'জঙ্গিবাদ' প্রসঙ্গটি বিশেষ গুরুত্ব পেল জেলা প্রশাসক সম্মেলনে

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.07.29
20160729-DC-meeting-BD620.jpg জেলা প্রশাসক সম্মেলন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন বিভাগ ও জেলার কর্মকর্তারা। জুলাই ২৬, ২০১৬।
ইয়াসিন কবির

জেলা প্রশাসক সম্মেলনে জেলার উন্নয়ন, অগ্রগতি, সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু এবারের সম্মেলনে সেসব বিষয়কে টপকিয়ে গুরুত্ব পেল জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমন  প্রসঙ্গ।

গত ২৬ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় জেলা প্রশাসক সম্মেলন। এতে অংশ নেন ৬৪ জেলার প্রশাসক (ডিসি) এবং নয়জন বিভাগীয় কমিশনার। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত গঠন ও জনসচেতনতা বাড়াতে জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে চার দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন শুক্রবার শেষ হয়েছে।

গুলশান, শোলাকিয়া ও কল্যাণপুরে জঙ্গি হামলার ঘটনাগুলোর পর অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে সবকিছু ছাপিয়ে গুরুত্ব পায় জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গ। সরকারের ৩৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের ওই সম্মেলনে মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের আলোচনার মূল বিষয় ছিল সামাজিক এই ব্যাধি প্রতিরোধের উপায় খোঁজা।

গতকাল সম্মেলন শেষ হওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বেনারকে বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে।

জেলা প্রশাসকদের কী বার্তা দেওয়া হয়েছে—এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “ম্যাসেজ তো অনেকগুলো। একটা বড় মেসেজ হলো—জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকদের নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।”

স্থানীয় কমিটি গঠন প্রসঙ্গ

জেলা প্রশাসক সম্মেলনে জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনের আওতায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী কমিটি গঠন করতে বলেছেন। তবে ওই কমিটিতে বিএনপি ও জামায়াত নেতা বা ওই দুটি দল থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থাকবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক সম্মেলন থেকে বের হওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আশরাফ যা বলেন তা গুছিয়ে বলা যায়, পুনর্গঠিত কমিটিতে স্থানীয় বিএনপি বা জামায়াত নেতারা থাকবেন না। তবে ওই দুটি দল থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থাকবেন।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে বিরোধী দল বিএনপির আন্দোলন চলাকালে সন্ত্রাস ও সহিংসতার বিরুদ্ধে এমন একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই ওই কমিটি প্রশাসননির্ভর কমিটি হয়ে পড়ে এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতারা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। জনপ্রশাসন মন্ত্রী নতুন করে ওই সব কমিটি পুনর্গঠন করতে বললেও তাতে কারা থাকবেন, সেই নির্দেশনা স্পষ্ট নয়।

এরই মধ্যে ২৭ জুলাই জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনি বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিদের সঙ্গে বিএনপির যোগসূত্র কী এবং তারা কোনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কিনা, তা দেখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর স্থানীয় কমিটিতে বিএনপির জনপ্রতিনিধি কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে?—এই প্রশ্নের জবাবে মেলেনি।

“জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় কমিটিগুলো দ্রুত গঠন করতে হবে। ১৪ দলের নেতৃত্বে এক ধরনের কমিটি গঠন হচ্ছে, প্রশাসনের নেতৃত্বে আরেক ধরনের কমিটি হবে,” বেনারকে জানান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

তিনি বলেন, “সব কাজের লক্ষ্য এখন জঙ্গিবাদ দমন করা। আমরা অনেক আগে থেকেই জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেওয়ার বিষয়ে সাবধান করেছিলাম। কিন্তু প্রশাসন বা পুলিশ তখন বিষয়টি ততটা গুরুত্ব দেয়নি।”

সেল করবে আইন মন্ত্রণালয়

মাঠ পর্যায়ে জঙ্গি মামলাগুলো দেখভাল করতে আইন মন্ত্রণালয় একটি সেল করার কথা জানিয়েছে। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, সরকারি কৌঁসুলিরা অনেকসময় সহযোগিতা না করায় জঙ্গিরা মামলা থেকে জামিন বা খালাস পায়।কয়েকজন জেলা প্রশাসক এ বিষয়টি নিয়ে সম্মেলনে আলোচনা করেন।

এসব বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, জঙ্গি মামলায় সরকারি কৌঁসুলি সহায়তা না করলে জেলা প্রশাসকেরা বিষয়টি এই সেলের কাছে জানাতে পারবেন। এরপর আইন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সম্মেলনজুড়ে জঙ্গিবাদ নিয়ে আলোচনা

এর আগে গত ২৬ জুলাই সম্মেলন উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা প্রশাসকদের বলেন, “জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সমাজজীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে আপনাদের আরও সতর্কতার সঙ্গে এবং কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।”

সম্মেলনের শুরু থেকেই সরকারের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীরা জেলা প্রশাসকদের জঙ্গিবাদ বিষয়ে নির্দেশ বা পরামর্শ দেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রত্যেক জেলায় দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ প্রায় সব মন্ত্রীই জঙ্গিবাদ নিয়ে কথা বলেছেন।

“আমরা মনে করি, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে জেলা প্রশাসকদের জঙ্গি দমন, উন্নয়ন ও সুশাসনের যুদ্ধে যথাযথ ভূমিকা রাখা তার সাংবিধানিক কর্তব্য। আমরা সেই কর্তব্য পালনে আহ্বান জানিয়েছি,” বেনারকে জানান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।