অবশেষে বুড়িগঙ্গায় মিললো নিখোঁজ ব্যবসায়ীর লাশ

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.07.26
20160726-Dutch-Bangla620.jpg ব্যবসায়ী নেতা হাসান খালেদ। ফাইল ফটো
বেনার নিউজ

তিনদিন নিখোঁজ থাকার পর মঙ্গলবার দেশের প্রথিতযশা ব্যবসায়ী ও ডাচ-বাংলা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিবিসিসিআই) সভাপতি হাসান খালেদের (৫৪) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঢাকার বাসা থেকে শনিবার বের হয়ে যাবার পর মঙ্গলবার রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জে তাঁর মরদেহ পাওয়া যায়।

গত ১ জুলাই গুলশান ও ৭ জুলাই শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা, সর্বশেষ মঙ্গলবার ঢাকার কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে নয় সন্দেহভাজন জঙ্গিকে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে চলমান থমথমে অবস্থার মধ্যে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটল। বিশিষ্ট এই ব্যবসায়ী নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁর জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়েছিল। কিন্তু গতকাল মরদেহ উদ্ধারের পর তাঁকে অপহরণ ও হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে পরিবার।

পুলিশ এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। তবে শীর্ষ একজন ব্যবসায়ী নেতার এমন মৃত্যুর পর বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

মঙ্গলবার দুপুরে কামরাঙ্গীরচর ও কেরানীগঞ্জ থানার মাঝামাঝি খোলামোড়া ঘাট এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদী থেকে উদ্ধার হয় ব্যবসায়ী হাসান খালেদের মরদেহ।

এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি ফেরদৌস হোসেন সাংবাদিকদের জানান, “সাইনবোর্ড এলাকায় নদীতে একটি লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। মৃতদেহের প্যান্টের পকেটে থাকা ভিজিটিং কার্ড দেখে হাসান খালেদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। পরে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে লাশ শনাক্ত করা হয়।”

উদ্ধারের পর পর ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে ওসি ফেরদৌস বলেন, “নিহত খালেদের শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাবে।”

এর আগে শনিবার হাসান খালেদের নিখোঁজের বিষয়ে ধানমন্ডি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন তাঁর স্ত্রীর বড় ভাই শরিফুল আলম।

আশির দশকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করা হাসান খালেদ ছিলেন কেমিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আমদানি-রপ্তানি ও প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবসায় জড়িত ছিলেন তিনি।

ডাচ-বাংলা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ গঠনের পেছনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যকার বাণিজ্য উন্নয়নে ট্রেড ফ্যাসিলিয়েটর হিসেবে কাজ করছিলেন এই ব্যবসায়ী।

হাসান খালেদের নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরিতে বলা হয়, শনিবার সকালে ধানমন্ডির বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি তিনি।

এর তিনদিন পর লাশ পেলেও হাসান খালেদকে হত্যার কারণ বুঝে উঠতে পারছে না তাঁর পরিবার। এর পেছনে কারা জড়িত সে বিষয়েও কোন ধারণা দিতে পারছেন না তাঁরা।

এ বিষয়ে শরিফুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “আমাদের কখনো মনে হয় না ওনার (হাসান খালেদ) কোনো শত্রু আছে। তাঁর ওপর কোনও ধরনের হুমকি আছে বলেও আমরা শুনিনি। তাই কারা তাঁকে হত্যা করতে পারে সে বিষয়ে কোন ধারণা বা সন্দেহ এই মুহূর্তে আমাদের নেই।”

জঙ্গি দমন নিয়ে দেশের চলমান অস্থিরতার মাঝে এ হত্যাকাণ্ড ঘটলেও এর সঙ্গে ‘জঙ্গি’ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে মনে করছেন না ব্যবসায়ীরা।

হাসান খালেদ নিহত হওয়ার ঘটনাকে অত্যন্ত নিন্দনীয় আখ্যা দিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এর প্রেসিডেন্ট আবদুল মাতলুব আহমদ বেনারকে বলেন, “পরিস্থিতিটা এখন একটু ভিন্ন। তাই অনেকেই একে গুলশানের ঘটনার সঙ্গে মেলাতে পারেন। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি না, এর সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে। পুলিশ এ সম্পর্কে ভালো বলতে পারবে।”

এদিকে ডিবিসিসিআই সভাপতি হাসান খালেদের আকস্মিক নিখোঁজ হওয়া এবং মর্মান্তিক মৃত্যুর নিন্দা জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।

মঙ্গলবার  সংগঠনের মহাসচিব মীর শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি অল্প সময়ের মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানাচ্ছে এফবিসিসিআই। পাশাপাশি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।