'ইন্ডিয়াস ডটার' নিষিদ্ধ, ধর্ষণের তথ্যচিত্রটি নিয়ে ভারতজুড়ে বিতর্ক


2015.03.06
Ind-rape সরকার বলছে, মেয়েদের সুরক্ষার স্বার্থে এই ছবি নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু নারীবাদিরা এটা মানতে নারাজ। তারা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞা মত প্রকাশের অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ।
এএফপি

সরকার বলছে, মেয়েদের সুরক্ষার স্বার্থে এই ছবি নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু নারীবাদিরা এটা মানতে নারাজ। তারা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞা মত প্রকাশের অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ।

ভারতে নিষিদ্ধ হওয়ার পরও বিবিসি প্রচার করলো দিল্লিতে গণধর্ষণের শিকার মেডিকেল শিক্ষার্থীকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র 'ইন্ডিয়াস ডটার'। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে প্রচারের কথা থাকলেও জনগণের ‘অতিরিক্ত আগ্রহের’ কারণে আগেই তথ্যচিত্রটি প্রচার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

ব্রিটিশ পরিচালক লেজলি অডউইন নির্মিত এই তথ্যচিত্রটি নিয়ে ভারতজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের পার্লামেন্টেও তথ্যচিত্রটি নিয়ে তুমুল তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। ভারতে এটির প্রচার নিষিদ্ধ করা হয় এবং দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বুধবার সকালে বলেছিলেন, অন্য দেশেও সিনেমাটির প্রচার ঠেকানোর চেষ্টা করা হবে। কিন্তু বুধবার রাতেই যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশে বিবিসিতে তথ্যচিত্রটি প্রচারিত হয়। সরকার ইউটিউবে ছবিটির প্রচার বন্ধ করারও উদ্যোগ নিয়েছে, জানায় এপি ও রয়টার।

দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিবিসি তথ্যচিত্রটি প্রচারের ফলে ভারতে মেয়েদের মধ্যে আতংক ও ভয় ছড়িয়ে পড়েছে, আর তাই এটি নিষিদ্ধ করা দরকার ছিলো ন্যায়বিচার ও জননিরাপত্তার স্বার্থে।
ভারতের খ্যাতনামা নারী নেত্রীগন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, সরকার নারীর নিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য আদৌ কিছু করছে কিনা তা নিয়ে তারা চিন্তিত।

তথ্যচিত্রে ধর্ষকদের মধ্যে একজন, মুকেশ সিং-এর সাক্ষাৎকার দেখানো হয়েছে। সাক্ষাৎকারে মুকেশ ধর্ষণের জন্য নারীদেরও দায়ী করেন। বেশিরভাগ নারীই শালীন পোশাক না পরায় পুরুষরা উত্তেজিত হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া,  রাতে নারীদের একা চলাফেরা, বিশেষত সিনেমাহল থেকে ফেরা বা প্রেমিকের সঙ্গে চলাফেরাকেও দুষেন ওই ধর্ষক। তিনি আরও বলেন, ধর্ষিতা যদি ধর্ষণ ঠেকানোর চেষ্টা না করতেন তাহলে তার মৃত্যু হতো না।
এই সাক্ষাৎকারের কারণেই মূলত তথ্যচিত্রটি প্রচারের ব্যপারে সরকারি মহল থেকে আপত্তি ওঠে।

এদিকে বিবিসি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, 'নির্ভয়া'র (ধর্ষিতার ছদ্মনাম) পরিবারের পূর্ণ সমর্থনেই তথ্যচিত্রটি নির্মিত হয়েছে।
"ধর্ষণের মত ঘৃণ্য এই অপরাধ কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ভারতজুড়ে প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে, তা দেখানোই আমাদের উদ্দেশ্য। এরকম সংবেদনশীল একটি চলচ্চিত্রের সম্পাদনার বিষয়েও আমরা বিশেষভাবে খেয়াল রেখেছি।"
এই তথ্যচিত্রটি সবার দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মেয়েটির বাবা।

অন্যদিকে বিনা অনুমতিতে আসামীর সাক্ষাৎকার নেওয়া এবং তা প্রচারের অভিযোগ তুলে দিল্লিতে মামলা করা হয়েছে, শুরু হয়েছে তদন্ত। বিবিসিসহ আরও কয়েকটি চ্যানেলকে নোটিশ পাঠিয়েছে দিল্লি পুলিশ।
২০১২ সালের ডিসেম্বরে নয়াদিল্লীতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর ২৩ বছর বয়সী 'নির্ভয়া'কে বিবস্ত্র অবস্থায় রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়।মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ১৩ দিন পর মেয়েটি মারা যায়।
মোট ছয় ধর্ষকের মধ্যে চার জনের ফাঁসির আদেশ হয়েছে, একজন কারাগারেই আত্মহত্যা করেছে আর অপরজন ঘটনার সময় ছিল নাবালক।

নারী নির্যাতনের কঠোর আইন প্রনয়ন সত্তেও সারা ভারতজুড়ে ধর্ষণ কমেনি। সম্প্রতি ভারতের ১১টি শহরের ১০,৫০০ ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে এক জরিপে দেখা যায় প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৪ জন বিশ্বাস করে তাদেরকে একটা পর্যায়ে নির্যাতন মেনে নিতে বাধ্য হতে হয়। খবর রয়টারের।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।