বাংলাদেশে ঘাঁটি গড়ে ভারত ও মিয়ানমারে জিহাদ করবে আইএস

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.04.15
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
160415-BD-bangladesh-security-620.jpg বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ(বিজিবি)-এর সদস্যরা সদা সতর্ক অবস্থানে আছেন।বাংলাদেশ সরকার বরাবরের মতই বাংলাদেশে আইএস-এর অবস্থান অস্বীকার করে আসছে।
এএফপি

ভবিষ্যতে হিন্দু অধ্যুষিত ভারত ও বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারে জিহাদ পরিচালনা করতে কৌশলগত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে শক্ত ঘাঁটি গড়তে চায় আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

সংস্থাটির মুখপাত্র সাময়িকী ‘দাবিক’-এর ১৪তম সংস্করণে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন আইএসের কথিত বাংলাদেশ প্রধান শেখ আবু-ইব্রাহিম আল-হানিফ। গত বুধবার দাবিক-এর ওই সংস্করণটি প্রকাশ হয়।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বাংলাদেশকে ব্যবহার করে প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও মিয়ানমারে হামলার সুযোগ নেই। তবে আইএসের এ ধরনের হুমকি হালকাভাবে নেওয়া ঠিক হবে না।

ভারত মিয়ানমারে জিহাদ শুরু করতে দেরি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আল–হানিফ বলেন, কাছের শত্রু বাংলাদেশ সরকার এবং ভুয়া মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কারণেই দূরের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করা যাচ্ছে না।

দাবিক এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের পর সরকারের পক্ষ থেকে শুক্রবার আবারও দাবি করা হয়েছে, দেশে আইএসের অস্তিত্ব নেই বলে। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ সরকারের নীতিনির্ধারকেরা এমন দাবি করে আসছেন।

তবে বিভিন্ন মুক্তমনা লেখক, ব্লগার, বিদেশি নাগরিক ও সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গকে হত্যা বা হামলার পরই বিবৃতির মাধ্যমে হামলার দায় স্বীকার করছে আইএস। সরকারও যথারীতি বলে আসছে, বাংলাদেশে ওই সংগঠনের অস্তিত্ব নেই।

যে পরিকল্পনার কথা বললেন আবু-ইব্রাহিম

দাবিক-এ প্রকাশিত দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে শেখ আবু-ইব্রাহিম আল-হানিফ বাংলাদেশে আইএসের চালানো অভিযানের পক্ষে গর্বের সঙ্গে নানা মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “ইসলামবিরোধী ও নাস্তিকদের অনেকেই এখন ভীতসন্ত্রস্ত। মুজাহিদীনদের কাছ থেকে হুমকি পাওয়ার কথা বলার মাধ্যমে তাদের ভীতির কথা পরিষ্কার হয়ে গেছে।”

ভবিষ্যতে ও এ ধরনের হামলা চলতে পারে, এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, “নাস্তিক ও মুরতাদদের গলা কাটার জন্য আমাদের যোদ্ধারা এখন চাকু ধার দিচ্ছে।”

বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আইএসের এই কথিত নেতা বলেন, “দলটির নেতারা শুধু মিষ্টি কথা বলে তাদের নিরীহ অনুসারীদের ধোঁকা দিচ্ছে”

বাংলাদেশে ঘাঁটি গড়তে চাওয়ার যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ থেকেই ভারত ও মিয়ানমারে জিহাদ পরিচালনা সুবিধাজনক হবে।”

এ জিহাদের লক্ষ্য হিসেবে ‘মুসলিম হত্যার প্রতিশোধ’ এবং ‘এই অঞ্চলে আইএসের খিলাফত প্রতিষ্ঠাকে’ তুলে ধরেন তিনি।

আল-হানিফ বলেন, ভারতের পূর্বদিকে বাংলাদেশ এবং পশ্চিম দিকে খোরাসান (আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে আইএস-এর শাখা পুরো অঞ্চলটিকে খোরাসান প্রদেশ নামে ডাকে)। বাংলাদেশকে শক্ত ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে পারলে সেখান থেকে এবং খোরাসান থেকে সমানভাবেই ভারতে গেরিলা আক্রমণ পরিচালনা করা যাবে। এ ছাড়াও বাংলাদেশে ঘাঁটি করতে পারলে সেখান থেকে পরে মিয়ানমারেও জিহাদ পরিচালনা করা যাবে।

আইএসের অস্তিত্ব নেই:  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কোনো ঘাঁটি বাংলাদেশে নেই বলে সাফ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। একইসঙ্গে বাংলাদেশে ঘাঁটি বানিয়ে প্রতিবেশী কোনো দেশে আক্রমণের সুযোগও কাউকে দেওয়া হবে না বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মত দেন তিনি।

গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আইএসের কোনো ঘাঁটি বাংলাদেশে নেই। আইএসকে হয়তো অল্প দু-একজন বিশ্বাস করতে পারে। কোনো বিদেশি মতাদর্শের লোক এই দেশে ঘাঁটি গেড়ে অন্য দেশে আক্রমণ করবে, সেটা হবে না বা হতে দেওয়া হবে না।”

বার্তাটি তাৎপর্যপূর্ণ, খতিয়ে দেখা উচিত

আইএসের অস্তিত্বকে সরকার উড়িয়ে দিলেও নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা এটাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন। তাঁরা বলছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।

“আইএসের সাময়িকীতে দ্বিতীয়বারের মত বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এসেছে। তবে এবারই বাংলাদেশকে ঘিরে তাদের পরিকল্পনার কথা বিশদভাবে এসেছে। এটা তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা,” বেনারকে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান।

তিনি বলেন, “আল-হানিফ তার সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে ধরনের তথ্য ও পারিপার্শ্বিকতা তাদের সপক্ষে ব্যবহার করেছে, তাতে করে বোঝা যায়, এ দেশে তাদের মতাদর্শের লোকজন আছে। অন্যথায় এভাবে বিস্তারিত পরিকল্পনা করা সম্ভব নয়।”

বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব নেই মর্মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মারজান বলেন, “মন্ত্রীর কাছে থাকা তথ্যের ভিত্তিতেই তিনি এ ধরনের কথা বলেছেন। তবে আমার মনে হয়, বিষয়টি নিয়ে আরও জোরদার অনুসন্ধান করা জরুরি। কোনোভাবেই এটাকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।”

তবে ওই শিক্ষকের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমান্ডার (অব:) ইশফাক ইলাহি চৌধুরী বেনারকে বলেন, “অতীতেও এ ধরনের কথা এসেছে। এটা ধর্তব্যে নেওয়া ঠিক হবে না”

বাংলাদেশকে ব্যবহার করে ভারত ও মিয়ানমারে হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সেটা সম্ভব হবে না। কারণ, বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে যথেষ্ট সহযোগিতা রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে স্পষ্ট করে বলাই রয়েছে, জঙ্গিবাদের জন্য বাংলাদেশের মাটি কোনোভাবেই ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।”

বরং ভারত কিংবা মিয়ানমারের দুর্গম অঞ্চলে এ ধরনের সংগঠন ঘাঁটি করতে পারে, যা থেকে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।