প্রত্যাশার অধিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার,মাথাপিছু আয় ১৪৬৫ ডলার
2016.10.25
দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ঘর অতিক্রম করেছে। সরকার বলছে, চূড়ান্ত হিসাবে প্রবৃদ্ধি প্রাথমিক হিসাব ছাড়িয়ে গেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রাথমিক হিসাবে বলা হয়েছিল, প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। কিন্তু চূড়ান্ত হিসাবে দেশে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ, যা সরকার নিজের বড় সাফল্য বলে মনে করছে।
এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। তার আগের বছর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে অর্জিত হয় ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাওয়ার এই তথ্য জানান।
“উচ্চহারে এই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসী বিশেষ করে বেসরকারি খাতকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে দেশের সব মানুষের অবদান রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন,” সম্মেলনে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের সভায় জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়। নিউজরুম ফটো।
মুস্তাফা কামাল বলেন, বর্তমানে বিশ্বে যেসব দেশ ৬ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে, বাংলাদেশ এর অন্যতম।
তাঁর মতে, উচ্চ প্রবৃদ্ধির কারণেই দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ছে। গত অর্থবছরে দেশে বিদেশী বিনিয়োগ ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে বলে তিনি জানান।
মাথাপিছু আয় ১৪৬৫ ডলার
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৪৬৬ ডলার। এখন ১ ডলার কমে মাথাপিছু আয় হয়েছে ১ হাজার ৪৬৫ ডলার।
বর্তমানে প্রতি বছর দেশের একজন নাগরিকের আয়ের পরিমাণ (১ ডলার সমান ৭৮.২৭ টাকা ধরে) ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৬৫ টাকা ৫৫ পয়সা।
মন্ত্রী বলেন, “ডলারের দামের সঙ্গে তার তথ্যের গড়মিলে মাথাপিছু আয় এক ডলার কম হয়েছে। আমরা হিসাব করেছিলাম প্রতি ডলারের দাম ৭৮ টাকা ১৫ পয়সা ধরে। সেটি পরবর্তীতে ৭৮ টাকা ২৭ পয়সা হয়েছে। এ কারণে চূড়ান্ত হিসেবে মাথাপিছু আয় প্রাথমিক হিসাবের তুলনায় এক ডলার কম হয়েছে।”
জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি বাড়লে বাড়ে মানুষের মাথাপিছু বার্ষিক আয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৩১৪ ডলার। এক অর্থবছরের ব্যবধানে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৫১ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় বছরের ব্যবধানে ১১ হাজার ৮১৮ টাকা ৭৭ পয়সা বেড়েছে। এর আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ১৯০ ডলার।
কৃষি ও শিল্পে অর্জন ভালো
বিগত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জিডিপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৭৩ হাজার ২৮৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। যা এর আগের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল এক লাখ ৫১ হাজার ৫৮০ কোটি ২২ হাজার টাকা।
বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৫টি খাতের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কম অর্জিত হয়েছে সামাজিক এবং ব্যক্তিগত খাতে ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। তবে কৃষি খাতে জিডিপি অর্জন ভালো হয়েছে ৫ দশমিক ১২ শতাংশ।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি জিডিপি অর্জিত হয়েছে শিল্পখাতে ১৪ দশমিক ৪২ শতাংশ। অন্যদিকে হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট খাতে ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ অর্জন হয়েছে।
এ ছাড়া শিক্ষা খাতে ১১ দশমিক ৭১ শতাংশ, স্বাস্থ্য খাতে ৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ, প্রশাসন খাতে ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ জিডিপি অর্জন সম্ভব হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সবার সামগ্রিক প্রচেষ্টায় এ অর্জন সম্ভব হয়েছে।
“এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশ স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের সুফল পাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে গড়ে সাড়ে ৬ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার মধ্যেও প্রবৃদ্ধির এই ধারা ধরে রেখেছিল বাংলাদেশ,” বেনারকে জানান অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওই উপদেষ্টার মতে, এখন জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ঘর আতিক্রম করাটা ইতিবাচক। বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে অর্থনীতিতে আরও গতি সঞ্চার হবে। বিনিয়োগ বাড়বে; কর্মসংস্থান হবে এবং দেশের মানুষ এর সুফল পাবে।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রশ্ন
চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকারের প্রাক্কলিত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বিশ্বব্যাংক। সরকারের প্রাক্কলন অনুয়ায়ী, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ ধরা হয়েছিল, যা চূড়ান্তভাবে আরও বেড়েছে।
“জিডিপি প্রবৃদ্ধির সরকারি এ হিসাব মেলানো যায় না,” বেনারকে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের একজন অর্থনীতিবিদ। তবে তিনি জানান, সরকারের এই তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা হবে।