ফ্রান্সের 'বাস্তিল দিবস' উদযাপন অনুষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলায় এশিয়ার নেতাদের শোক
2016.07.15
শুক্রবার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নেতারা ফ্রান্সের বাস্তিল দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে বর্বরোচিত ট্রাক-হামলার বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিবাদে যোগদান করেন। ফ্রান্সের পর্যটন শহর নিসে বৃহস্পতিবার রাতে বাস্তিল দিবস উপলক্ষে আতশবাজি পোড়ানোর অনুষ্ঠানে জড়ো হওয়া মানুষের উপর ট্রাক চাপিয়ে দিয়ে ৮৪ জনের প্রাণহানির ঘটনার তিব্র নিন্দা ও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এশিয়ার নেতারা। ঘটনার আকস্মিকতা এবং সহিংসতা স্তব্ধ করেছে সবাইকে। এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ রোধে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার রাতে ফ্রান্সের জাতীয় দিবস ‘বাস্তিল দিবস’ উদযাপন করতে ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় নিস শহরের বিখ্যাত প্রমেনেদ দেজাঙ্গলে চত্বরে জড়ো হয় বহু মানুষ। আতশবাজি পোড়ানোর পর্ব শেষ হওয়ার পরপরই স্থানীয় সময় রাত ১১ টার দিকে সেই ভিড়ের মধ্যদিয়ে একটি ২৫ টনি ট্রাক অত্যন্ত দ্রতগতিতে প্রায় ২ কিলোমিটার পর্যন্ত এগিয়ে যায়।বর্বরোচিত ওই হামলায় ১০ শিশুসহ অন্তত ৮৪ জন নিহত হয়েছেন এবং হতাহতের সংখ্যা দুইশতাধিক, যাঁদের ৫২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পুলিশ পরে গুলি করে ট্রাকের চালককে হত্যা করে ট্রাকটিকে থামায়। ট্রাকের চালক ৩১ বছর বয়সী একজন তিউনিসীয় বংশোদ্ভুত ফরাসি নাগরিক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
যদিও প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স’ যারা অনলাইনে জঙ্গি তৎপরতার উপর নজরদারি করে থাকে, -এর তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, চরমপন্থী গ্রুপ ইসলামিক স্টেটের সমর্থকেরা ইন্টারনেটে চ্যাটিং এর মাধ্যমে এই গণহত্যা উদযাপন করছে।
ঘটনার পর শুক্রবার ভোরে এক জরুরি বৈঠক শেষে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ টেলিভিশনে দেয়া এক বক্তব্যে স্পষ্টতই বলে দিয়েছেন যে এই হামলা সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধেরই অংশ।
এশীয় নেতাদের নিন্দা ও শোক
গত দেড় বছরের মধ্যে ফ্রান্সে এটি তৃতীয় বেপরোয়া প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ঘটনায় শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করে এক টুইটার বার্তায় বলেছেন, “নিসের এই ভয়ঙ্কর হামলায় হতভম্ব। আমি দৃঢ়ভাবে এই হৃদয়হীন সহিংস কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাই। আমার ভাবনা মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের সাথে আছে।”
মোদি বলেন, “ভারতও এই ব্যথার অংশীদার এবং এই অপরিসীম বিষণ্ণ সময়ে তাঁর ফরাসি ভাই বোনদের পাশে দৃঢ় ভাবে দাঁড়িয়েছে।”
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ফ্রান্সের এই ঘটনায় শোক ও নিন্দা জানিয়ে দুটি পৃথক বার্তা দিয়েছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তাঁর শোকবার্তায় বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বৃহস্পতিবারের বর্বরোচিত হামলার নিন্দা জানাই এবং শিশুসহ অসংখ্য নিরীহ মানুষের জীবন হারানোর অপূরণীয় ক্ষতির জন্যও আমার বেদনা প্রকাশ করছি”।
এদিকে আসেম সম্মেলন উপলক্ষে বর্তমানে মঙ্গোলিয়ায় অবস্থানকারী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শোকবার্তায় বলেন, “সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশ বরাবরের মতই ফ্রান্সের জনগণের পাশে রয়েছে”।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বার্তায়, হামলায় নিহত ও হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সহানুভূতি ব্যক্ত করেছেন। তিনি নিহতদের বিদেহী আত্মার শান্তি এবং বর্বরোচিত এই হামলায় আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
উল্লেখ্য, চলতি জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশও পরপর দুটি জঙ্গি হামলার শিকার হয়।
ইন্দোনেশিয়ান প্রেসিডেন্ট জোকো “জোকোয়ি” উইদোদো তাঁর টুইটার বার্তায় ফ্রান্সের জনগনের প্রতি তাঁর সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, “ফ্রান্সের এই হামলা অত্যন্ত নিষ্ঠুর। ইন্দোনেশিয়া নেক্কারজনক এই ঘটনায় সংহতি প্রকাশ করছে এবং ফ্রান্সের জনগনের সাথে একতাবদ্ধ”।
মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম আব্দুল্লাহ শুক্রবার বেনারকে জানান “নিসের পরিস্থিতি এখন শান্ত, মর্মান্তিক এই ঘটনার কারনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়েছে। প্যারিসের মালয়েশিয়ানরা বা প্যারিস ভ্রমনের জন্য যারা পরিকল্পনা করছেন, আমরা ক্রমাগত তাঁদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই তাঁরা জেন তাঁদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার ব্যাপারে সচেতন থাকেন”।
এই ঘটনায় ফ্রান্সে অধ্যয়নরত মালয়েশিয়ার একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আহত হয়েছেন বলে জানান মালয়েশিয়ান রাষ্ট্রদূত ।
এদিকে ব্যাংকক থেকে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতির মাধ্যমে ফ্রান্সে বসবাসরত থাই নাগরিক এবং ফ্রান্সে ভ্রমন ইচ্ছুক নাগরিকদের সতর্ক করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়,“থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্যারিসে দূতাবাসের মাধ্যমে অবহিত হয়েছে যে,তারা নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং ফ্রান্সে বসবাসকারীদের এবং যারা ফ্রান্সে যাবার পরিকল্পনা করছেন,সকলকে গনসমাবেশ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
প্রতিবেদনটি তৈরিতে অবদান রেখেছেন,জাকার্তা থেকে তিয়া আসমারা, কোয়ালালামপুর থেকে রাজলান রশিদ, ওয়াশিংটন ডিসি থেকে নানি ইউসুফ, ঢাকা থেকে কামরান রেজা চৌধুরি, নয়া দিল্লি থেকে রোহিত ওয়াধওয়ানি এবং ব্যাংকক থেকে পিমক রাক্কানাম।