নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্রীর পুলিশের চোখে আঙ্গুল
2016.06.16
দেশজুড়ে জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ বাহিনী। এরই মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্রীর।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে স্কুল, কলেজ, আবাসিক এলাকাগুলোতে পোস্টার সেঁটে, প্রচারপত্র বিলি করছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্রীর। এসব পোস্টারে ফোন নম্বর এমনকি ই-মেইল ঠিকানাও দেওয়া রয়েছে।
এর মাধ্যমে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে আঙ্গুল দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা। তবে পুলিশ বলছে, জঙ্গি ওই সংগঠনের ওপর তাদের কড়া নজরদারি রয়েছে।
২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হিযবুত তাহ্রীরের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। গত প্রায় ছয় বছর ধরে নিষিদ্ধ থেকেও সংগঠনটির নেতা–কর্মীরা উগ্র ধর্মীয় মতবাদ প্রচারের কাজ করে যাচ্ছে।
পোস্টারে সরকারের সমালোচনা
রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, সদরঘাট, পুরান ঢাকা, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে হিযবুত তাহ্রীরের পোস্টার দেখা যায়। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করে সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে।
সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জাতির উদ্দেশ্যে ১৭ জুন বিশেষ আহ্বান জানানোর কথা বলা হয়েছে পোস্টারে। এই আহ্বান নিয়ে জল্পনা–কল্পনাও রয়েছে। কেউবা বলছে, এটা সংগঠনটির স্রেফ আওয়াজ ছাড়া কিছু নয়। তবে সতর্ক আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
১৭ জুন কথিত এই সংগঠনের কর্মীরা কোথায় জমায়েত হবে বা কি ধরনের কর্মসূচি পালন করবে সে সম্পর্কে পোস্টারে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। ওই পোস্টারের নিচের দিকে একটি মোবাইল নম্বর ও ই-মেইল ঠিকানা দেওয়া আছে।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযানে হিযবুত তাহ্রীরের কয়েকজন সদস্য ধরা পড়লেও সংগঠনটির এই কর্মসূচি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতে পারেনি। তবে শহরের বিভিন্ন স্থানে সংগঠনটির লাগানো পোস্টারগুলো তুলে ফেলেছে পুলিশ।
এর আগে ২০১৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর হিযবুত তাহ্রীরের সদস্যরা সর্বশেষ ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেয়।
এদিকে হিযবুত তাহ্রীরের মতো নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনকে দমনে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে। অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এদের কঠোরভাবে দমন করতে না পারলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাহফুজুল হক মারজান বেনারকে বলেন, “হিযবুত তাহ্রীর নিষিদ্ধ হলেও তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি সংগঠন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মধ্যে এই পোস্টার লাগিয়ে তারা পুলিশকে বার্তা দিচ্ছে যে, সংগঠনটি থেমে নেই। তারা তাদের মতবাদ প্রতিষ্ঠার কাজ করে যাচ্ছে।”
সরকার হিযবুত তাহ্রীরের মতো নিষিদ্ধ গোষ্ঠীকে দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ভার্চুয়াল জগতে সংগঠনটির প্রচারনা থেমে নেই। এটা মানুষকে আকর্ষণে যথেষ্ট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চোখের সামনে অভিযান চালানোর পাশাপাশি ভার্চুয়াল বা ইন্টারনেট জগতেও অভিযান চালাতে হবে।”
মূলতঃ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজেদের মতবাদ ছড়িয়ে দেওয়াই সংগঠনটির মূল লক্ষ্য।
দেশের বেশ কয়েকটি বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ওই নিষিদ্ধ সংগঠন পরিচালিত হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
হিযবুত তাহ্রীর লাগানো পোস্টার ও কর্মসূচি সম্পর্কে পুলিশ কতটুকু ওয়াকিবহাল জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বেনারকে বলেন, “তাদের পোস্টার সম্পর্কে আমরা জেনেছি। সাঁড়াশি অভিযানে সংগঠনটির বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা-কর্মী আটক হয়েছে।”
এদিকে ইসলামী চিন্তাবিদরা বলছেন, হিযবুত তাহ্রীরের মতো যারা ইসলামের নামে মানুষ হত্যা করে তারা প্রকৃত ইসলামের অনুসারী হতে পারে না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরামের সভাপতি মুফতি এনায়েত উল্লাহ বেনারকে বলেন, “গুপ্ত হত্যার মাধ্যমে মানুষ হত্যা বা অকাতরে মানুষ মারাকে ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। ইসলাম সব সময় শান্তির পক্ষে ছিল এবং আছেও। যারা ইসলামের নামে মানুষ হত্যা করছে, তারা ইসলামের ক্ষতি করার জন্যই তা করছে।”