উপকুলে অবাধে মাছ ধরছে বিদেশি ট্রলার, পশ্চিম বঙ্গে মাছের সংকট
2016.02.12
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভারতের পূর্বাঞ্চলের সমুদ্র উপকুলজুড়ে পরিবেশ ধ্বংশকারী উপকরণসহ বিভিন্ন দেশের মাছধরা ট্রলারগুলি মাছের স্বাভাবিক প্রজননকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে।
ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ফিশারিজ ইন্ড্রাস্ট্রিজ-এর প্রেসিডেন্ট প্রনব কুমার কার বেনার নিউজকে বলেন, “ বিদেশি ট্রলার বিশেষ করে বাংলাদেশ ও তাইওয়ানের ট্রলারগুলি অবৈধভাবে বে অফ বেঙ্গলের ভারতের জলসীমায় ঢুকে পড়ছে, সেখানে থাই ট্রলার-ও আসছে”।
তিনি জানান, “ ট্রলারগুলো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, তাতে সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত মাছ জালে ধরা পড়ছে, এই পদ্ধতিতে প্রচুর মাছ তুলে নিচ্ছে”।
কার জানান, ভারতীয় জেলেরা অনবরত মাছধরার সময় তাদের হাতে বন্দী হচ্ছে। জোর করে তাদের কাছে শিকার করা মাছ বিক্রি করতে বাধ্য করছে। তখন তাদের উপায় থাকছে না।
ফেডারেশন সংবাদ সম্মেলন করে এ সপ্তাহে জানিয়েছে, বে অফ বেঙ্গলে কোনো টহল না থাকায় বিনা বাধায় এইসব মাছ ডাকাতি চলছে। এরফলে ভারতীয় বাজারে মাছের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
উপকুলের তলদেশ ছেঁকে নেয়ার মাধ্যমে মাছ ধরার সমালোচনা করেছেন পরিবেশ সংরক্ষণকারীরা। তারা জানান এতে সাগর তলদেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
জাতিসংঘ ২০০৬ সালের এক প্রতিবেদনে বলেছিলো, বিশ্বব্যাপি ৯৫ ভাগ সমুদ্রের তলদেশের ও ইকো-সিস্টেমের ক্ষতি হয়েছে তলানি ছেকে তোলা প্রযুক্তির কারণে।
কলকাতার পরিবেশবাদী ইনাকশি সিনহা রায় জানান, বেশ কয়েকটি দেশ এই তলানী ছাকা পদ্ধতির উপর নিশেধাজ্ঞা জারি করেছে। থাইল্যান্ড তার মধ্যে একটি দেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত বছর এ ব্যাপারে সতর্ক করার পর তারা এই ব্যবস্থা নেয়।
একজন নৌ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে জানান, বিদেশি অবৈধ মাছধরা নৌকাগুলো ভারতীয় উপকুল রক্ষীদের ঘুষ দিয়ে অবাধে মাছ ধরে যাচ্ছে। কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এ সম্পর্কে তাদের বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করেও তাদের কারো সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
সুন্দরবনের সন্নিকটে জেলিয়াখালির মাছ শিকারী নির্মল মাইতি বেনারকে জানান, উপকুলে জোর করে মাছ কেড়ে নেয়া হচ্ছে হর হামেশা। মূলত বাংলাদেশ থেকেই তারা আসছে। তারা যখন নৌকা থামাতে বলে তখন থামাতেই হয়, নতুবা জীবন নাশের ভয় থাকে।
তিনি জানান, “ এর আগে কয়েকজন জেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে পণবন্দী করে রাখা হতো, টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিতো। এখন ওরা মাছ লুট করে নিয়ে যায়”।
তারমতে, এভাবে বিদেশি ট্রলারগুলোর ব্যপকভাবে মাছধরা ভারতীয় জেলেদের জন্য বড় সমস্যা সৃষ্টি করছে, মাছের আকাল তৈরি করছে।
আরো এক জেলে পশ্চিম বঙ্গের সন্দেশখালির সুন্দর দাস কয়েক বছর আগে তার মাছ ধরার সময় বন্দুকের সামনে বন্দী দশার কথা জানান, অনেক কষ্টে সেবার পালিয়ে বাঁচেন।
দাস জানালেন, “এইসব হামলা আমাদের মতো ছোট জেলেদের জন্য বিপদ সৃষ্টি করেছে”।
কলকাতার মাছ ব্যবসায়ী বিশ্বজিত মন্ডল জানান, “এভাবে অবৈধ মাছ শিকারের ফলে রাজ্যে মাছের সরবরাহ কমে যাবে। আর একবার সাগরে মাছ শুন্য হয়ে পড়লে বাঙ্গালির সাধের মাছের দামও আকাশ ছোঁয়া হয়ে যাবে। যা ইতোমধ্যে দেখা দিচ্ছে। যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে সময় গেলে মাছের সংকট আরো প্রকট হয়ে উঠবে”।