বিতর্কিত তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিরুদ্ধে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রুল


2015.03.24
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
Ind-SC সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্কিত মন্তব্য করলে যে আইনের বলে গ্রেফতার করার সুযোগ থাকতো পুলিশের, তা ‘অসাংবিধানিক’ বলে রুল জারি করেছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। ছবিঃ ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট,২৭ আগষ্ট ২০১৪
এএফপি

ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্কিত মন্তব্য করলে যে আইনের বলে গ্রেফতার করার সুযোগ থাকতো পুলিশের, তা ‘অসাংবিধানিক’ বলে রুল জারি করেছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।

বাক স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন করছেন এমন লোকেরা এই রায়কে নিজেদের বিজয় হিসেবে দেখছেন।

গত মঙ্গলবার দেওয়া এই রায়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বলেন, ২০০৯ সালে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইন সংশোধন করে যোগ করা ৬৬এ ধারাটি সংবিধানসম্মত নয়। রায়ে বিচারক আর. এফ. নারিমান বলেন ‘৬৬এ ধারাটি সংবিধান সম্মত নয়। এটি বাতিল করতে আমাদের কোনো দ্বিধা নেই। ধারাটির মাধ্যমে মানুষের জানার অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

সুপ্রীম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবি ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ বসুন্ধরা পাঠক মাসুদি বেনার নিউজকে বলেন, "এই সিদ্ধান্ত খুবই ভালো, তবে দেখতে হবে দেশব্যাপি ইন্টারনেটের কোনো অপব্যবহার যাতে না হয়। এই ঐতিহাসিক রায় জনস্বার্থের জন্য ও সামাজিক বিভিন্ন ইস্যুতে জনমত গঠনে ব্যপক অবদান রাখবে"।

তবে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে অনলাইনে ভুলভাবে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার ও অপব্যবহার হবার ব্যপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। নয়াদিল্লির বিনায়ক হাসপাতালের ডায়টেশিয়ান ডঃ রেশমি দিভান বেনার নিউজকে বলেন, " ফ্রিডম ও স্পীচের কিছু বিধি-নিষেধ যদি না থাকে তাহলে কেউ কেউ এর সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন ইসুউতে বা ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে উস্কানী কিংবা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার করতে পারে"।


২০১২ সালে মুম্বাইয়ে একজন কট্টর রাজনীতিবিদের মৃত্যুর পর মুম্বাইয়ের অর্থনৈতিক কেন্দ্রস্থল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টের জের ধরে দুই নারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বাতিল ঘোষণা করেন আদালত।
তবে ওই মামলার জের ধরে ভারতে অনলাইনে সেন্সরশিপ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও বিতর্ক তৈরি হয়। ওই সময়ই শ্রেয়া সিংহল নামে এক শিক্ষার্থী ৬৬এ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেন। আজকের রায়কে তিনি দেখছেন ‘বিরাট বিজয়’ হিসেবে। তিনি বলেন ‘রাজনীতিবিদদের আলাদা এজেন্ডা থাকতে পারে, কিন্তু যেকোনো আইনই জনগণের জন্য হওয়া উচিত’।

২০১২ সালে যে দুজন নারী গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তাঁদের একজনের বাবা ফারুক দাধা আদালতের এই রুলিংকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, আইনের ওই ধারাটি ‘কালো আইন’। তিনি বলেন ‘আমার মেয়েসহ যারা এ আইনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, এ কৃতিত্ব সবার’।

তবে সরকার এ আইনটির প্রয়োগে নির্দেশনা তৈরি করেছিল। আইনটিকে যাতে অসংবিধানসম্মত ঘোষণা করা না হয়, এ জন্য নিজেদের পক্ষে যুক্তিতর্কও উপস্থাপন করেছে আদালতে। তাদের যুক্তি ছিল আইনটি বাতিল হলে মানহানির সম্ভাবনা বাড়বে। কিন্তু আদালত বলেন, আইনটিতে অশ্লীলতার সংজ্ঞাসহ বেশ কিছু ধারা রয়েছে, যেগুলো নির্দিষ্ট নয়। ফলে এর অপব্যবহার হতে পারে।

২০০৯ সালের পর তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারার আওতায় বেশ কিছু লোককে আটক করা হয়। যদিও তাদের কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়নি। গত সপ্তাহেই ভিকি খান নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছিল পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি একজন মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। পরে ওই মন্ত্রী সেটি অস্বীকার করলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও পরে অভিযোগটি তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু ভিকি ওই ঘটনাটি তাঁর নিজের ও পরিবারের জন্য ‘দুঃস্বপ্ন’ ছিল বলে মনে করেন।

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবি শংকর প্রসাদ আজকের এ রায়ের পর বলেন, এ আইনটি সুস্থ সমালোচনাকে রোধ করার জন্য করা হয়নি। তবে তিনি ভিকি খানের আটকের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, রাজনীতিবিদদের সমালোচনা ‘সহ্য’ করাটা শেখা উচিত। পাশাপাশি ৬৬এ ধারা ব্যবহার করে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রেও সতর্ক হওয়া উচিত।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।