রাজধানীতে অর্ধ কোটি টাকার জাল নোটসহ গ্রেপ্তার ৮ জন
2016.09.02
আসন্ন ঈদুল আজহাকে লক্ষ্য করে বাংলাদেশে বেড়েছে নোট জালিয়াতি চক্রের তৎপরতা। গতকাল শুক্রবার এমনই একটি চক্রের আট সদস্যকে প্রায় অর্ধকোটি টাকার জাল নোটসহ আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, জাল টাকা দেশের অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই শক্ত হাতে এসব চক্রকে দমন করতে হবে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার পাশাপাশি জাল নোট বিষয়ে জনসাধারণকেও সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন তাঁরা।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জাল টাকার বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। বড় বড় বাজারগুলোতে জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিনও বসানো হয়েছে।
৫২ লাখ জাল টাকাসহ আটক ৮ জন
শুক্রবার রাজধানী ঢাকার পল্টন ও কোতোয়ালি এলাকা থেকে নোট জালিয়াতি চক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে ৫২ লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. ইউসুফ আলী বেনারকে জানান, “গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত পল্টন ও কোতোয়ালি এলাকার দুটি ভবনে অভিযান চালিয়ে এই জালিয়াতি চক্রকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে একজন নারীও আছেন।”
তিনি জানান, এসময় তাদের কাছে ৫২ লাখ টাকার জাল নোট, কিছু ভারতীয় জাল রুপি এবং নোট জাল করার বিভিন্ন সরঞ্জামও পাওয়া যায়।”
গ্রেপ্তারকৃতরা হল; মো. মহরম মিয়া (৩৮),মো. ফজর আলী(২৯), মো. আব্দুল কাদের ওরফে অপু(২৮), মো. রেজাউল ইসলাম মুন্না(২৬), মো. লতিফ (২৫),সুমি বেগম (২০), মো. আব্দুল বারেক(২৫) ও মো. সাদ্দাম (২৩)। তাদের বিরুদ্ধে পল্টন থানয় মামলা করা হয়েছে।
প্রায় ৫২ লাখ জাল টাকার সঙ্গে কিছু ভারতীয় জাল মুদ্রা ও জাল নোট তৈরির সরঞ্জাম আটক করে পুলিশ। ছবি: নিউজরুম ফটো।
তিন কোটি টাকার জালনোট বাজারে
আসন্ন কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীতে জালনোট চক্রের সক্রিয় তিনটি গ্রুপ এ পর্যন্ত প্রায় তিন কোটি টাকার জাল নোট ছেড়েছে বাজারে ছেড়েছে। শুক্রবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম এই তথ্য জানান।
ব্রিফিংয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, “কোরবানির ঈদে রাজধানীসহ সারা দেশে জাল টাকার দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। রাজধানীর পশুর হাট থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামের হাটগুলোকেও টার্গেট করছে জালনোট চক্রের সদস্যরা।”
তিনি জানান “আটক নোট জালিয়াতি চক্রের হোতা রেজাউল। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে এ পর্যন্ত দুই থেকে তিন কোটি টাকার জাল নোট তারা বাজারে ছেড়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে।”
“এরা জালনোট তৈরি করে বিশেষ কায়দায় গরুর হাটে প্রথমে পাইকারি বিক্রেতা, তারপর খুচরা বিক্রেতা এবং পরে তা অন্য একটি চক্রের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে,” জানান মনিরুল।
এই চক্রটি আট হাজার টাকায় এক লাখ টাকার জাল নোট বিক্রি করে আসছিল বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
বাজারে আরও দুটি চক্র নোট জালিয়াতি করছে বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, “তাদেরও ধরার চেষ্টা চলছে।”
এ প্রসঙ্গে মনিরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “ঈদকে সামনে রেখে এসব জালিয়াতি চক্রকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে আগের চেয়ে তুলনায় তাদের তৎপরতা অনেকটাই কমে গেছে। তারপরও যে দুই-একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে তাদের ধরতে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ।”
মানুষকেও সচেতন হতে হবে
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা নয়, জাল নোট ঠেকাতে সাধারণ মানুষকেও জাল নোট বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
এ বিষয়ে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “কুরবানির পশুর হাটে বিপুল অঙ্কের টাকা লেনদেন হবে। এসব বাজারে যাতে কেউ জাল নোট বাজারে ছাড়তে না পারে; যাতে কেউ প্রতারিত না হয়; এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ রয়েছে। সাধারণ মানুষকেও এ বিষয়ে সচেতন হবে।”
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভংকর সাহা বেনারকে বলেন, “বাজারে জাল নোটের প্রবেশ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র, আইন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্সটি সক্রিয় রয়েছে। তা ছাড়া জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন করতে বিভিন্ন স্থানে জাল টাকা শনাক্ত করার বিষয়ে পোস্টার টানানো, লিফলেট বিতরণ, ভিডিও ক্লিপ দেখানো, টিভি বিজ্ঞাপণ প্রচার করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।”
৩১ প্রতারক গ্রেপ্তার
এদিকে নোট জালিয়াতি চক্রের পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ‘অজ্ঞান ও মলম পার্টির’ ৩১ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নোট জালিয়াতি চক্রের মতো দুই ঈদকে সামনে প্রতি বছরই কেনাকাটার মৌসুমে অজ্ঞান ও মলম পার্টির দৌড়াত্ব বাড়ে। এরা যানবাহনে চেতনানাশক ব্যবহার করে যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নেয়।
এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম জানান, “বৃহস্পতিবার গাবতলী, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এদের গ্রেপ্তার করা হয়। এদের ২১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বাকিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হয়েছে।”