নাম পাল্টেও কি মুক্তি পাবেন বীরভূমের জেলাশাসক?
2015.12.14
নামে কী আর যায় আসে, প্রশ্ন করেছিলেন প্রাচীন কবি।
সত্যিই, গোলাপকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন, তার গন্ধটি অবিকল থাকে। অমিতাভ বচ্চনকে শাহরুখ খান বলে ডাকলেও তাঁর উচ্চতার এক ইঞ্চিও হেরফের হয় না।
পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার জেলাশাসক অবশ্য কোনও ভাবেই একমত হবেন না। তাঁর নামই তাঁর বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি নিয়ে, আদালতে হলফনামা পেশ করে নিজের নাম বদলে ফেললেন তিনি।
কেন? পরিবর্তনের আগে যে তাঁর নাম ছিল পি মোহনদাস করমচন্দ গান্ধী!
জাতির জনকের নামে নাম। তার ধাক্কা সামলানো কি সহজ কথা? সহকর্মীদের হাজার মস্করার সম্মুখীন হতে হচ্ছিল প্রতি দিন। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মিবর্গ দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক বললেন, “ভদ্রলোক বেশ বিচলিতই ছিলেন তাঁর নাম পরিবর্তনের আগে।”
শেষ পর্যন্ত এই মাসের গোড়ায় কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ মন্ত্রক এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেয়, অতঃপর তিনি নতুন নামে পরিচিত হবেন। তাঁর নাম হবে পি মোহনগান্ধী।
কেন নাম বদলে ফেলতে হল তাঁকে? সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে মোহনগান্ধী বললেন, কারণটি ব্যক্তিগত। সে বিষয়ে আলোচনা করতে চান না তিনি।
তাঁর কাছে উত্তর না মিললেও শোনা গেল, ২০০৪ সালের ব্যাচের পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের এই অফিসারের সহকর্মী ও বন্ধুরা তাঁর নাম নিয়ে নিয়মিত ঠাট্টা তামাসা করতেন। দীর্ঘ দিন ধরে তাঁর আপত্তি সত্ত্বেও একই ঘটনা চলতে থাকায় শেষমেশ নিজের নামটাই বদলে ফেললেন তিনি।
বিজ্ঞাপন-গুরু রংগন চক্রবর্তী বললেন, “নাম দিয়েই তো মানুষের প্রথম পরিচয় তৈরি হয়। মুশকিল হল, যখন মা-বাবা বা অন্য কোনও গুরুজন এই নামটা রেখেছিলেন, তখন তাঁরা শুধু মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে এক নাম হওয়ার ইতিবাচক দিকটাই দেখেছিলেন। ভাবেননি, ছেলের ওপর কী বিপুল বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা।”
এমন বোঝার উদাহরণ অবশ্য এ বছরই আরও মিলেছে। তামিলনাড়ু ক্যাডারের আইএএস অফিসার এ প্রভাকরণ নিজের নামটি সামান্য ছেঁটে করলেন এস প্রভাকর। কেন? প্রভাকরণ যে শ্রীলঙ্কার কুখ্যাত তামিল টাইগারদের নেতা! তাঁর মা-বাবাকে অবশ্য দোষ দেওয়ার উপায় নেই। তাঁরা যখন নামটি স্থির করেছিলেন, তখনও প্রভাকরণের গোটা দুনিয়ায় পরিচিত হতে ঢের দেরি।
সমাজতত্ত্বের গবেষক অমৃতা গুপ্ত বললেন, “এখন নাম পাল্টানোটাই ফ্যাশান। কেউ জ্যোতিষীর পরামর্শে নাম পাল্টাচ্ছেন তো কেউ সংখ্যাতত্ত্ববিদের কথা শুনে। এখন নাকি নামের সঙ্গেই বাঁধা মানুষের সৌভাগ্য। বলিউডের তারকারা পথ দেখিয়েছেন, সবাই এখন সেই পথেই হাঁটছেন।”
মোহনগান্ধীর কথাটা অবশ্য আালাদা, স্বীকার করলেন অমৃতাও। বললেন, “বেচারা ভদ্রলোকের নিশ্চয়ই সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গিয়েছিল।”
কলেজছাত্রী ঈপ্সিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, বিদঘুটে নাম বদলে ফেলাই ভাল। “ধরুন, কোনও এক কলেজপড়ুয়া ছেলের নাম হল মধুসূদন অথবা ত্রৈলোক্যনাথ। ভাবুন তো, কোনও মেয়ে তার সঙ্গে প্রেম করবে?” পাশ থেকেই টিপ্পনি কাটলেন ঈপ্সিতার বন্ধু যশোবন্তী। বললেন, “কোনও মেয়ের নাম ভবতারিণী হলেও অবশ্য ছেলেদের কিছু যায় আসে না। তারা প্রেমে পড়বেই!”
এই মধুসূদন অথবা ত্রৈলোক্যনাথরা আইএএস অফিসার হওয়ার পর নাম বদলাতে চাইলে কী কর্তব্য? পি মোহনদাস করমচন্দ গান্ধীকে যা করতে হল, ঠিক সেটাই। প্রথমে আদালতে গিয়ে হলফনামা দিয়ে নিজের নাম পরিবর্তন করতে হবে। তার পর কোনও বহুলপ্রচারিত সর্বভারতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সেই পরিবর্তনের কথা জানাতে হবে। গেজেট অব ইন্ডিয়াতেও প্রকাশ করতে হবে এই পরিবর্তনের কথা। এবং, পুরো প্রক্রিয়ায় যা খরচ হবে, তা বহন করতে হবে তাঁকেই।
তবে প্রশ্ন হল, নাম পাল্টানোর পরও কি রসিকতার হাত থেকে রেহাই পাবেন পি মোহনগান্ধী? নাকি তখন লোকে এই বলে হাসবে যে পাল্টানোর আগে আপনার নামটা কী ছিল যেন???
পরের ঘাড়ে বন্দুক রেখে রসিকতা করার মতো লোকের অভাব নেই কি না!