হিযবুত তাহরীরের প্রধান মহিউদ্দিনসহ ছয়জনের বিচার শুরু
2016.09.27
প্রায় ছয় বছর পর নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আহমেদসহ ছয়জনের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে বাংলাদেশে একটি আদালত। এই প্রথম সংগঠনটির কোনো নেতার বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলো।
মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা এসব আসামিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম আইনজীবী তাপস পাল সাংবাদিকদের জানান, “আগামী ২৪ অক্টোবর এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।”
মহিউদ্দিন আহমেদ ছাড়া এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন; তানভীর আহমেদ, তৌহিদুল আলম ওরফে চঞ্চল, সাইফুর রহমান ওরফে রাজিব, কাজী মোরশেদুল হক এবং মো. আবু ইউসুফ আলী। এদের মধ্যে মোরশেদুল হক হিযবুত তাহরীরের যুগ্ম সমন্বয়কারী ও বাকিরা দলের সদস্য।
অভিযোগ গঠনের শুনানির সময় ছয় আসামির মধ্যে মহিউদ্দিন আহমেদ, এমএ ইউসুফ খান, সাইদুর রহমান ও কাজী মোরসেদুল হক আদালতে উপস্থিত ছিলেন। নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে সুবিচার চান তারা।
আসামি তানভীর আহাম্মদ ও তৌহিদুল আলম চঞ্চল অভিযোগ গঠনের শুনানিতে হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে সময়ের আবেদন করেন। তাদের সে আবেদন নাকচ করে দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।
মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল উত্তরা থানার তিন নম্বর সেক্টরের তাকওয়া মসজিদের সামনে নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীরের সদস্যরা সরকার বিরোধী লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ করে। এসময় জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে সেখানে পেট্রোল বোমা নিয়েও উপস্থিত হয় তারা।
ওই ঘটনায় তানভীর আহমেদ, সাইদুর রহমান রাজীব এবং তৌহিদুল আলমকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে দলের প্রধান সমন্বয়কারী মহিউদ্দিনের প্ররোচনায় তারা সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন বলে স্বীকারোক্তি দেয়।
পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সে বছরের ২০ এপ্রিল ফার্মগেটে নিজ বাসভবন থেকে মহিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের উপপরিদর্শক আরমান আলী উত্তরা মডেল থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এর প্রায় তিন বছর পর তদন্ত শেষে আদালতে ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এ মামলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না থাকায় অনুমোদনের জন্য আদালত তা ফেরত পাঠালে গত ৬ জুলাই ওই অনুমোদন পাওয়া যায়। পরে ৬ সেপ্টেম্বর অভিযোগ আমলে নেয় আদালত।
এর আগে ২০০৯ সালের ২২শে অক্টোবর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসের ওপর হামলার ঘটনার পরপরই রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার অভিযোগে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার।
হিযবুত তাহরীরের প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) শিক্ষক ছিলেন। তবে মহিউদ্দিন ছুটিতে আছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এম আমজাদ আলী বেনারকে জানান “তাঁর (মহিউদ্দিন) বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বিচার শেষে আদালতের রায়ের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
মহিউদ্দিন আহমেদ, ফাইল ছবি। নিউজরুম ফটো।
হিযবুতের সঙ্গে সম্পর্ক নেই: মহিউদ্দিন
সম্প্রতি এক বিবৃতিতে হিযবুত তাহরীর সঙ্গে নিজের কোনো সম্পর্ক না থাকার ঘোষণা দিয়েছেন মহিউদ্দিন আহমেদ।
নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশের সাবেক এই প্রধান সমন্বয়কারী গত ১৪ জুলাই লেখা এই বিবৃতিতে জানান, হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ২০০৯ সালের ২৩ অক্টোবর থেকে ২০১০ সালের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি নিজের বাসভবনে গৃহবন্দী ছিলেন। ২০১০ সালের ২১ এপ্রিল তাকে গ্রেপ্তার করে ফেব্রুয়ারি-মার্চে দায়ের হওয়ার বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
যেসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওই মামলাগুলো করা হয়, সে সময় তিনি গৃহবন্দী অবস্থায় ছিলেন বলে দাবি করেন।
এসব মামলায় আদালতের স্থায়ী জামিনে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পেয়ে তিনি কর্মস্থলে যোগদানপত্র দিয়েছেন বলে জানান।
ওই বিবৃতিতে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমি ওই সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী বা মুখপাত্র কোনো কিছুই নই। এমনকি সাধারণ সদস্যও নই।”
ভবিষ্যতে কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হবেন না বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেন মহিউদ্দীন।
বিলম্বিত বিচার কাম্য নয়
নিষিদ্ধ ঘোষিত এই সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিচার শুরু হতেই ছয় বছর পার হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা। তাঁদের মতে, বিলম্বিত বিচারের সুযোগে অপরাধীরা অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
এ প্রসঙ্গে জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিশ্লেষক আইন ও সালিস কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) নূর খান বেনারকে বলেন, “বিলম্বিত বিচার কখনো সুফল বয়ে আনে না। বিশেষ করে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের নেতাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার বিলম্বিত হওয়া কখনোই কাম্য নয়।”