মানবপাচারের অভিযোগে মালয়েশিয়ায় এক বাংলাদেশির কারাদণ্ড

বেনার নিউজ স্টাফ
2016.06.09
MY-BD-Human-Smaggling620.jpeg মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পার্লিসের জঙ্গল থেকে রয়্যাল মালয়েশিয়ান পুলিশ মৃৎদেহ উদ্ধার করছে। ২৮ মে, ২০১৫।
এএফপি

বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার একটি আদালত নূরুল  ইসলাম (৩২) নামক এক বাংলাদেশি মানবপাচারকারিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। তিনি এমন এক আদালতে দোষী সাব্যস্থ হলেন যার খুব নিকটে গতবছর মে মাসে ১০৬ জন বাংলাদেশির গণকবর আবিষ্কৃত হয়েছিল।

গতবছর মালইয়েশিয়ায় অভিবাসীদের গণকবর আবিষ্কৃত হওয়ার পর মালয়েশিয়ার আদালত এই প্রথম কোনো বাংলাদেশিকে ১০ বছেরর কারাদণ্ড দেয়।

মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলের পার্লিস রাজ্যের হাইকোর্ট নূরুল ইসলামকে মালয়েশিয়ার ওয়াংকেলিয়ান অঞ্চল দিয়ে মানবপাচারের তিনটি অভিযোগে দোষীসাব্যস্থ করে এই দণ্ডাদেশ দেয়।

মালয়েশিয়ার একটি দৈনিক পত্রিকা ‘দি ডেইলি সান’-এর রিপোর্ট অনুসারে ২০১৪-র অক্টোবর থেকে ২০১৫-র মে মাস পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়।

জুরিশিয়াল কমিশনার আবু বকর কাতার ২০০৭ সালের চোরাচালান ও মানবপাচার অপরাধ আইনের অধীনে মানবপাচারের তিনটি অভিযোগে অভিযুক্ত নূরুল ইসলামকে ১০ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন।তার গ্রেপ্তারের দিন থেকে অর্থাৎ ২ মে ২০১৬ থেকে এই রায় কার্যকর হবে।

এছাড়া আরোও তিনজন, দুইজন রোহিঙ্গা ও একজন থাই ব্যাক্তিকেও মালয়েশিয়ার আদালত মানবপাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে,তবে তাদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোন দণ্ডাদেশ প্রদান করেনি।

স্থানীও পত্রিকা ‘দি ডেইলি সান’-এর রিপোর্ট অনুসারে, আদালতে শোনানির সময় নূরুল ইসলামকে গোলাপি রঙয়ের একটি বিশেষ ধরণের মালে পোশাক বাজু মেলায়্যু ও কপিয়াহ পরিহিত অবস্থায় বিচারকের সামনে  উপস্থিত করা হয়। এই সময় একজন অনুবাদকের সাহায্যে এই রায় তাকে তার মাতৃভাষা বাংলায় আনুবাদ করে শোনান হয়। তবে এই সময় আদালতে তার পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।

জোরপূর্বক অপরাধ

শোনানির সময় নরুল ইসলাম দাবী করেন,তিনি অন্য একটি দালালচক্রের জোরজবস্তিতে বাধ্য হয়ে এজাতীয় অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন।তিনি জানান, যদি তিনি তাদের আদেশ অনুসারে কাজ করতে রাজি না হতেন তবে তাকে মারধর করা হোত।

স্থানীয় পত্রিকা ‘দি নিউ স্টেইটস টাইমে’র প্রতিবেদন অনুসারে ,এই কাজ থেকে নরুল ইসলামের মাসিক আয় হত ১৮০০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত (৪৪৫ইউএস ডলার) যা ৩৫,৬০০ বাংলাদেশি টাকার সমান।

নরুল ইসলাম আদালতে তার সাজা মওকুফের প্রার্থনা করেন।তিনি বলেন,দেশে তার ছোট তিনটি বাচ্চা ও বৃদ্ধ পিতা রয়েছেন, তিনি ব্যতিত যাদের আর দেখাশুনা করার কেউ নেই। তিনি দি ডেইলি সান-এর প্রতিবেদকে বলেন,আমি শুধু দেশে ফিরে যেতে চাই’।

উল্লেখ্যগতবছর মে মাসে মালয়েশিয়ান পুলিশ থাই-মালয়েশিয়া সীমান্তের কয়েকশ মিটার দূরে স্থাপিত বুকটি জেন্টিং পেরাহ ও বুকটি ওয়াং নামক দুটি অবৈধ অভিবাসী বন্দি শিবিরের কাছ থেকে ১০৬টি মৃতদেহ উদ্ধার করে, যাদের জাতিগত রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি বলে ধারণা করা হয়। এর আগে থাইল্যান্ডের সীমান্তের কাছেও ৩৬টি মৃতদেহ ধারণকারি একটি গনকবর আবিষ্কৃত হয়েছিল।

গতবছর মে মাসে মালয়েশিয়ায় গণকবর আবিষ্কৃত হওয়ার পর কোয়ালালামপুর ভিত্তিক একটি অভিবাসী অধিকার সংরক্ষণ সংস্থা ‘টেনাগানিটা’র একজন কর্মী অ্যাডভোকেট গ্লোবেন দাস জানান, “মানব পাচার দক্ষিণ থাইল্যান্ডের একটি বড় ব্যবসা। প্রতিদিন থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার মানব পাচার হয়”।

ওই অঞ্চলের একটি এনজিও ‘ফরটিফাই রাইটস’ এর পরিচালক ম্যাথু স্মিথ এবছর মে মাসে বেনার নিউজকে এক সাক্ষাৎকার প্রদানকালে বলেন, কোন ভাবে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে।গতবছর এইদিনে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা থাইল্যান্ডের নির্যাতন শিবিরে আটক ছিল। আজ ওইসব শিবিরের কোনো অস্তিত্ব নেই”।

তিনি আরও বলেন,থাইল্যান্ডের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন ও মিয়ানমারের রাজনৈতিক পটভূমি পরিবর্তনের ফলে তা সম্ভব হয়েছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।