি আরো বলেন, “আমরা সন্ত্রাসে ঝুকে যাবার বিভিন্ন প্রবনতা ও বিভ্রান্তির বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে পেরেছি এবং কতভাবে কিভাবে এসব মারাত্নক পরিনতি বয়ে আনা বন্ধ করার জন্য একসঙ্গে কাজ করতে পারি সে ব্যাপারে আলোচনা করেছি”।
জাহিদ বলেন, সন্ত্রাসী হুমকি মোকাবেলায় অবশ্যই আমাদেরকে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের পূনর্বাসনে সকল পক্ষকে যুক্ত করতে হবে। বিশেষ করে তরুনদের এতে বারংবার সংযুক্ত করতে হবে।
দূর্বলতা
কুয়ালালামপুরের এই সভা হলো ইন্দোনেশিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার দুই সপ্তাহের মধ্যেই যেখানে ৪ জন বেসামরিক নাগরিক ও ৪ জন হামলাকারী নিহত হন। গত নবেম্বরে প্যারিসে আইএসের হামলায় ১৩০ জন নিহত হন।
এই সম্মেলনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ফোরাম আসিয়ানভুক্ত দেশের মন্ত্রি ও কর্মকর্তরা অংশ নেন। সেইসঙ্গে ১০-দেশের কৌশলগত অংশিদার দেশগুলির প্রতিনিধিগনও উপস্থিত ছিলেন। দেশগুলি হচ্ছেঃ যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাপান, চীন ও ইটালি।
আন্তর্জাতিক কনফ্লিক্ট এনালিস্ট সিডনী জোনস সম্মেলনে বলেন, “উগ্রবাদ-নিরসনে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো কোনো গবেষণা ছাড়াই এই কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে, কিভাবে কেনো উগ্রবাদের ঘটনা ঘটছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে না”।
জোনস জাকার্তা-ভিত্তিক ইন্সটিটিউট ফর পলিসি এনালাইসিস অফ কনফ্লিক্ট (আইপিএসি) এর প্রধান। আরো জানান, গবেষণার মাধ্যমে যে সাফল্য অর্জিত হবে তার নিশ্চয়তা হয়ত নেই কিন্তু কোনো সঠিক তথ্য ছাড়াই মোকাবেলার উদ্যোগ নিশ্চিতভাবেই ব্যর্থ হবে।
তিনি বলেন, আইএসের আবির্ভাব উগ্রবাদ নিরসনের দিকে মনোযোগ তৈরি করেছে। সোশাল মিডিয়ায় বিবিধ ভাষ্যকে মোকাবেলার নির্দিষ্ট প্রচেষ্টা চলছে কিন্তু অনেক ইন্দোনেশিয়ান তরুন যারা দেশ ছেড়ে সিরিয়ায় আইসিসের যুদ্ধে যোগ দিচ্ছে তাদেরকে থামানোর জন্য নতুন নতুন ধারনা তুলে ধরা হচ্ছে না।
গতমাসে ইরাকের রামাদিতে নিহতদের মধ্যে ১৫ বছর বয়সি পূর্ব-জাভার ইন্দোনেশিয়ানও ছিলো।
জাকার্তা হামলায় অংশ নেয়া অন্তত ২ জন জেল থেকে সাজা খেটে বের হওয়া সাবেক আসামীও ছিলো। এতে প্রমাণ হয় কারাগারে তাদের পূনর্বাসন প্রক্রিয়ায় দূর্বলতা ছিলো।
ধারনা ও আদর্শের সংঘাত
প্রতিনিধিরা বেশি গুরুত্ত দেন সাজা প্রাপ্ত আসামীদের বা বিচারাধীন অভিযুক্তদের পূনর্বাসন প্রক্রিয়ার উপর।
উদাহরন হিসেবে থাইল্যান্ডে কারাগারে আটকৃত সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের সংখ্যা বাড়ছে। তাদের বেশিরভাগ দেশের দক্ষিণের মুসলিম অধ্যুষিত প্রদেশের বিদ্রোহী। যারা ২০০৪ সাল জুড়ে হামলা চালিয়েছে সেনা, পুলিশ ও বেসামরিক নাগরিকদের উপর।
থাইল্যান্ডের ইন্সটিটিউট অফ জাস্টিসের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর নাথি চিতসোয়াং বলেন, “সংশোধন কেন্দ্রে অতিরিক্ত ভীরের কারণে জায়গার অভাবে তাদেরকে প্রতিকারের ব্যবস্থা করা যায়নি”।
তিনি জানান, যদিও ৫০ ভাগ আটক হাজতিরা মাদক সংক্রান্ত অপরাধী তাদের ভীরের কারণে অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে যখন সন্ত্রাসীদের সংখ্যা সেখানে বাড়তে থাকে। তার মতে, তাদের সংশোধনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত।
সিঙ্গাপুরের রিলিজিউয়াস রিহ্যাবিলিটেশন গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জানান, সরকার ও মুসলিম কমিউনিটির জন্য খুবই গুরত্তপূর্ন বিষয় হলো সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদিদের মোকাবেলায় ‘আদর্শবাদের অস্ত্র’ ব্যবহার করা।
তারমতে, “এটা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়, কিন্তু ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা ও ভুল ধারনার বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধ। এটা সভ্যতার মধ্যে সংঘাত নয় কিন্তু বিশ্বে শান্তি ও যুদ্ধে বিভক্তির ধারনা সমুহের মধ্যে সংঘাত”।