সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে ভারত
2016.05.12
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশকে দৃঢ়ভাবে সহায়তা করবে ভারত। দুদিনের ঢাকা সফরের শেষ দিনে এমন বার্তাই দিলেন ভারতের বিদেশ সচিব ড. সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের একত্রে কাজ করার বিষয়টি নাকচ করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে মেঘনায় প্রায় দেড়ঘণ্টা বৈঠক করেন বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।
পরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের বলেন, “দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুর বাইরেও নিরাপত্তা ইস্যুতে আমরা আলোচনা করেছি। ভারত জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশকে দৃঢ় ভাবে সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছি। প্রতিবেশি হিসেবে ভারতের জন্য এটা প্রত্যক্ষ উদ্বেগের বিষয়। এ বিষয়ে আমরা একত্রে আরো কাছে থেকে এবং দ্বিপাক্ষিকভাবে কাজ করবো।”
দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের যাবতীয় বিষয়গুলোতে গত কয়েক মাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, “এটা বাংলাদেশ-ভারতের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের নিয়মিত বৈঠক। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে একমত হয়েছিল দুদেশ। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সেসব বিষয়গুলো পর্যালোচনাই এ সফরের উদ্দেশ্য।”
এ সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, “সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করার জন্য আমরা দ্বিপাক্ষিক, আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিকভাবে কাজ করছি। এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আমরা তথ্য আদান প্রদান করেছি। দুই দেশের বিশ্লেষনের মধ্যে প্রচুর মিল রয়েছে। এ বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করলে তা নিমূর্ল করা যাবে বলে আমরা মনে করি।”
বৈঠকে কানেকটিভিটি, ব্লু ইকোনমি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে শহীদুল হক বলেন, “এ এলাকায় উন্নয়নের নতুন মাত্রা দেখা গেছে। দ্বিপক্ষীয় ছাড়াও আঞ্চলিকভাবে কিভাবে কাজ করা যায় সে বিষয়ে তথ্য আদান প্রদান হয়েছে।”
তিস্তার পানি বণ্টণ চুক্তির অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “আমরা এ বিষয়ে আশাবাদি।”
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বৃহস্পতিবার সকালের প্রাতঃরাশ সারেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে।
বৈঠক শেষে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা জানান, বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ওয়াশিংটনের সঙ্গে দিল্লির নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়টি নাকচ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেছেন, এ ধরনের সহযোগিতার বিষয়টি তিনি অবগত নন। গণমাধ্যম সূত্রে বিষয়টি জেনেছেন।
সকালের ওই বৈঠক শেষে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সম্পর্ক কীভাবে সামনে এগিয়ে নেওয়া যায় সেসব বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে কথা হয়েছে।
“এ বিষয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এক সঙ্গে কাজ করবে বলে যে খবর পত্রিকায় এসেছে, তা তিনি (ড. জয়শঙ্কর) কাগজে পড়ার কথা বলেছেন,” জানান আনিসুজ্জামান।
মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বেনারকে বলেন, “সম্পদ বণ্টণ, দুদেশের মধ্যে যাতায়াত, জনগণের মধ্যে আরো সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে ভাবের আদান প্রদান সমতা ভিত্তিক হওয়া দরকার বলে আমরা জানিয়েছি। এসব বিষয়ে সহযোগিতা আরো উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভারতের সচিব।”
তিস্তার চুক্তি প্রসঙ্গে তার দেশের ভেতরের সম্পদ এবং নীতির সঙ্গে সমন্বয় করেই বিষয়টি সমাধানের কথা ভারত সরকার ভাবছে বলে জানান দেশটির সচিব।
এর আগে সফরের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন এস জয়শঙ্কর। সেসব বৈঠকেও নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
সূত্র বলছে, ভারতের সহযোগিতাকে বরাবরের মত স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের যে প্রচলিত এজেন্ডাগুলো আছে, তাতে সন্ত্রাসদমন অনেক পুরোনো ও প্রতিষ্ঠিত এজেন্ডা। সেই অনুযায়ী আমরা কাজও করেছি, ভাল ফলও পেয়েছি। সেই সহযোগিতাকে আরো জোরদার করার কথা আলোচনা হয়েছে।”
এ বিষয়ে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বেনারকে বলেন, “পৃথিবীর সকল দেশের জন্য সন্ত্রাসবাদ একটি বড় হুমকি। সব দেশই কোনো না কোনোভাবে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করছে। সেটা দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক কিংবা আন্তর্জাতিকভাবে। বাংলাদেশও সেভাবেই করছে এবং করবে।”