ভারতে ‘জমি অধিগ্রহন বিল’ বিরোধীদল ও কৃষকদের বিরোধিতার মুখে

নয়াদিল্লি থেকে আলতাফ আহমেদ
2015.04.22
Ind-farmar নয়াদিল্লিতে কৃষকরা জমি অধিগ্রহন বিলের বিরুদ্ধে অবস্থান ধর্মঘট করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ১৫ এপ্রিল,২০১৫
এএফপি

বিতর্কিত অর্ডিন্যান্স জারি করে সরকার কৃষকদের সম্মতি ছাড়াই জমি অধিগ্রহন করতে যাচ্ছে।

মাত্র ১০ মাস হলো বিজেপি জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে যাচ্ছে।

বিরোধীদল সমূহ ও বিক্ষুব্ধ কৃষকদের বিরোধিতার মুখে পড়েছে ‘জমি অধিগ্রহন বিল-২০১৩’, যেটি মোদী সরকার গতমাসে সামনে এনেছে। এই বিল চাষাবাদের জমিতে শিল্প স্থাপন ও অবকাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে কৃষকদের সম্মতি ছাড়াই সরকারকে জমি অধিগ্রহনের ক্ষমতা দেবে।

গত সোমবার সংসদ শুরু হয় বাজেট অধিবেশনের জন্য, এতে কংগ্রেস পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন যে, কৃষকদের উপেক্ষা করেই সরকার ‘কৃষক-বিরোধী’ বিল আনছেন।তিনি বলেন, “দেশের ৬০ ভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল, তাদেরকে আঘাত করে সরকার এই বিল নিয়ে এগুচ্ছে।দিনে দিনে জমির দাম আকাশ-ছোয়া হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সরকার  তাদের করপোরেট বন্ধুদের শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে জমি পাইয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু ফার্মাররা করপোরেট বসদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী, তারা বিলাসী গাড়িতে চড়লেও”।

কংগ্রেস ও তাদের মিত্র সমাজবাদী দল, তৃনমূল কংগ্রেস, ন্যাশনালিস্টিক কংগ্রেস পার্টি এবং বাম জোট মিলে এই বিলের বিরোধিতা করছে। সরকার এই প্রতিবাদের মুখে নিম্নকক্ষ লোকসভায় বিলটি সংশোধিত আকারে তোলার চিন্তা করছে।

এর আগে রোববার দিল্লির রামলীলা ময়দানে সারা দেশ থেকে আসা বিক্ষুব্ধ কৃষকদের নিয়ে এক প্রতিবাদ সভা করেছে।সেখানে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন “এই ল্যান্ড বিল কৃষকদের স্বার্থে আঘাত করবে”।

কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন প্রতিবাদ সভা উত্তর-প্রদেশ সহ কয়েকটি প্রদেশে অনুষ্ঠিত হয়।

‘কৃষকরা বিক্ষুব্ধ’

কৃষকদের সংগঠন অল ইন্ডিয়া কিষাণ সভা এই বিলের কড়া নিন্দা জানিয়েছে। এর জেনারেল সেক্রেটারি হান্নান মুল্লাহ বেনারকে জানান, “এই বিলের সবচেয়ে বড় ত্রুটি হচ্ছে, কৃষকদের জমির মালিকানার অধিকার কেড়ে নেবে এবং সরকার এর একটা দাম ধরে দিয়ে জমিটা কেড়ে নেবে, প্রতিটি কৃষক জমি বিক্রি করে অর্থ অর্জনের চেয়ে এতে প্রতি বছর ফসল ফলিয়ে বেশি লাভজনক মনে করে”।

রাজ্যসভায় বিলের তীব্র বিরোধিতার কারণে সরকার বিলটি অর্ডিন্যান্স থেকে আইনে রুপান্তর করতে পারেনি। রাজ্যসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই।তবে নিম্নকক্ষ লোকসভায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় গত ১০ মার্চ বিলটি সেখানে পাশ হয়।

এদিকে বিজেপির স্পোকসম্যান নিলিন কোহলি বেনারকে বলেন, “কৃষকদের স্বার্থে সরকার বিলটিতে কি পরিবর্তন আনা যায় এ নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। কিন্তু বিরোধীদলগুলো দলীয় ফায়দার জন্য নাটক করছে”। তারমতে সরকার কৃষকদের সমস্যা বোঝে, সম্প্রতি অসময়ে বৃষ্টিপাত ও শিলাবৃষ্টির জন্য তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেবার জন্য অর্থ সাহায্য করেছে।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির প্রফেসর ড সালাহ-উ-দিন সিদ্দিকী বলেন, “সংবিধান সবাইকে সম্পদ রাখার অধিকার দিয়েছে। জমি বা সম্পদ কেড়ে নেয়ার কারো অধিকার নাই। বিলে কোনো বিধি রাখা হয় নাই যেখানে সরকারকে জমি অধিগ্রহনে বিরত রাখবে। এটি কৃষকদের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি, এটিকে অবশ্যই সংশোধন করে কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে”।

সরকার রাজ্য সভায় আগামি ২৩ এপ্রিল সংসদ বসবার পর আবারো বিলটি তোলার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু বিরোধী দলগুলো বলছে তারা বিলটি যাতে আইনে পরিনত করতে পারে সেজন্য বাধা দেবে।

এদিকে, বিজেপির সিনিয়র নেতা সাম্বিত পাত্র বেনারকে বলেন, “ কংগ্রেস ৬০ বছর ধরে দেশ শাসন করে আসছে, কিন্তু কৃষকদের কোনো লাভ হয় নাই। বরং বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসে কৃষিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য সাহায্য যুগিয়েছে”। তারমতে রাজীব গান্ধী ২ মাস ধরে রাজনীতির মাঠে অনুপস্থিত ছিলো, হঠাত তিনি কৃষদের প্রতি দরদি হয়ে এই ইস্যু নিয়ে নেমে পড়েছেন।

কৃষকরা এই বিলের বিরোধিতা করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানাভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। কেউ কেউ দলবদ্ধভাবে বিলের পানিতে নেমে ১১ দিন ধরে একটানা অবস্থান করছেন। কেউ বা জমিতে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। দুই-এক জায়গায় আত্নহত্যার হুমকির কথাও বলা হচ্ছে। গত বুধবার দিল্লির এক প্রতিবাদ সভায়  তিন সন্তানের পিতা এক কৃষক প্রকাশ্যে আত্নহত্যা করেছেন।



মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।